যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য
আমার কি আরও অনেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা উচিত?
“নিজের বন্ধুদের গ্রুপে থাকতে আমার খুব ভালো লাগে, এর বাইরে গিয়ে কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব করা আমার জন্য খুব কঠিন।”—অ্যালান।
“আমার হাতে গোনা কয়েকটা বন্ধু আছে আর তাতেই আমি খুশি। এর থেকে বেরিয়ে, যাদের আমি চিনি না তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা আমার দ্বারা হবে না।”—সারা।
তোমারও কি অ্যালান ও সারার মত মনে হয় যে, শুধুমাত্র কয়েক জন ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব থাকাই যথেষ্ট? আর, তার বাইরে গিয়ে নতুন বন্ধু খুঁজতে, তোমার কি ভালো লাগে না?
যদি তাই হয় এই প্রবন্ধটা তোমার জন্য লেখা হয়েছে!
শুধুমাত্র কয়েক জন ঘনিষ্ঠ বন্ধু থাকলে যে সমস্যা হয়
কয়েক জন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর একটা গ্রুপ থাকা ভুল কিছু নয়। এইরকম একটা গ্রুপে থাকতে তোমার ভালো লাগে কারণ সবাই তোমাকে নিজের বলে মনে করে আর তোমার ভুল ত্রুটি জানার পরও তারা তা মেনে নেয়।
“যখন তুমি দেখো যে,গ্রুপের মধ্যে সবাই তোমাকে পছন্দ করছে তখন তোমার বেশ ভালো লাগে আর মনে হয় তুমিও তাদের নিজের কেউ। যেহেতু তোমার বয়স কম তাই তুমিও তাদের সঙ্গে মিলেমিশে এক সঙ্গে থাকতে চাও।”—১৯ বছরের ক্যারেন।
তুমি কি জানো? যিশুর ১২ জন শিষ্য ছাড়াও তার আরও অনেক বন্ধু ছিল। কিন্তু এই ১২ জনের মধ্যেও তিন জন তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল, যারা হলেন পিতর, যাকোব ও যোহন।—মার্ক ৯:২; লূক ৮:৫১.
তুমি যদি শুধু কয়েক জন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গেই মেলামেশা কর আর অন্যদের কাছেই ঘেঁষতে না দাও, তা হলে সেটা তোমার জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। যেমন:
এটা অন্য অনেক ভালো ব্যক্তিদের সঙ্গেও বন্ধুত্ব করার দরজা বন্ধ করে দেয়।
“তুমি যদি একই বন্ধুদের নিয়ে থাকো, তা হলে দারুণ সব নতুন বন্ধু আর চমৎকার সব বিষয় থেকে বঞ্চিত হবে।”—২১ বছরের ইভান।
এতে সবাই তোমাকে এক নাক-উঁচু লোক বলে মনে করবে।
“তুমি যখন তোমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের গ্রুপে থাক, তখন তোমাকে দেখে অন্যদের মনে হতে পারে, তুমি সেই গ্রুপ ছাড়া আর কারো সঙ্গে কথা বলতে চাও না।”—১৭ বছরের সারা।
এতে তুমি হয়তো অন্যদের উত্ত্যক্ত করা শুরু করতে পার।
“একা একা সাধারণত কেউ কাউকে উত্ত্যক্ত করে না। কিন্তু তোমার গ্রুপের বন্ধুরা যদি তা করে, তা হলে তুমিও তাতে যোগ দিতে চাইবে আর বেশ মজাও পাবে।”—১৭ বছরের জেমস্।
এতে তুমি সমস্যায় পড়তে পার যখন, যাই ঘটুক-না কেন, এই গ্রুপের সঙ্গ তুমি ছাড়তে না চাও।
“ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের গ্রুপের কেউ এক জন যদি কোনো অন্যায় কাজ করে ফেলে, তা হলে পুরো গ্রুপটাই সেই কাজে জড়িয়ে পরতে পারে।”—১৭ বছরের মার্টিনা।
তুমি যা করতে পার
নিজের নৈতিক মানগুলো যাচাই করে দেখো।
নিজেকে জিজ্ঞেস করো: ‘আমার জীবনে আমি কোন নীতিগুলো মেনে চলি? এই বন্ধুদের গ্রুপে থাকলে, সেগুলো মেনে চলা কি আমার জন্য সহজ হবে, না কি আরও কঠিন হয়ে উঠবে? যা-ই ঘটুক না কেন আমি কি এই গ্রুপ ছেড়ে যেতে চাই না?’
বাইবেলের নীতি: “খারাপ লোকদের সঙ্গে মেলামেশা করা উত্তম নৈতিক মানগুলোকে কলুষিত করে দেয়।”—১ করিন্থীয় ১৫:৩৩, ফুটনোট.
“তুমি যদি এমন গ্রুপে থাক, যারা তোমার নৈতিক মানগুলোকে কোনো গুরুত্বই দেয় না, তা হলে তুমি এমন কিছু করে ফেলতে পারো, যেটা হয়তো এই গ্রুপের সঙ্গে না থাকলে তুমি করতে না।”—১৪ বছরের এলেন।
নিজের নীতিনিষ্ঠা না কি বন্ধুদের গ্রুপ—কোনটা তুমি আগে রাখবে, তা যাচাই করে দেখো।
নিজেকে জিজ্ঞেস করো: ‘আমার গ্রুপের বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য, আমি কি আমার নীতিনিষ্ঠার সঙ্গে আপোশ করব? আমার কোনো বন্ধু যদি অন্যায় কিছু করে, তখন আমি কী করব?’
বাইবেলের নীতি: “আমি যাদের ভালোবাসি, তাদের সকলকে আমি তিরস্কার [দোষ দেখিয়ে দেওয়া] ও শাসন করি।”—প্রকাশিত বাক্য ৩:১৯.
“তোমার গ্রুপে কেউ যদি কোনো অন্যায় কাজ করে ফেলে, তা হলে তোমার মনে হবে এই বিষয়ে কাউকে কিছু বলা যাবে না, আর মুখ খুললেই তুমি সবার কাছে বিশ্বাসঘাতক হয়ে উঠবে।”—২২ বছরের মেলানে।
অন্যদের সঙ্গেও বন্ধুত্ব করতে শুরু করো।
নিজেকে জিজ্ঞেস করো: ‘আমি কি তাদের সঙ্গেও বন্ধুত্ব বাড়াতে চাই, যাদের আমি ভালো করে জানি না আর তা করলে আমি কোন উপকার পাব?’
বাইবেলের নীতি: “কেবল নিজেদের বিষয়ে চিন্তা কোরো না, কিন্তু অন্যের প্রতিও চিন্তা দেখাও।”—ফিলিপীয় ২:৪.
“কিছু ছেলে-মেয়ের ঘরোয়া পরিস্থিতি ভালো না থাকার কারণে তাদেরকে খুব সাধারণ হিসেবে দেখা হয় আর অন্যেরা তাদের সঙ্গে খুব-একটা মিশতে চায় না। তাদের সঙ্গে তুমি একবার মেলামেশা করলে বুঝতে পারবে, তারা সবাই দুর্দান্ত আর প্রত্যেকের দারুণ সব প্রতিভা আছে।”—১৯ বছরের ব্রায়ান।
মূল বিষয়টা হল: ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একটা গ্রুপ থাকা দোষের কিছু নয়। তবে, এর বাইরেও তুমি বন্ধু বাড়াতে পারো আর এতে তোমার উপকারই হবে। বাইবেল বলে: “যে অন্যকে সতেজ করে, সে নিজেও সতেজ হবে।”—হিতোপদেশ ১১:২৫.