সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা” সবসময় ন্যায়বিচার করেন

“সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা” সবসময় ন্যায়বিচার করেন

“তিনি শৈল, তাঁহার কর্ম্ম সিদ্ধ, কেননা তাঁহার সমস্ত পথ ন্যায্য।” —দ্বিতীয়. ৩২:৪.

গান সংখ্যা: ২, ১১

১. কীভাবে অব্রাহাম দেখিয়েছিলেন, যিহোবার ন্যায়বিচারের প্রতি তার আস্থা আছে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

“সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা কি ন্যায়বিচার করিবেন না?” (আদি. ১৮:২৫) বিশ্বস্ত ব্যক্তি অব্রাহাম যখন এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন, তখন তার মনে যে সন্দেহ ছিল, এমন নয়। এর পরিবর্তে, অব্রাহামের প্রশ্ন যিহোবার প্রতি তার এই আস্থাকে প্রকাশ করেছিল যে, যিহোবা সদোম ও ঘমোরা নগরের প্রতি নিখুঁত ন্যায়বিচার করবেন। তিনি পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলেন, যিহোবা কখনো “দুষ্টের সহিত ধার্ম্মিকের বিনাশ” করবেন না। পরবর্তী সময়ে যিহোবা নিজের সম্বন্ধে বলেছিলেন: “তিনি শৈল, তাঁহার কর্ম্ম সিদ্ধ, কেননা তাঁহার সমস্ত পথ ন্যায্য; তিনি বিশ্বাস্য ঈশ্বর, তাঁহাতে অন্যায় নাই; তিনিই ধর্ম্মময় ও সরল।”—দ্বিতীয়. ৩১:১৯; ৩২:৪.

২. কেন যিহোবার পক্ষে অন্যায় করা অসম্ভব?

কেন অব্রাহামের এই আস্থা ছিল যে, যিহোবা সবসময় ন্যায়বিচার করবেন? কারণ যিহোবা হলেন ন্যায়বিচার ও ধার্মিকতার সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ। আসলে, ইব্রীয় শাস্ত্রে “ন্যায়বিচার” ও “ধার্ম্মিকতা” শব্দ দুটো প্রায়ই একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে কারণ এগুলো একই অর্থ বহন করে। সুতরাং, যিহোবার মান যেহেতু সবসময় সঠিক, তাই তিনি সবসময় সঠিক উপায়ে বিচার করবেন। বাইবেল বলে: “তিনি ধার্ম্মিকতা ও ন্যায়বিচার ভালবাসেন।”—গীত. ৩৩:৫.

৩. বর্তমান জগতে ঘটে চলা অবিচারের একটা উদাহরণ দিন।

এটা জানা সান্ত্বনাদায়ক যে, যিহোবা সবসময় ন্যায়পরায়ণ। কিন্তু, বর্তমান জগৎ অবিচারে পরিপূর্ণ। উদাহরণ স্বরূপ, অনেক লোককে এমন অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং শাস্তি স্বরূপ জেলে পাঠানো হয়েছে, যে-অপরাধ তারা আসলে করেনি। পরবর্তী সময়ে যদিও ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে অবশেষে কেউ কেউ নির্দোষ বলে প্রমাণিত হয়েছে, তবে তা বহু বছর জেলে কাটানোর পর। এই ধরনের অবিচারের কারণে লোকেদের মধ্যে হতাশা এবং কখনো কখনো ক্রোধ চলে আসে। কিন্তু, আরেক ধরনের অবিচার রয়েছে, যেটা সহ্য করা হয়তো আরও বেশি কঠিন হতে পারে। সেটা কী?

মণ্ডলীর ভিতরে অবিচার

৪. কীভাবে একজন খ্রিস্টানের বিশ্বাস পরীক্ষিত হতে পারে?

খ্রিস্টানরা জানে, কখনো কখনো খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর বাইরে তাদের অবিচার ভোগ করতে হবে। কিন্তু, আমাদের বিশ্বাস সেইসময় পরীক্ষিত হতে পারে, যদি আমরা মণ্ডলীর ভিতরে এমন কিছু লক্ষ করি বা নিজেরা ভোগ করি, যেটাকে অন্যায় বলে মনে হয়। যদি তা-ই হয়, তা হলে আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন? আপনি কি সেটাকে আপনার বিঘ্নের কারণ হতে দেবেন?

৫. মণ্ডলীতে আমরা যদি কোনো অবিচার লক্ষ করি অথবা নিজেরা ভোগ করি, তা হলে কেন আমাদের অবাক হওয়া উচিত নয়?

আমরা সবাই অসিদ্ধ এবং ভুল করে থাকি আর তাই মণ্ডলীতে কারো পক্ষে আমাদের প্রতি অন্যায় আচরণ করা কিংবা আমাদের পক্ষে অন্যদের প্রতি অন্যায় আচরণ করা হয়তো খুবই স্বাভাবিক। (১ যোহন ১:৮) যদিও এইরকমটা খুব কমই হয়ে থাকে, তবে যখন কোনো অবিচার ঘটে, তখন বিশ্বস্ত খ্রিস্টানরা অবাক হয় না অথবা বিঘ্ন পায় না। যিহোবা বাইবেলের মধ্যে আমাদের জন্য এমন ব্যাবহারিক পরামর্শ দিয়েছেন, যেগুলো আমাদের সেইসময় বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করে, যখন আমরা কোনো ভাই অথবা বোনের কাছ থেকে অবিচার ভোগ করি।—গীত. ৫৫:১২-১৪.

৬, ৭. একজন ভাই মণ্ডলীতে কোন অবিচার ভোগ করেছিলেন এবং কোন গুণাবলি তাকে সাহায্য করেছিল?

ভাই ভিলি ডিলের উদাহরণ বিবেচনা করুন। ১৯৩১ সালে ভাই ডিল সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরের বেথেলে বিশ্বস্তভাবে সেবা করা শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে আয়োজিত গিলিয়েড স্কুলের অষ্টম ক্লাসে যোগ দেন। গ্র্যাজুয়েশনের পর, তাকে সুইজারল্যান্ডে সীমার কাজে নিযুক্ত করা হয়। তার জীবনকাহিনিতে ভাই ডিল বলেছেন, ১৯৪৯ সালের মে মাসে তিনি সুইজারল্যান্ডের শাখা অফিসকে জানান যে, তিনি বিয়ে করার পরিকল্পনা করছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইয়েরা তাকে বলেন, ভাই ডিলের সমস্ত সুযোগ নিয়ে নেওয়া হবে। ভাইকে শুধুমাত্র অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার সুযোগ দেওয়া হবে। ভাই ডিল বলেন, ‘এমনকী বক্তৃতা দেওয়ার অনুমতিও আমার ছিল না। অনেকে আমাদের আর সম্ভাষণ জানাত না ও সেইসঙ্গে আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করত যেন আমরা সমাজচ্যুত ব্যক্তি।’

ভাই ডিল কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তিনি বলেন: “কিন্তু আমরা জানতাম, বিয়ে করা কোনো অশাস্ত্রীয় বিষয় নয় আর তাই আমরা প্রার্থনায় যিহোবার কাছে আশ্রয় নিয়েছিলাম এবং তাঁর উপর আস্থা রেখেছিলাম।” যদিও কোনো কোনো ভাই বিয়ে সম্বন্ধে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে পারেননি, তবে একসময় তাদের বোধগম্যতাকে সংশোধন করা হয়েছিল আর ভাই ডিল তার সুযোগ ফিরে পেয়েছিলেন। যিহোবা তার আনুগত্যের জন্য তাকে পুরস্কৃত করেছিলেন। * আসুন আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করি: ‘আমি যদি এইরকম অবিচার ভোগ করি, তা হলে আমিও কি ধৈর্য দেখাব এবং সেই পরিস্থিতি ঠিক করার জন্য যিহোবাতে অপেক্ষা করব? না কি আমি নিজের উপর নির্ভর করব এবং অবিচারের সঙ্গে লড়াই করার চেষ্টা করব?’—হিতো. ১১:২; পড়ুন, মীখা ৭:৭.

৮. কেন আমরা হয়তো ভুলভাবে এইরকম চিন্তা করতে পারি যে, আমরা অবিচারের শিকার হয়েছি অথবা অন্যেরা অবিচারের শিকার হয়েছে?

আপনার যদি মনে হয় যে, মণ্ডলীতে কোনো অবিচার ঘটেছে, তা হলে মনে রাখবেন, আপনার বোঝার ক্ষেত্রে ভুল হতে পারে। কেন? আমরা অসিদ্ধ আর তাই আমরা হয়তো সেই পরিস্থিতিকে ভুলভাবে বুঝেছি। এ ছাড়া, আমরা হয়তো সমস্ত তথ্য জানি না। কিন্তু, আমাদের বোঝার বিষয়টা সঠিক হোক বা না-ই হোক, আমাদের সেই পরিস্থিতি নিয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে হবে, তাঁর উপর নির্ভর করতে হবে এবং আনুগত্য বজায় রাখতে হবে। এগুলো আমাদের “সদাপ্রভুর উপরে রুষ্ট” না হতে সাহায্য করবে।—পড়ুন, হিতোপদেশ ১৯:৩.

৯. এই প্রবন্ধে এবং পরের প্রবন্ধে আমরা কোন উদাহরণগুলো বিবেচনা করব?

আসুন আমরা তিনটে অবিচারের ঘটনা থেকে শিক্ষা লাভ করি, যে-অবিচার বাইবেলের সময়ে যিহোবার লোকেরা ভোগ করেছিল। এই প্রবন্ধে আমরা অব্রাহামের প্রপৌত্র যোষেফ এবং তার ভাইদের কারণে তিনি যে-কষ্ট ভোগ করেছিলেন, সেই সম্বন্ধে বিবেচনা করব। পরের প্রবন্ধে আমরা রাজা আহাবের সঙ্গে যিহোবার আচরণ এবং সুরিয়ার আন্তিয়খিয়াতে প্রেরিত পিতরের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করব। এই উদাহরণগুলো নিয়ে আলোচনা করার সময় এমন উপায়গুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন, যেগুলোর মাধ্যমে আপনি যিহোবার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে এবং তাঁর সঙ্গে আপনার সম্পর্ক বজায় রাখতে পারবেন। আর তা বিশেষ করে সেইসময় গুরুত্বপূর্ণ যখন আপনি হয়তো মনে করেন, আপনার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে।

যোষেফ অবিচারের শিকার হয়েছিলেন

১০, ১১. (ক) যোষেফ কোন কোন অবিচার ভোগ করেছিলেন? (খ) কারাগারে থাকার সময় যোষেফ কোন সুযোগ লাভ করেছিলেন?

১০ যিহোবার একজন বিশ্বস্ত দাস যোষেফ, অপরিচিত লোকেদের কাছ থেকে অবিচার ভোগ করেছিলেন। কিন্তু, যে-বিষয়টা তাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছিল, সেটা হল তার নিজের ভাইদের কাছ থেকে অবিচার ভোগ করা। যোষেফের বয়স যখন ১৭ বছর, তখন তার ভাইয়েরা তাকে অপহরণ করে দাস হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। এরপর, তাকে মিশরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। (আদি. ৩৭:২৩-২৮; ৪২:২১) পরবর্তী সময়ে, সেই দেশে যোষেফের বিরুদ্ধে এই মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল যে, তিনি একজন মহিলাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করেছেন। এরপর কোনোরকম বিচার ছাড়াই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। (আদি. ৩৯:১৭-২০) একজন দাস ও বন্দি হিসেবে যোষেফকে প্রায় ১৩ বছর কষ্ট ভোগ করতে হয়েছিল। যোষেফের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কোন শিক্ষাগুলো লাভ করতে পারি আর কীভাবে সেগুলো আমাদের সেইসময় সাহায্য করবে, যখন আমরা আমাদের ভাই-বোনদের কাছ থেকে অবিচার ভোগ করি?

১১ যোষেফ যখন কারাগারে ছিলেন, তখন রাজার প্রধান পানপাত্রবাহককেও কারাগারে বন্দি করা হয়েছিল। একদিন রাতে, সেই পানপাত্রবাহক একটা স্বপ্ন দেখেছিলেন আর যোষেফ যিহোবার সাহায্যে সেটার অর্থ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। যোষেফ ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, সেই পানপাত্রবাহককে কারাগার থেকে মুক্ত করা হবে এবং তিনি পুনরায় ফরৌণের সেবা করবেন। এরপর, যোষেফ সেই ব্যক্তির কাছে নিজের পরিস্থিতি সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করার সুযোগকে কাজে লাগিয়েছিলেন। যোষেফ তাকে যা বলেছিলেন, শুধু সেটা থেকেই নয়, কিন্তু তিনি যা বলেননি, সেটা থেকেও আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি।—আদি. ৪০:৫-১৩.

১২, ১৩. (ক) কীভাবে আমরা জানি যে, যোষেফ চুপচাপ তার পরিস্থিতি মেনে নেননি? (খ) যোষেফ সেই পানপাত্রবাহককে কী বলেননি?

১২ আদিপুস্তক ৪০:১৪, ১৫ পদ পড়ুন। লক্ষ করুন যোষেফ বলেছিলেন, তাকে “চুরি” বা অপহরণ করা হয়েছিল। স্পষ্টতই, তিনি অবিচারের শিকার হয়েছিলেন। যোষেফ স্পষ্টভাবে এও বলেছিলেন, তাকে যে-অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, সেটা তিনি করেননি। এই কারণে যোষেফ সেই পানপাত্রবাহককে অনুরোধ করেছিলেন, যেন তিনি ফরৌণের কাছে তার বিষয়ে বলেন। তার লক্ষ্য কী ছিল? তিনি বলেছিলেন: “আমাকে এই গৃহ হইতে উদ্ধার করিবেন।”

১৩ যোষেফ কি কিছু করার চেষ্টা না করে চুপচাপ তার পরিস্থিতি মেনে নিয়েছিলেন? না! যোষেফ জানতেন, তিনি বহু অবিচারের শিকার হয়েছেন। আর তাই তিনি সেই পানপাত্রবাহকের কাছে নিজের পরিস্থিতি সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করেছিলেন, যাতে সেই ব্যক্তি তাকে সাহায্য করতে পারেন। কিন্তু লক্ষ করুন, শাস্ত্রে কোথাও বলা নেই, যোষেফ কখনো কাউকে, এমনকী ফরৌণকে এই কথা বলেছিলেন যে, তার ভাইয়েরাই তাকে অপহরণ করেছেন। বরং, তার ভাইয়েরা যখন মিশরে এসেছিলেন এবং যোষেফের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করেছিলেন, তখন ফরৌণ তাদের স্বাগত জানিয়েছিলেন এবং তাদের মিশরে বাস করার ও “দেশের উৎকৃষ্ট দ্রব্য” উপভোগ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।—আদি. ৪৫:১৬-২০.

সমালোচনা করা একটা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে (১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৪. মণ্ডলীতে আমরা যদি কোনো অবিচার ভোগ করি, তা হলে কী আমাদের আঘাত দেওয়ার মতো কিছু বলা থেকে সুরক্ষা করবে?

১৪ আমরা যদি মনে করি যে, মণ্ডলীতে আমরা অবিচার ভোগ করেছি, তা হলে আমাদের খুবই সতর্ক থাকতে হবে যেন আমরা সেই পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনা না করি। অবশ্য, একজন ভাই বা বোন যদি কোনো গুরুতর পাপ করে থাকেন, তা হলে প্রাচীনদের কাছে আমাদের সাহায্য চাওয়া উচিত এবং বিষয়টা তাদের বলা উচিত। (লেবীয়. ৫:১) কিন্তু, এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে কোনো গুরুতর পাপ জড়িত থাকে না আর তাই কাউকে—এমনকী প্রাচীনদেরও—না জানিয়েই হয়তো সেই ভাই বা বোনের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করা সম্ভব। (পড়ুন, মথি ৫:২৩, ২৪; ১৮:১৫.) আসুন, এইরকম পরিস্থিতিতে আমরা আনুগত্য বজায় রাখি এবং বাইবেলের নীতি কাজে লাগাই। কখনো কখনো আমরা হয়তো উপলব্ধি করতে পারি যে, আমরা কোনো পরিস্থিতিকে ভুলভাবে বুঝেছি এবং আসলে কোনো অবিচারের শিকার হইনি। তখন আমরা এইজন্য কৃতজ্ঞ হব যে, আমরা আমাদের ভাই বা বোন সম্বন্ধে খারাপ কথা বলার মাধ্যমে পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলিনি! মনে রাখবেন, আমরা সঠিক বা ভুল, যা-ই হই না কেন, আঘাত দেওয়ার মতো কিছু বলার মাধ্যমে আমরা কখনোই কোনো পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারব না। যিহোবা ও সেইসঙ্গে ভাই-বোনদের প্রতি আমাদের আনুগত্য এই ধরনের ভুল করা থেকে আমাদের সুরক্ষা করবে। গীতরচক বলেছিলেন, ‘সিদ্ধ আচরণ করেন’ এমন একজন ব্যক্তি ‘পরীবাদ জিহ্বাগ্রে আনেন না, মিত্রের অপকার করেন না।’—গীত. ১৫:২, ৩; যাকোব ৩:৫.

আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা মনে রাখুন

১৫. যিহোবার সঙ্গে যোষেফের সম্পর্ক কীভাবে তার জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ ছিল?

১৫ যোষেফের কাছ থেকে আমরা আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করতে পারি। ১৩ বছর ধরে অবিচার ভোগ করার সময় যোষেফ দেখিয়েছিলেন যে, তিনি বিভিন্ন বিষয়কে যিহোবার মতো করে দেখেন। (আদি. ৪৫:৫-৮) তিনি তার পরিস্থিতির জন্য কখনো যিহোবাকে দোষ দেননি। যদিও যোষেফ তার অবিচার সম্বন্ধে ভুলে যাননি, কিন্তু তিনি সেগুলোর কারণে তিক্তবিরক্ত হয়ে পড়েননি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, অন্যদের অসিদ্ধতা এবং অন্যায় কাজগুলোর কারণে তিনি নিজেকে যিহোবার কাছ থেকে পৃথক করেননি। যোষেফ আনুগত্য বজায় রেখেছিলেন বলে যিহোবা তার প্রতি ঘটা অবিচার দূর করেছিলেন এবং তাকে ও তার পরিবারকে আশীর্বাদ করেছিলেন আর যোষেফ নিজে সেগুলো দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন।

১৬. মণ্ডলীতে আমরা যদি অবিচার ভোগ করি, তা হলে কেন আমাদের যিহোবার আরও নিকটবর্তী হওয়া উচিত?

১৬ একইভাবে, আমাদেরও যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে মূল্যবান বলে মনে করতে হবে এবং সেই সম্পর্ককে রক্ষা করতে হবে। ভাই-বোনদের অসিদ্ধতার কারণে আমাদের কখনোই ঈশ্বরের কাছ থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া উচিত নয়, যাঁকে আমরা ভালোবাসি এবং উপাসনা করি। (রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯) এর পরিবর্তে, আমরা যদি মণ্ডলীর মধ্যে অবিচার ভোগ করি, তা হলে আসুন আমরা যোষেফকে অনুকরণ করি এবং যিহোবার আরও নিকটবর্তী হই ও সেইসঙ্গে বিভিন্ন বিষয়কে তাঁর মতো করে দেখার চেষ্টা করি। বাইবেলের নীতি কাজে লাগিয়ে কোনো সমস্যার সমাধান করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করার পর, বিষয়টা আমাদের যিহোবার হাতে ছেড়ে দিতে হবে। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, তিনি তাঁর নিজ সময় এবং উপায়ে বিষয়টা সংশোধন করবেন।

‘সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তার’ উপর আস্থা রাখুন

১৭. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি, ‘সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তার’ উপর আমাদের আস্থা আছে?

১৭ যতদিন আমরা এই মন্দ জগতে বাস করব, ততদিন আমাদের অবিচার ভোগ করতেই হবে। মণ্ডলীতে এইরকমটা খুব কমই হয়ে থাকে যে, আপনি অথবা আপনার কোনো পরিচিত ব্যক্তি হয়তো এমন কিছু ভোগ করেছেন অথবা লক্ষ করেছেন, যেটাকে অবিচার বলে মনে হয়। এইরকম পরিস্থিতিকে উছোট খাওয়ার বা বিঘ্ন পাওয়ার কারণ হতে দেবেন না। (গীত. ১১৯:১৬৫) এর পরিবর্তে, ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখুন, তাঁর কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করুন এবং তাঁর উপর নির্ভর করুন। মনে রাখবেন, অসিদ্ধতার কারণে এমনটা হতে পারে যে, আপনি কোনো পরিস্থিতিকে ভুলভাবে বুঝেছেন আর আপনি হয়তো সমস্ত তথ্য জানেন না। যোষেফের উদাহরণ অনুকরণ করুন এবং নেতিবাচক কথাবার্তা এড়িয়ে চলুন, যা কিনা একটা খারাপ পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে। পরিশেষে, নিজের উপর নির্ভর না করে বরং যিহোবার প্রতি আনুগত্য বজায় রাখার এবং বিষয়টা সংশোধন করার ব্যাপারে ধৈর্য ধরে যিহোবাতে অপেক্ষা করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন। এর ফলে, আপনি যিহোবার অনুমোদন ও আশীর্বাদ লাভ করবেন, যেমনটা যোষেফ লাভ করেছিলেন। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, “সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা” যিহোবা সবসময় ন্যায়বিচার করবেন, “কেননা তাঁহার সমস্ত পথ ন্যায্য।”—আদি. ১৮:২৫; দ্বিতীয়. ৩২:৪.

১৮. পরের প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?

১৮ পরের প্রবন্ধে, আমরা বাইবেলের সময়ে যিহোবার লোকেদের মধ্যে আরও দুটো অবিচারের উদাহরণ বিবেচনা করব। এই উদাহরণগুলো আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে যে, কীভাবে নম্রতা ও ক্ষমাশীল মনোভাব আমাদের ন্যায়বিচার সম্বন্ধে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি অনুকরণ করতে সাহায্য করবে।

^ অনু. 7 ১৯৯১ সালের ১ নভেম্বর প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকায় “যিহোবা আমার ঈশ্বর, আমি তাঁর উপর নির্ভর করব” শিরোনামের প্রবন্ধে ভাই ভিলি ডিলের জীবনকাহিনি দেখুন।