দায়ূদ বনাম গলিয়াৎ—এই লড়াই কি সত্যিই হয়েছিল?
দায়ূদ ও গলিয়াতের বিবরণ বাস্তব ঘটনা, না কি এটা এক পৌরাণিক কাহিনি, সেই সম্বন্ধে অনেকের সন্দেহ রয়েছে। আগের প্রবন্ধটা পড়ার সময়, আপনার মনেও কি একইরকম সন্দেহ দেখা দিয়েছিল? যদি তা-ই হয়, তা হলে দয়া করে পরবর্তী তিনটে প্রশ্ন বিবেচনা করুন।
১ | একজন ব্যক্তির উচ্চতা কি আসলেই সাড়ে নয় ফুট (২.৯ মিটার) হতে পারে?
বাইবেল বলে, গলিয়াৎ ছিলেন “সাড়ে ছয় হস্ত দীর্ঘ।” (১ শমূয়েল ১৭:৪) আরেকটা বাইবেল অনুবাদ অনুযায়ী গলিয়াতের উচ্চতা ছিল নয় ফুটেরও বেশি। কেউ কেউ দাবি করে, গলিয়াৎ এত লম্বা হতে পারেন না। কিন্তু, এই বিষয়টা বিবেচনা করুন: আধুনিক সময়ে রেকর্ডকৃত সবচেয়ে লম্বা ব্যক্তির উচ্চতা হল, ৮ ফুট ১১ ইঞ্চি (২.৭ মিটার)। তা হলে, গলিয়াতের পক্ষে এই ব্যক্তির চেয়ে ৬ ইঞ্চি (১৫ সেন্টিমিটার) বা আরেকটু বেশি লম্বা হওয়াটা কি কোনো অস্বাভাবিক বিষয়? তিনি ছিলেন রফার বংশধর, যে-বংশের লোকেরা তাদের অস্বাভাবিক আকৃতির জন্য পরিচিত ছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব ত্রয়োদশ শতাব্দীর একটা মিশরীয় নথিতে উল্লেখ আছে যে, কনান অঞ্চলের কিছু ভয়ংকর যোদ্ধার উচ্চতা ছিল আট ফুটের (২.৪ মিটার) চেয়েও বেশি। তাই, গলিয়াতের উচ্চতা যদিও অস্বাভাবিক বলে মনে হয় কিন্তু এটা অসম্ভব নয়।
২ | দায়ূদ কি একজন বাস্তব ব্যক্তি ছিলেন?
একসময়, পণ্ডিত ব্যক্তিরা রাজা দায়ূদকে এক কাল্পনিক চরিত্র হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু পরে এটা প্রমাণ করা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রত্নতত্ত্ববিদরা এমন একটা প্রাচীন শিলালিপি খুঁজে পেয়েছে, যেখানে “দায়ূদের বংশ” সম্বন্ধে উল্লেখ করা আছে। এ ছাড়া, যিশু খ্রিস্ট দায়ূদকে একজন বাস্তব ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। (মথি ১২:৩; ২২:৪৩-৪৫) মশীহ হিসেবে যিশুর শনাক্তিকরণের প্রমাণ স্বরূপ যে-দুটো বিস্তারিত বংশতালিকা রয়েছে, সেগুলো দেখায় যে, যিশু রাজা দায়ূদের বংশ থেকে এসেছেন। (মথি ১:৬-১৬; লূক ৩:২৩-৩২) স্পষ্টতই, দায়ূদ একজন বাস্তব ব্যক্তি ছিলেন।
৩ | এই বিবরণে বর্ণিত ঘটনাগুলো যে-জায়গায় ঘটেছিল, সেটা কি আসলেই ছিল?
বাইবেলের বিবরণ অনুযায়ী, দায়ূদ ও গলিয়াতের লড়াই এলা তলভূমিতে হয়েছিল। তবে, আরও বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বাইবেল জানায়, পলেষ্টীয়রা সোখো ও অসেকা নগরের মাঝামাঝি কোনো পাহাড়ের ঢালে শিবিরস্থাপন করেছিল। আর ইস্রায়েলীয়রা উপত্যকার বিপরীত দিকে পাহাড়ের ঢালে শিবিরস্থাপন করেছিল। এই জায়গাগুলো কি আসলেই ছিল?
সম্প্রতি সেই এলাকায় ঘুরে এসেছেন এমন একজন ব্যক্তির মন্তব্য লক্ষ করুন: “আমাদের ট্যুর গাইড—যিনি ধর্মে বিশ্বাসী নন—আমাদেরকে এলা তলভূমিতে নিয়ে যান। আমরা একটা পথ ধরে পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত যাই। আমরা যখন পাহাড়ের চূড়া থেকে নীচে উপত্যকাটার দিকে তাকাই, তখন তিনি আমাদেরকে বাইবেল থেকে ১ শমূয়েল ১৭:১-৩ পদ পড়ে শোনান। এরপর, তিনি উপত্যকার বিপরীত দিক দেখিয়ে বলেন: ‘আপনাদের বাম দিকে, ওই জায়গাটা হল সোখোর ধ্বংসাবশেষ।’ এরপর, পাশে ঘুরে তিনি বলেন, ‘আর আপনাদের ডান দিকে, ওই জায়গাটা হল অসেকার ধ্বংসাবশেষ। পলেষ্টীয়রা এই দুটো নগরের মাঝামাঝি, আপনাদের সামনে এই পাহাড়ের ঢালে কোনো একটা জায়গায় শিবিরস্থাপন করেছিল। তাই, আমরা হয়তো ইস্রায়েলীয়রা যেখানে শিবিরস্থাপন করেছিল, সেখানে দাঁড়িয়ে আছি।’ আমি কল্পনা করলাম, আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, শৌল আর দায়ূদ ঠিক সেখানেই দাঁড়িয়ে আছেন। এরপর, আমরা নীচে নেমে যাই এবং উপত্যকার তলদেশে এসে একটা নদীপথ পার হই, যেটা বলতে গেলে পুরোটাই শুকনো এবং পাথরে ভরতি। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম যে, দায়ূদ ঝুঁকে পড়ে সেই পাঁচটা মসৃণ পাথর তুলে নিচ্ছেন, যেগুলোর একটা দিয়ে তিনি পরে গলিয়াৎকে পরাজিত করেছিলেন।” অন্যান্য অনেকের মতো সেই পর্যটকও বাইবেলের বিবরণের নির্ভরযোগ্য প্রমাণ দেখে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন।
এই ঐতিহাসিক বিবরণের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ করার কোনো প্রকৃত ভিত্তিই নেই। এই বিবরণে বর্ণিত ব্যক্তিরা ও জায়গাগুলো আসলেই ছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই বিবরণ ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্যের অংশ আর তাই এর উৎস হলেন, সত্যের ঈশ্বর, যিনি “মিথ্যাকথনে অসমর্থ।”—তীত ১:২; ২ তীমথিয় ৩:১৬. ▪ (wp16-E No. 5)