সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“তোমরা অতিথিসেবা ভুলিয়া যাইও না”

“তোমরা অতিথিসেবা ভুলিয়া যাইও না”

“তোমরা অতিথিসেবা ভুলিয়া যাইও না।”—ইব্রীয় ১৩:২.

গান সংখ্যা: ৩, ৫০

১, ২. (ক) বর্তমানে অনেক বিদেশি ব্যক্তি কোন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়ে থাকে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) (খ) প্রেরিত পৌল কোন পরামর্শ স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন আর আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?

 ওসেই ৩০ বছরেরও বেশি সময় আগে তার নিজের দেশ ঘানা ছেড়ে ইউরোপে বসবাস করতে গিয়েছিলেন। [১] সেই সময়ে তিনি যিহোবার সাক্ষি ছিলেন না। তিনি বলেন: “শীঘ্রই আমি বুঝতে পেরেছিলাম, অধিকাংশ লোকই আমার ব্যাপারে মাথা ঘামায় না। এখানকার আবহাওয়াও একেবারে আলাদা। বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে আমি যখন জীবনে প্রথম বারের মতো ঠাণ্ডা অনুভব করি, তখন আমি কাঁদতে শুরু করি।” যেহেতু ওসেইয়ের জন্য ভাষা শেখা কঠিন ছিল, তাই একটা ভালো চাকরি খুঁজে পেতে তার এক বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল। আর ঘর থেকে অনেক দূরে থাকার কারণে পরিবারের জন্য তার মন খারাপ হতো ও তিনি একাকিত্ব অনুভব করতেন।

একইরকম পরিস্থিতিতে থাকলে আপনি অন্যদের কাছ থেকে কেমন আচরণ আশা করতেন, সেই বিষয়ে একটু চিন্তা করুন। আপনাকে ভালোবাসে এমন ব্যক্তিরা যদি আপনার জাতীয়তা অথবা বর্ণ সম্বন্ধে চিন্তা না করে আপনাকে কিংডম হলে সাদর অভ্যর্থনা জানাত, তা হলে নিশ্চিতভাবেই আপনি কৃতজ্ঞ হতেন। আসলে, বাইবেল সত্য খ্রিস্টানদের বলে: “অতিথিসেবা ভুলিয়া যাইও না।” (ইব্রীয় ১৩:২) “অতিথিসেবা” হিসেবে অনুবাদিত শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল, “অপরিচিত ব্যক্তিদের প্রতি দয়া দেখানো।” এই প্রবন্ধে অপরিচিত ব্যক্তি বলতে বিদেশিদের অথবা বর্তমানে আমাদের দেশে বসবাস করছে এমন অভিবাসীদের বোঝানো হয়েছে। তাই আসুন আমরা এই প্রশ্নগুলো বিবেচনা করি: অপরিচিত ব্যক্তিদের সম্বন্ধে যিহোবা কেমন অনুভব করেন? অপরিচিত ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কি রদবদল করতে হবে? আর আমাদের মণ্ডলীতে অন্য দেশ থেকে আসা কোনো ব্যক্তিকে আমরা কীভাবে সাহায্য করতে পারি, যাতে তিনি এমন অনুভব করেন, তাকে সাদরে গ্রহণ করা হয়েছে?

যিহোবা অপরিচিত ব্যক্তিদের যেভাবে দেখেন

৩, ৪. যাত্রাপুস্তক ২৩:৯ পদ অনুসারে, বিদেশিদের প্রতি কেমন আচরণ করা হোক বলে ঈশ্বর চেয়েছিলেন এবং কেন?

যিহোবা তাঁর লোকেদের মিশরের দাসত্ব থেকে মুক্ত করার পর বিভিন্ন আইন দিয়েছিলেন আর এই আইনগুলোতে শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল, যেন তারা তাদের সঙ্গে চলে আসা বিদেশিদের প্রতি দয়া দেখায়। (যাত্রা. ১২:৩৮, ৪৯; ২২:২১) বিদেশিদের জীবন যেহেতু সবসময় সহজ নয়, তাই যিহোবা প্রেমের সঙ্গে তাদের যত্ন নিয়েছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তারা জমিতে শস্যচ্ছেদনকারীদের ফেলে যাওয়া শস্য কুড়াতে পারত।—লেবীয়. ১৯:৯, ১০.

যিহোবা ইস্রায়েলীয়দেরকে বিদেশিদের প্রতি শুধু সম্মান দেখাতেই বলেননি কিন্তু সেইসঙ্গে একজন বিদেশি হিসেবে থাকার অনুভূতি কেমন, তিনি তাদের সেই বিষয়টাও মনে রাখতে বলেছিলেন। (পড়ুন, যাত্রাপুস্তক ২৩:৯.) এমনকী ইস্রায়েলীয়রা মিশরে দাস হওয়ার আগে থেকেই মিশরীয়রা তাদের পছন্দ করত না কারণ তারা মিশরীয়দের চেয়ে আলাদা ছিল। (আদি. ৪৩:৩২; ৪৬:৩৪; যাত্রা. ১:১১-১৪) বিদেশি হিসেবে সেখানে ইস্রায়েলীয়দের জীবন খুব কঠিন ছিল। যিহোবা চেয়েছিলেন যেন তারা এটা মনে রাখে এবং তাদের সঙ্গে থাকা বিদেশিদের প্রতি সদয় হয়।—লেবীয়. ১৯:৩৩, ৩৪.

৫. কী আমাদেরকে বিদেশিদের প্রতি যিহোবার মতো দয়া দেখাতে সাহায্য করবে?

যিহোবা পরিবর্তন হননি। তাই, আমাদের মণ্ডলীতে যদি বিদেশিরা আসে, তা হলে আমাদের এটা ভুলে যাওয়া উচিত নয়, যিহোবা এখনও এই ধরনের ব্যক্তিদের প্রতি দয়া দেখান। (দ্বিতীয়. ১০:১৭-১৯; মালাখি ৩:৫, ৬) বিদেশিরা কোন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে পারে, সেই বিষয়ে একটু থেমে চিন্তা করুন। যেমন, তারা হয়তো নতুন ভাষা বুঝতে পারে না আর তাদের সঙ্গে হয়তো অনুপযুক্ত আচরণ করা হতে পারে। আসুন, আমরা তাদের সাহায্য করার জন্য ও তাদের প্রতি সদয় হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করি।—১ পিতর ৩:৮.

অপরিচিত ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কি রদবদল করতে হবে?

৬, ৭. কোন বিষয়টা দেখায় যে, প্রাথমিক যিহুদি খ্রিস্টানরা তাদের মনের মধ্যে গেঁথে থাকা ভেদাভেদের মনোভাব কাটিয়ে উঠতে শিখেছিল?

প্রাথমিক খ্রিস্টানদের তাদের মনের মধ্যে গেঁথে থাকা ভেদাভেদের মনোভাব কাটিয়ে উঠতে হয়েছিল, যে-মনোভাব যিহুদিদের মধ্যে সাধারণ ছিল। ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিনে, যিরূশালেমে বসবাসকারী যিহুদি খ্রিস্টানরা বিভিন্ন দেশ থেকে আসা নতুন ব্যক্তিদের প্রতি আতিথেয়তা ও প্রেমপূর্ণ চিন্তা দেখিয়েছিল। (প্রেরিত ২:৫, ৪৪-৪৭) এটা প্রকাশ করে, যিহুদি খ্রিস্টানরা “অতিথিসেবা” শব্দের অর্থ বুঝতে পেরেছিল আর তা হল “অপরিচিত ব্যক্তিদের প্রতি দয়া দেখানো।”

তা সত্ত্বেও, সেই সময়ে একটা ঘটনা ঘটেছিল। গ্রিকভাষী যিহুদিরা অভিযোগ করেছিল, তাদের বিধবাদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করা হচ্ছে না। (প্রেরিত ৬:১) সমস্যাটা সমাধান করার জন্য প্রেরিতরা সাত জন পুরুষকে বাছাই করেছিলেন এবং সকলের সঙ্গে যেন ন্যায্য আচরণ করা হয়, সেই বিষয়টা খেয়াল রাখার জন্য তাদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। প্রেরিতরা এমন পুরুষদের বাছাই করেছিলেন, যাদের গ্রিক নাম ছিল আর এর কারণ সম্ভবত সেই গ্রিকভাষী বিধবারা যেন স্বচ্ছন্দবোধ করে।—প্রেরিত ৬:২-৬.

৮, ৯. (ক) আমাদের মধ্যে ভেদাভেদের মনোভাব আছে কি না, তা খুঁজে বের করার জন্য কোন প্রশ্নগুলো আমাদের সাহায্য করবে? (খ) কোন বিষয়টা আমাদের অবশ্যই দূর করতে হবে? (১ পিতর ১:২২)

আমরা বুঝতে পারি বা না-ই পারি, আমরা সবাই আমাদের সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হই। (রোমীয় ১২:২) এ ছাড়া, আমরা হয়তো আমাদের প্রতিবেশী, সহকর্মী অথবা সহছাত্র-ছাত্রীদেরকে অন্য পটভূমি, জাতি অথবা বর্ণের লোকেদের সম্বন্ধে খারাপ বিষয় বলতে শুনি। এই ধরনের নেতিবাচক ধারণাগুলোর দ্বারা আমরা কতটা গভীরভাবে প্রভাবিত হই? আর অন্যেরা যখন আমাদের জাতীয়তা অথবা সংস্কৃতির কোনো একটা দিক নিয়ে মজা করে, তখন আমরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাই?

প্রেরিত পিতর একটা সময়ে ন-যিহুদি লোকেদের প্রতি ভেদাভেদের মনোভাব পোষণ করেছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি সেই নেতিবাচক অনুভূতি দূর করতে শিখেছিলেন। (প্রেরিত ১০:২৮, ৩৪, ৩৫; গালা. ২:১১-১৪) একইভাবে, আমরাও যদি আমাদের মধ্যে ভেদাভেদের মনোভাব অথবা জাতিগত গর্বের সামান্য পরিমাণ চিহ্নও খুঁজে পাই, তা হলে সেটা পুরোপুরি দূর করার জন্য আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করা উচিত। (পড়ুন, ১ পিতর ১:২২.) তা করার ক্ষেত্রে কোন বিষয়টা আমাদের সাহায্য করতে পারে? মনে রাখবেন, আমরা যে-দেশেরই হই না কেন, আমরা সবাই অসিদ্ধ আর আমাদের মধ্যে কেউই পরিত্রাণ লাভ করার যোগ্য নই। (রোমীয় ৩:৯, ১০, ২১-২৪) তাই আমাদের এমন চিন্তা করার কোনো কারণই নেই যে, আমরা অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ! (১ করি. ৪:৭) আমাদের প্রেরিত পৌলের মতো চিন্তা করা উচিত। তিনি সহখ্রিস্টানদের বলেছিলেন, তারা ‘আর অসম্পর্কীয় ও প্রবাসী নহে [‘অচেনাও নয়, বিদেশীও নয়,’ বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন], কিন্তু ঈশ্বরের বাটীর লোক।’ (ইফি. ২:১৯) আমাদের সবাইকে যেকোনো ধরনের ভেদাভেদের মনোভাব দূর করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে, যাতে আমরা নতুন মনুষ্য বা ব্যক্তিত্ব পরিধান করতে পারি।—কল. ৩:১০, ১১.

অপরিচিত ব্যক্তিদের প্রতি যেভাবে দয়া দেখানো যায়

১০, ১১. কীভাবে বোয়স অপরিচিত ব্যক্তিদের প্রতি যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি অনুকরণ করেছিলেন?

১০ বিশ্বস্ত ব্যক্তি বোয়স অপরিচিত ব্যক্তিদের প্রতি যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি অনুকরণ করেছিলেন। কীভাবে? বোয়স যখন তার শস্যক্ষেত্র দেখতে গিয়েছিলেন, তখন সেখানে তিনি রূৎকে লক্ষ করেন। এই বিদেশি যুবতী মোয়াব দেশ থেকে এসেছিলেন। রূৎ সেখানে শস্য কুড়ানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করছিলেন। মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী, রূতের শস্য কুড়ানোর অধিকার ছিল। কিন্তু বোয়স শুনতে পেয়েছিলেন, রূৎ তার শস্যক্ষেত্র থেকে শস্য কুড়ানোর জন্য অনুমতি চেয়েছেন। তা শুনে বোয়স অভিভূত হয়েছিলেন ও তাকে শস্যের আঁটির মধ্য থেকেও কুড়ানোর অনুমতি দিয়েছিলেন।—পড়ুন, রূতের বিবরণ ২:৫-৭, ১৫, ১৬.

১১ এর পরের ঘটনাগুলো স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে, বোয়স রূতের জন্য ও একজন বিদেশি হিসেবে তার কঠিন পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। তিনি রূৎকে তার যুবতী দাসীদের সঙ্গে থাকতে বলেছিলেন, যাতে শস্যক্ষেত্রে কর্মরত অন্য যুবকরা তার সঙ্গে অশোভন আচরণ না করে। তিনি এমনকী এটাও খেয়াল রেখেছিলেন, যেন রূৎ অন্য কর্মীদের মতোই যথেষ্ট খাবার ও জল পান। এই অভাবী বিদেশি যুবতীর প্রতি বোয়স সম্মান দেখিয়েছিলেন ও তাকে উৎসাহজনক কথাবার্তা বলেছিলেন।—রূৎ. ২:৮-১০, ১৩, ১৪.

১২. অপরিচিত ব্যক্তিদের প্রতি দয়া দেখানো হলে, সেটা তাদের উপর কেমন প্রভাব ফেলতে পারে?

১২ বোয়স শুধু এই কারণে রূতের প্রতি দয়া দেখাননি যে, রূৎ নিজের শাশুড়ি নয়মীর প্রতি অনুগত প্রেম দেখিয়েছিলেন। কিন্তু এর পিছনে আরেকটা কারণ ছিল, রূৎ যিহোবাকে সেবা করতে শুরু করেছিলেন ও তাঁর কাছে সুরক্ষা খুঁজেছিলেন। বোয়স যখন রূতের প্রতি দয়া দেখিয়েছিলেন, তখন তিনি আসলে যিহোবার অনুগত প্রেম অনুকরণ করেছিলেন। (রূৎ. ২:১২, ২০; হিতো. ১৯:১৭) একইভাবে, বর্তমানে আমরা যখন সদয় হই, তখন আমরা হয়তো ‘সমুদয় মনুষ্যকে’ সত্য শিখতে সাহায্য করতে পারি ও যিহোবা তাদের কতটা ভালোবাসেন, সেটাও উপলব্ধি করতে পারি।—১ তীম. ২:৩, ৪.

কিংডম হলে যখন অপরিচিত ব্যক্তিরা আসে, তখন আমরা কি তাদের সাদর অভ্যর্থনা জানাই? (১৩, ১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৩, ১৪. (ক) কেন আমাদের কিংডম হলে অপরিচিত ব্যক্তিদের অভ্যর্থনা জানানো উচিত? (খ) আপনি যাতে অন্য সংস্কৃতি থেকে আসা কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন, সেইজন্য কোন বিষয়টা আপনাকে সাহায্য করতে পারে?

১৩ আমরা কিংডম হলে সাদর অভ্যর্থনা জানানোর মাধ্যমে অপরিচিত ব্যক্তিদের প্রতি দয়া দেখাতে পারি। সবেমাত্র কোনো দেশে অভিবাসী হয়েছে এমন ব্যক্তিরা মাঝে মাঝে লাজুক স্বভাবের হতে পারে ও নিজেদের লোকেদের মধ্যে থাকতে পছন্দ করতে পারে। তাদের সংস্কৃতি অথবা সামাজিক অবস্থানের কারণে তারা হয়তো অন্য জাতির লোকেদের চেয়ে নিজেদের নিকৃষ্ট বলে মনে করতে পারে। তাই, প্রথমে আমাদের এগিয়ে গিয়ে অভ্যর্থনা জানানো উচিত ও তাদের প্রতি আন্তরিক আগ্রহ দেখানো উচিত। যদি আপনার ভাষায় JW ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাপ পাওয়া যায়, তা হলে এই অ্যাপের সাহায্যে আপনি হয়তো তাদের ভাষায় কীভাবে অভ্যর্থনা জানাতে হয়, তা শিখতে পারেন।—পড়ুন, ফিলিপীয় ২:৩, ৪.

১৪ আপনি হয়তো অন্য সংস্কৃতি থেকে আসা কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে স্বচ্ছন্দবোধ না-ও করতে পারেন। এই অনুভূতি কাটিয়ে ওঠার জন্য, আপনি হয়তো সেই ব্যক্তিকে নিজের বিষয়ে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করতে পারেন। তখন আপনি হয়তো দেখতে পাবেন, আপনি যতটা চিন্তা করেছিলেন, তার চেয়েও আরও অনেক বিষয়ে তার সঙ্গে আপনার মিল রয়েছে। মনে রাখবেন, প্রতিটা সংস্কৃতির নিজস্ব কিছু ভালো দিক ও দুর্বল দিক রয়েছে।

সকলে যেন অনুভব করে, তাদের সাদরে গ্রহণ করা হয়েছে

১৫. যারা একটা নতুন দেশে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে, তাদের পরিস্থিতি বোঝার জন্য কী আমাদের সাহায্য করবে?

১৫ মণ্ডলীতে অন্যেরা যেন এমন অনুভব করে তাদের সাদরে গ্রহণ করা হয়েছে, সেইজন্য আপনি কী করতে পারেন? নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমি যদি বিদেশে থাকতাম, তা হলে আমি অন্যদের কাছ থেকে কেমন আচরণ আশা করতাম?’ (মথি ৭:১২) যারা একটা নতুন দেশে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে, তাদের প্রতি ধৈর্য দেখান। প্রথম প্রথম আপনি হয়তো তারা যেভাবে চিন্তা করে অথবা প্রতিক্রিয়া দেখায়, তা পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারবেন না। কিন্তু, তারা আমাদের সংস্কৃতির লোকেদের মতো চিন্তা ও আচরণ করবে এমনটা আশা করার পরিবর্তে, তাদেরকে তাদের মতো করেই গ্রহণ করুন না কেন?—পড়ুন, রোমীয় ১৫:৭.

১৬, ১৭. (ক) অন্য সংস্কৃতি থেকে আসা ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য আমরা কী করতে পারি? (খ) আমাদের মণ্ডলীর অভিবাসীদের আমরা কোন ব্যাবহারিক উপায়ে সাহায্য করতে পারি?

১৬ আমরা যদি বিদেশিদের দেশ ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে জানার জন্য সময় করে নিই, তা হলে তাদের সম্বন্ধে জানা হয়তো আমাদের জন্য আরও সহজ হবে। আমাদের পারিবারিক উপাসনার সময় আমরা হয়তো আমাদের মণ্ডলীতে অথবা এলাকাতে আসা অভিবাসীদের সংস্কৃতি সম্বন্ধে কিছুটা গবেষণা করতে পারি। অভিবাসীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার আরেকটা উপায় হল, আমাদের ঘরে তাদেরকে খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানানো। যিহোবা ‘পরজাতীয়দের নিমিত্তে বিশ্বাসদ্বার খুলিয়া দিয়াছেন,’ তাই আমাদেরও তাঁকে অনুকরণ করা উচিত এবং আমাদের ঘরের দ্বার সেই অপরিচিত ব্যক্তিদের জন্য খুলে দেওয়া উচিত, যারা “বিশ্বাস-বাটীর পরিজন।”—প্রেরিত ১৪:২৭; গালা. ৬:১০; ইয়োব ৩১:৩২.

অন্য দেশ থেকে আসা নতুন ব্যক্তিদের কি আমরা সদয়ভাবে আতিথেয়তা দেখাই? (১৬, ১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৭ আমরা যখন কোনো অভিবাসী পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাই, তখন এটা আমাদের উপলব্ধি করতে সাহায্য করে, আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য তারা কতটা প্রচেষ্টা করছে। আমরা হয়তো বুঝতে পারি, ভাষা শেখার জন্য তাদের সাহায্য প্রয়োজন। এ ছাড়া, আমরা হয়তো তাদের থাকার জন্য কোনো ভালো জায়গা অথবা একটা চাকরি খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারি। আমাদের ভাই ও বোনেরা হয়তো এই ধরনের ব্যাবহারিক সাহায্য লাভ করে খুশি হবে।—হিতো. ৩:২৭.

১৮. বর্তমানে অভিবাসীরা সম্মান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কোন উদাহরণ অনুকরণ করতে পারে?

১৮ অবশ্য, নতুন দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য অভিবাসীরাও তাদের যথাসাধ্য করতে চাইবে। এই ক্ষেত্রে রূৎ এক উত্তম উদাহরণস্থাপন করেছিলেন। প্রথমত, তিনি শস্য কুড়ানোর জন্য অনুমতি চেয়ে নতুন দেশের প্রথার প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন। (রূৎ. ২:৭) তিনি এই অধিকারকে তার প্রাপ্য বলে দেখেননি বা এমনটা মনে করেননি, অন্যেরা তাকে কোনো কিছু দিতে বাধ্য। দ্বিতীয়ত, অন্যেরা তার প্রতি যে-দয়া দেখিয়েছিল, সেটার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে তিনি দেরি করেননি। (রূৎ. ২:১৩) অভিবাসীরা যদি একইরকম চমৎকার মনোভাব দেখায়, তা হলে তাদের ভাই-বোনেরা ও স্থানীয় লোকেরা সম্ভবত তাদের প্রতি আরও সম্মান দেখাবে।

১৯. কেন আমরা চাই যে, অপরিচিত ব্যক্তিরা এমনটা মনে করুক, তাদের সাদরে গ্রহণ করা হয়েছে?

১৯ যিহোবা অনুগ্রহ দেখিয়েছেন বলে ও সমস্ত লোককে সুসমাচার শোনার সুযোগ দিয়েছেন বলে আমরা খুবই আনন্দিত। অভিবাসীদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো নিজের দেশে বাইবেল অধ্যয়ন করতে পারেনি অথবা যিহোবার লোকেদের সঙ্গে সভাতে যোগ দিতে পারেনি। কিন্তু এখন যেহেতু তারা আমাদের সঙ্গে মেলামেশা করার সুযোগ পেয়েছে, তাই আমাদেরও তাদের সাহায্য করা উচিত, যাতে তারা নিজেদের অপরিচিত বলে মনে না করে। আমাদের হয়তো অনেক টাকাপয়সা না-ও থাকতে পারে কিংবা আমরা হয়তো অনেক ব্যাবহারিক উপায়ে সাহায্য না-ও করতে পারি, কিন্তু আমরা যখন অপরিচিত ব্যক্তিদের প্রতি দয়া দেখাই, তখন আমরা তাদের প্রতি যিহোবার প্রেম অনুকরণ করি। তাই আসুন, “ঈশ্বরের অনুকারী” হিসেবে আমরা আমাদের মাঝে থাকা অপরিচিত ব্যক্তিদের সাদরে গ্রহণ করার জন্য যথাসাধ্য করি!—ইফি. ৫:১, ২.

^ [১] (১ অনুচ্ছেদ) নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।