ম্যালেরিয়া সম্বন্ধে আপনার যা জানা উচিত
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র পরিসংখ্যান দেখায় যে, ২০১৩ সালে ১৯ কোটি ৮০ লক্ষ লোক ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল এবং এর ফলে ৫,৮৪,০০০ জন মারা গিয়েছিল। মৃত ব্যক্তিদের প্রতি ৫ জনের মধ্যে ৪ জনের বয়স পাঁচের নীচে। বিশ্বের প্রায় এক-শোটা দেশে এই রোগ বিপদজনক আকার ধারণ করেছে এবং প্রায় ৩২০ কোটি লোকের জীবন ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
১ ম্যালেরিয়া কী?
ম্যালেরিয়া হল এক ধরনের পরজীবীঘটিত রোগ। এই রোগের উপসর্গ হল জ্বর, কাঁপুনি, ঘাম দেওয়া, মাথা ব্যথা, শরীরে ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া। কোন ধরনের পরজীবী আক্রমণ করেছে এবং কতদিন ধরে ওই ব্যক্তি রোগে ভুগছে, সেটার উপর নির্ভর করে এই উপসর্গগুলো কখনো কখনো প্রতি ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টায় দেখা দিতে পারে।
২ ম্যালেরিয়া কীভাবে ছড়ায়?
-
স্ত্রী অ্যনোফিলিস মশার কামড়ে ম্যালেরিয়ার পরজীবী অর্থাৎ প্লাসমোডিয়া নামক এককোষী জীব মানুষের রক্তসংবহনতন্ত্রে প্রবেশ করে।
-
এরপর সেই পরজীবী সংক্রামিত ব্যক্তির লিভারের কোষে গিয়ে পৌঁছায় এবং সেখানে বংশবৃদ্ধি করে।
-
যখন সেই লিভারের কোষ ফেটে যায়, তখন পরজীবী সেখান থেকে বেরিয়ে ব্যক্তির লোহিতকণিকায় প্রবেশ করে। সেখানে পরজীবীগুলো ক্রমাগতভাবে বংশবৃদ্ধি করে।
-
যখন একটা লোহিতকণিকা ফেটে যায়, তখন পরজীবীগুলো সেখান থেকে বেরিয়ে অন্যান্য লোহিতকণিকায় প্রবেশ করে।
-
লোহিতকণিকার মধ্যে প্রবেশ এবং সেগুলো ফাটিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলতেই থাকে। ঠিক যখন লোহিতকণিকাগুলো ফেটে যায়, তখন আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ম্যালেরিয়ার উপসর্গগুলো দেখা দেয়।
৩ কীভাবে আপনি নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন?
আপনি যদি এমন এলাকায় বাস করেন, যেখানে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি, তা হলে . . .
-
মশারি ব্যবহার করুন।
-
এটা যেন কীটনাশক পদার্থ দিয়ে ধোয়া হয়।
-
এতে যেন ছেঁড়া বা ফুটো না থাকে।
-
এটা যেন বিছানার নীচে গোঁজা থাকে।
-
-
মশা তাড়ানোর স্প্রে ব্যবহার করুন।
-
যদি সম্ভব হয়, তা হলে দরজা ও জানালায় তারের জালি লাগান আর এয়ার কন্ডিশনার ও পাখা ব্যবহার করুন, যাতে মশা প্রবেশ করতে না পারে।
-
হালকা রঙের জামাকাপড় পরুন আর পুরো শরীর ঢেকে রাখুন।
-
সম্ভব হলে এমন জায়গাগুলো এড়িয়ে চলুন যেখানে ঝোপঝাড় এবং জমা জল রয়েছে। কারণ, ঝোপঝাড়ের মধ্যে প্রচুর মশা থাকে আর জমা জলে মশা জন্মায়।
-
আপনি যদি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন, তা হলে সঙ্গেসঙ্গে চিকিৎসা করান।
আপনি যদি এমন কোনো এলাকায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, যেখানে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ খুব বেশি, তা হলে . . .
-
যাওয়ার আগে খোঁজখবর নিন। বিভিন্ন জায়গার ম্যালেরিয়ার পরজীবী একেক রকমের হতে পারে, আর সেটার উপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা হয়, কোন ধরনের ওষুধ বেশি কার্যকরী। এ ছাড়া, আপনার নিজের শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে আপনাকে কোন কোন বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে, তা নিয়ে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।
-
সেখানে গিয়ে, এই প্রবন্ধে দেওয়া নির্দেশনাগুলো মেনে চলুন, যেগুলো সেই ব্যক্তিদের জন্য দেওয়া হয়েছে, যারা ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় বাস করেন।
-
আপনি যদি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন, তা হলে সঙ্গেসঙ্গে চিকিৎসা করান। মনে রাখুন, আক্রান্ত হওয়ার এক থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে উপসর্গগুলো দেখা দিতে শুরু করে।