পরিবারের জন্য সাহায্য | সন্তান লালনপালন
সন্তানদের আত্মসংযমী হতে শেখানো
প্রতিদ্বন্দ্বিতা
আত্মসংযম সম্বন্ধে আপনার ছয় বছর বয়সি সন্তানের কোনো ধারণা নেই বললেই চলে। সে যদি এমন কোনো জিনিস দেখে, যেটা সে চায়, তা হলে তক্ষুনি সেটা নেওয়ার জন্য বায়না করে! আর রেগে গেলে, সে কখনো কখনো চিৎকার-চ্যাঁচামেচি শুরু করে দেয়। আপনি ভাবেন, ‘সব বাচ্চাই কি এইরকম করে? আপনি এও ভাবেন, এটা কি বড়ো হয়ে ওঠার একটা পর্যায় মাত্র, না কি এখন আমার তাকে আত্মসংযমী হতে শেখানোর সময়?’
আপনার যা জানা উচিত
বর্তমান সমাজ আত্মসংযম দেখানোকে বেশি গুরুত্ব দেয় না। ড. ডেভিড ওয়ল্স বলেন, “আমাদের প্রশ্রয়ী সমাজে প্রাপ্তবয়স্ক এবং সন্তানরা বার বার একই কথা শোনে আর তা হল, মন যা চায়, আমাদের সেটাই করা উচিত। বিভিন্ন শুভাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তি থেকে শুরু করে পেশাদার পরামর্শদাতাদের কাছ থেকে আমরা সবসময় এই কথাই শুনি, আমরা যেন আমাদের চাহিদা পূরণ করি।” *
ছোটোবেলা থেকে আত্মসংযমী হতে শেখাতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে চলা এক সমীক্ষায় গবেষকরা চার বছর বয়সি এক দল ছেলে-মেয়েকে একটা করে চকোলেট দিয়েছিলেন আর তাদেরকে বলেছিলেন, তারা চাইলে সেই চকোলেট তখনই খেতে পারে কিংবা একটু অপেক্ষা করে পরেও খেতে পারে। কিন্তু তারা যদি অপেক্ষা করে, তবে ধৈর্য ধরার পুরস্কার হিসেবে তাদেরকে আরেকটা চকোলেট দেওয়া হবে। যে-সমস্ত ছেলে-মেয়েরা চার বছর বয়সে আত্মসংযম দেখিয়েছিল, তারা হাই স্কুল থেকে পাশ করার পর সেই ছেলে-মেয়েদের তুলনায় মানসিক, সামাজিক এবং শিক্ষাগত দিক দিয়ে আরও ভালো ফল করেছিল, যারা আত্মসংযম দেখায়নি।
আত্মসংযমী হতে না শেখানোর ফল খারাপ হতে পারে। গবেষকরা মনে করেন, একটা শিশু যা শেখে, সেটার মাধ্যমে তার মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ পরিবর্তিত হতে পারে। ড. ড্যান কিন্ডলেন এটার অর্থ ব্যাখ্যা করেন: “আমরা যদি আমাদের সন্তানকে অতিরিক্ত প্রশ্রয় দিই, তাদেরকে কোনো কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে, আমোদপ্রমোদের ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরতে এবং প্রলোভন প্রতিরোধ করতে না শেখাই, তা হলে তাদের দৃঢ় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত স্নায়ুকোষগুলো বিকশিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে।” *
আপনি যা করতে পারেন
উদাহরণ স্থাপন করুন। আপনি কি আত্মসংযম দেখান? আপনার সন্তান কি আপনাকে যানজটে আটকে পড়ার সময় অধৈর্য হয়ে পড়তে, দোকানে লাইন ভেঙে এগিয়ে যেতে অথবা অন্যদের কথার মাঝখানে কথা বলতে দেখে? ড. কিন্ডলেন লেখেন, “সন্তানদের আত্মসংযম শেখানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হল, নিজেদের সেটা করে দেখানো।”—বাইবেলের নীতি: রোমীয় ১২:৯.
আপনার সন্তানকে আত্মসংযম না দেখানোর পরিণতি সম্বন্ধে শিক্ষা দিন। সন্তানের বয়স অনুযায়ী, কোনো কিছু পাওয়ার ইচ্ছাকে দমন করার উপকারিতা এবং দমন না করার ফলে যে-পরিণাম ভোগ করতে হয়, তা তাকে বুঝতে সাহায্য করুন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনার সন্তান যদি কারো কাছ থেকে খারাপ ব্যবহার পেয়ে রেগে যায়, তাকে একটু থেমে চিন্তা করতে সাহায্য করুন: ‘প্রতিশোধ নেওয়ার ফল কি ভালো হবে না খারাপ হবে? এর চেয়ে কি আরও ভালো কোনো উপায় আছে, যেমন এক থেকে দশ পর্যন্ত গোনা আর তারপর রাগ ঠাণ্ডা হতে দেওয়া? সেখান থেকে চলে যাওয়া কি সবচেয়ে ভালো হবে?’—বাইবেলের নীতি: গালাতীয় ৬:৭.
আপনার সন্তানকে উৎসাহ দিন। আপনার সন্তান যখন আত্মসংযম দেখায়, তখন তার প্রশংসা করুন। সন্তানকে বলুন, সবসময় হয়তো তার পক্ষে তার ইচ্ছাকে দমন করা সহজ নয় কিন্তু তা করার মাধ্যমে সে প্রমাণ দেয়, সেটা করার শক্তি তার রয়েছে! বাইবেল বলে: “যে আপন আত্মা দমন না করে, সে এমন নগরের তুল্য, যাহা ভাঙ্গিয়া গিয়াছে, যাহার প্রাচীর নাই।” (হিতোপদেশ ২৫:২৮) এর বিপরীতে, “যে ক্রোধে ধীর, সে বীর হইতেও উত্তম।”—হিতোপদেশ ১৬:৩২.
মহড়া দিন। আপনার সন্তানকে নিয়ে একটা খেলা খেলতে পারেন। খেলাটার নাম দিতে পারেন, “তুমি কি করবে?” অথবা “ভালো সিদ্ধান্ত, খারাপ সিদ্ধান্ত” কিংবা এইরকম কিছু-একটা। কয়েকটা সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করুন এবং সেই পরিস্থিতিগুলোতে কোন কোন প্রতিক্রিয়া দেখানো যেতে পারে, তা অভিনয় করুন। আর এরপর সেই প্রতিক্রিয়াগুলোকে ‘ভালো’ অথবা ‘খারাপ’ হিসেবে চিহ্নিত করুন। বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করুন: খেলাটাকে উপভোগ্য এবং শিক্ষণীয় করে তোলার জন্য চাইলে আপনি পুতুল, ছবি অথবা অন্য কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। আপনার লক্ষ্য হল, সন্তানকে এই বিষয়টা উপলব্ধি করতে সাহায্য করা, অধৈর্য না হয়ে আত্মসংযমী হওয়া আরও ভালো ফল নিয়ে আসে।—বাইবেলের নীতি: হিতোপদেশ ২৯:১১.
ধৈর্য ধরুন। বাইবেল জানায়, “বালকের হৃদয়ে অজ্ঞানতা বাঁধা থাকে।” (হিতোপদেশ ২২:১৫) তাই, এমনটা আশা করবেন না, আপনার সন্তান রাতারাতি আত্মসংযমী হয়ে উঠবে। আপনার সন্তানদের ভালোভাবে শিক্ষা দিন (ইংরেজি) নামক বইটা বলে, “এটা হল এক সুদীর্ঘ, সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া আর এতে উত্থান-পতন আছে।” কিন্তু, শেষপর্যন্ত প্রচেষ্টা সার্থক হয়। বইটা আরও বলে, “যে-সন্তান আত্মসংযম করতে পারে, সে অনেক কম বয়সে ড্রাগ কিংবা যৌন বিষয়গুলো আরও ভালোভাবে প্রতিরোধ করতে পারে।” ▪ (g15-E 08)