মেনোপজে আসা প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হওয়া
“অকারণে কিংবা হঠাৎই আমার মন দুঃখে ভরে যেত। আমি কাঁদতে থাকতাম, মনে হত আমি যেন পাগল হয়ে গিয়েছি।”—রেবেকা, * বয়স ৫০ বছর।
“সকাল বেলা উঠে আপনি দেখেন যে, আপনার ঘর একেবারে অগোছালো হয়ে পড়ে রয়েছে। আপনি আপনার নিজের জিনিসপত্র খুঁজে পাচ্ছেন না। এতদিন যে-কাজগুলো আপনি সহজেই করে ফেলতে পারতেন, এখন সেগুলো করতে আপনার খুবই কষ্ট হচ্ছে আর আপনি জানেন না যে, কেন এমনটা হচ্ছে।”—হান্না, বয়স ৫৫ বছর।
এই মহিলারা কেউই অসুস্থ নয়। তারা মেনোপজ বা রজোনিবৃত্তির অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, যেটা একজন মহিলার জীবনে এক স্বাভাবিক পরিবর্তন, যখন তার প্রজনন ক্ষমতার সমাপ্তি ঘটে। আপনি যদি একজন মহিলা হন, তবে আপনার জীবনে কি সেই সময় আসতে চলেছে? আপনি কি সেই সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন? পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, আপনি ও আপনার প্রিয়জনেরা এই অবস্থা সম্বন্ধে যত বেশি জানবেন, তত ভালোভাবে আপনি এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকবেন।
মেনোপজ অবস্থা
মেনোপজ অবস্থা, যাকে আবার পেরিমেনোপজও (মেনোপজকে কেন্দ্র করে চলা ঘটনাগুলো) বলা হয়ে থাকে, তার অন্তর্ভুক্ত হল মেনোপজ এগিয়ে আসার সময়কাল ও মেনোপজ সময়কাল। * তবে সাধারণভাবে “মেনোপজ” বলতে এই সম্পূর্ণ সময়কালকে বোঝায়।
বেশিরভাগ মহিলার জীবনে ৪০ বছর বয়সের পর পেরিমেনোপজ শুরু হয়, তবে কারো কারো ক্ষেত্রে তা অনেক দেরি করে, প্রায় ৬০ বছর বয়সের পরে শুরু হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পিরিয়ড ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। হরমোনের অনিয়মিত নিঃসরণের ফলে একজন মহিলার কোনো কোনো মাসে পিরিয়ড না-ও হতে পারে, অসময়ে রক্তস্রাব হতে পারে অথবা পিরিয়ড চলাকালীন অতিরিক্ত রক্তস্রাব হতে পারে। অল্প সংখ্যক মহিলার ক্ষেত্রে আকস্মিকভাবে, ঠিক যেন রাতারাতি পিরিয়ড শেষ হয়ে যায়।
মেনোপজ গাইডবুক বলে, “প্রত্যেক মহিলার মেনোপজের অভিজ্ঞতা আলাদা আলাদা।” এ ছাড়া এটা বলে: ‘মেনোপজ সংক্রান্ত সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা হল, হট ফ্ল্যাশ (অনেক সময় যাকে হট ফ্লাশ বলা হয়)’ আর ‘হয়তো-বা তার ঠিক পরেই কাঁপুনি লাগা।’ এই উপসর্গগুলো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় ও শরীরের শক্তি নিঃশেষ করে দেয়। এই অসুবিধাগুলো কতদিন স্থায়ী হয়? দ্য মেনোপজ বুক অনুসারে, “কোনো কোনো মহিলার ক্ষেত্রে মেনোপজ অবস্থা চলাকালীন এক বছর অথবা দু-বছরের মধ্যে মাত্র কয়েক বার হট ফ্ল্যাশ হয়ে থাকে। অনেকে বহু বছর ধরে তা ভোগ করে আর খুব কম শতাংশ মহিলা জানায় যে, তাদের বাকি জীবনকালে মাঝেমধ্যেই হট ফ্ল্যাশ হয়।” *
হরমোনের তারতম্যের কারণে একজন মহিলা আবার অবসাদে ভুগতে পারে ও তার মেজাজ বদলাতে পারে, কান্নার প্রবণতা আসতে পারে আর সেইসঙ্গে মনঃসংযোগের অভাব দেখা দিতে পারে ও স্মরণশক্তি কমে যেতে পারে। দ্য মেনোপজ বুক বলে, “একজন মহিলা যে এই সমস্তকিছুতে ভুগবেন এমন নয়।” আসলে কেউ কেউ হয়তো-বা কয়েকটা সমস্যা ও অসুবিধার মুখোমুখি হয়।
যেভাবে মোকাবিলা করা যায়
সাদাসিধে জীবনযাত্রা হয়তো অসুবিধা কিছুটা লাঘব করতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, যারা ধূমপান করেন, তারা তামাক সেবন বন্ধ করলে হট ফ্ল্যাশ কমে যেতে পারে। অনেক মহিলা খাদ্য তালিকায় রদবদল করে, যেমন মদ, ক্যাফেইন এবং মশলাদার অথবা মিষ্টি খাবার কম করে কিংবা একেবারে বাদ দিয়ে উপকার পেয়েছে, যেগুলো হট ফ্ল্যাশকে বাড়িয়ে দেয়। অবশ্য, ভালো খাওয়া-দাওয়াও জরুরি, যার অর্থ সুষম ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্য খাওয়া।
মেনোপজের উপসর্গগুলো কমানোর জন্য ব্যায়াম করাও অনেক সাহায্যকারী হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এটা অনিদ্রা দূর করতে ও মানসিক পরিস্থিতির উন্নতি সাধন করতে, সেইসঙ্গে হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। *
খোলাখুলিভাবে কথা বলুন
পূর্বে উল্লেখিত রেবেকা বলেন, ‘নীরবে কষ্ট পাওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনি যদি প্রিয়জনদের সঙ্গে খোলাখুলিভাবে এই বিষয়ে কথা বলেন, তাহলে আপনার যা যা হচ্ছে তা দেখে তারা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করবে না।’ বরং তারা হয়তো আরও বেশি ধৈর্য দেখাতে ও আপনার অবস্থা বুঝতে পারবে। ১ করিন্থীয় ১৩:৪ পদ বলে: “প্রেম চিরসহিষ্ণু, প্রেম মধুর [“ভালবাসা সব সময় ধৈর্য ধরে, দয়া করে,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন]।”
তাদের প্রজনন ক্ষমতা চলে যাওয়ার কারণে শোক করে, এমন মহিলা-সহ অনেক মহিলা প্রার্থনা করার মাধ্যমেও উপকার লাভ করেছে। “[ঈশ্বর] আমাদের সমস্ত ক্লেশের মধ্যে আমাদিগকে সান্ত্বনা করেন।” (২ করিন্থীয় ১:৪) এ ছাড়া, এটা জানাও খুবই সান্ত্বনা দেয় যে, মেনোপজ অবস্থা হল সাময়িক। পরবর্তী সময়ে যে-মহিলারা তাদের স্বাস্থ্যের ভালো যত্ন নেয়, তারা হয়তো তাদের শক্তি ফিরে পায় এবং অনেক বছর ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারে। ▪ (g13-E 11)
^ অনু. 2 নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।
^ অনু. 6 ডাক্তারদের মতে, একজন মহিলার গত ১২ মাস পিরিয়ড বা মাসিক ঋতুচক্র বন্ধ থাকলে, সেটাকে মেনোপজ হিসেবে ধরা হয়।
^ অনু. 8 কিছু কিছু চিকিৎসাগত কারণে, যেমন থাইরয়েড রোগ থাকলে এবং কোনো সংক্রমণ হলে আর সেইসঙ্গে কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ খেলেও হট ফ্ল্যাশ হতে পারে। মেনোপজের কারণে হট ফ্ল্যাশ হচ্ছে, এমনটা ধরে নেওয়ার আগে এই বিষয়গুলো নির্ধারণ করা বিজ্ঞতার কাজ হবে।
^ অনু. 12 ডাক্তাররা হয়তো তাদের রোগীদের মেনোপজ অবস্থার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করার জন্য হরমোন, পরিপূরক খাদ্যসামগ্রী ও অবসাদ দূর করার ওষুধ দিতে পারে। সচেতন থাক! পত্রিকা এই ধরনের কোনো সামগ্রী অথবা চিকিৎসা পদ্ধতি সম্বন্ধে বলে না।