আপনার পদক্ষেপগুলোকে ঈশ্বরের নীতিগুলো দিয়ে পরিচালিত করুন
আপনার পদক্ষেপগুলোকে ঈশ্বরের নীতিগুলো দিয়ে পরিচালিত করুন
‘[যিহোবা] তোমার উপকারজনক শিক্ষা দান করেন।’—যিশাইয় ৪৮:১৭.
১. স্রষ্টা কীভাবে মানুষদের পরিচালনা দেন?
বিজ্ঞানীরা যখন মহাবিশ্বের রহস্য উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করেন, তখন তারা আমাদের চারপাশে যে-প্রচুর পরিমাণে শক্তি সঞ্চিত রয়েছে, তা দেখে একেবারে বিস্মিত হয়ে যান। মাঝারি আকারের একটা নক্ষত্র সূর্য সেই পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে, যা “১০০ বিলিয়ন হাইড্রোজেন বোমা প্রতি সেকেন্ডে নির্গত করে।” এই প্রকাণ্ড শক্তিশালী তারকামণ্ডলকে স্রষ্টা তাঁর অসীম ক্ষমতা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে ও নির্দেশনা দিতে পারেন। (ইয়োব ৩৮:৩২; যিশাইয় ৪০:২৬) তা হলে, মানুষের সম্বন্ধে কী বলা যায় যাদেরকে স্বাধীন ইচ্ছা, নীতিবোধ, যুক্তি করার এবং আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো বোঝার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে? আমাদের নির্মাতা আমাদেরকে কীভাবে পরিচালনা দেওয়া বেছে নিয়েছেন? তিনি তাঁর সিদ্ধ ব্যবস্থা এবং উন্নত নীতিগুলো ও সেইসঙ্গে আমাদের উত্তম-প্রশিক্ষিত বিবেক দিয়ে প্রেমের সঙ্গে আমাদেরকে পরিচালনা দেন।—২ শমূয়েল ২২:৩১; রোমীয় ২:১৪, ১৫.
২, ৩. কোন্ ধরনের বাধ্যতায় ঈশ্বর আনন্দ খুঁজে পান?
২ যে-বুদ্ধিবিশিষ্ট প্রাণীরা ঈশ্বরের বাধ্য হওয়াকে বেছে নেন, তাদের মধ্যে ঈশ্বর আনন্দ খুঁজে পান। (হিতোপদেশ ২৭:১১) বোধহীন রোবটের মতো অন্ধভাবে বশ্যতাস্বীকার করার জন্য তৈরি না করে যিহোবা আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা দিয়েছেন, যাতে সঠিক বিষয়ে আমরা জেনেশুনে সিদ্ধান্ত নিতে পারি।—ইব্রীয় ৫:১৪.
৩ যীশু নিখুঁতভাবে তাঁর পিতাকে প্রকাশ করেছিলেন, তিনি তাঁর শিষ্যদেরকে বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে যাহা কিছু আজ্ঞা দিতেছি, তাহা যদি পালন কর, তবে তোমরা আমার বন্ধু। আমি তোমাদিগকে আর দাস বলি না।” (যোহন ১৫:১৪, ১৫) প্রাচীন কালে, একজন দাসের বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা খুব কমই ছিল, তাকে সবসময় তার প্রভুর আদেশগুলো মেনে চলতে হতো। অন্যদিকে, হৃদয়কে স্পর্শ করে এমন গুণগুলো প্রকাশ করার মাধ্যমেই বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। আমরা যিহোবার বন্ধু হয়ে উঠতে পারি। (যাকোব ২:২৩) পারস্পরিক প্রেমের মাধ্যমে এই বন্ধুত্ব মজবুত হয়। ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতা ও প্রেমকে পরস্পরের সঙ্গে জড়িত করে যীশু বলেছিলেন: “কেহ যদি আমাকে প্রেম করে, তবে সে আমার বাক্য পালন করিবে; আর আমার পিতা তাহাকে প্রেম করিবেন।” (যোহন ১৪:২৩) এই কারণে এবং আমাদেরকে নিরাপদে পরিচালনা দিতে যিহোবা তাঁর নীতিগুলো মেনে জীবনযাপন করার জন্য আমাদের আমন্ত্রণ জানান।
ঈশ্বরের নীতিগুলো
৪. নীতিগুলো আসলে কী, তা আপনি কীভাবে বর্ণনা করবেন?
৪ নীতিগুলো আসলে কী? নীতিকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, “সাধারণ অথবা মূল সত্য: ব্যাপক ও মৌলিক আইন, মতবাদ অথবা অনুমান, যেটার ওপর ভিত্তি করে অন্যান্য আইন ও মতবাদগুলো গড়ে উঠেছে বা যেখান থেকে অন্যান্য আইন ও মতবাদ উদ্ভূত হয়েছে।” (ওয়েবস্টারস থার্ড নিউ ইন্টারন্যাশনাল ডিকশনারি) মন দিয়ে বাইবেল অধ্যয়ন করা প্রকাশ করে যে, আমাদের স্বর্গীয় পিতা মৌলিক নীতিগুলো জোগান, যা জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতি ও দিককে জড়িত করে। আমাদের চিরকালীন উপকারের প্রতি দৃষ্টি রেখে তিনি তা জুগিয়েছেন। জ্ঞানী রাজা শলোমন যা লিখেছিলেন, এটা তার সঙ্গে মিল রাখে: “বৎস, শুন, আমার কথা গ্রহণ কর, তাহাতে তোমার জীবনের বৎসর বহুসংখ্যক হইবে। আমি তোমাকে প্রজ্ঞার পথ দেখাইয়াছি, তোমাকে সরলতার মার্গে চালাইয়াছি।” (হিতোপদেশ ৪:১০, ১১) যিহোবা যে-মূল নীতিগুলো জুগিয়েছেন সেগুলো তাঁর এবং সহ মানবদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক, আমাদের উপাসনা ও আমাদের রোজকার জীবনের ওপর ছাপ ফেলে। (গীতসংহিতা ১:১) আসুন আমরা এই মৌলিক নীতিগুলোর কয়েকটা বিবেচনা করে দেখি।
৫. কিছু মৌলিক নীতির উদাহরণ দিন।
৫ যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বিষয়ে যীশু বলেছিলেন: “তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে [“যিহোবাকে,” NW] প্রেম করিবে।” (মথি ২২:৩৭) এ ছাড়া ঈশ্বর সহ মানবদের প্রতি আমাদের আচরণ সংক্রান্ত নীতিগুলো জোগান, যেমন সুবর্ণ নিয়ম: “অতএব সর্ব্ববিষয়ে তোমরা যাহা যাহা ইচ্ছা কর যে, লোকে তোমাদের প্রতি করে, তোমরাও তাহাদের প্রতি সেইরূপ করিও।” (মথি ৭:১২; গালাতীয় ৬:১০; তীত ৩:২) উপাসনার বিষয়ে আমাদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে: “আইস, আমরা পরস্পর মনোযোগ করি, যেন প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করিয়া তুলিতে পারি; এবং আপনারা সমাজে সভাস্থ হওয়া পরিত্যাগ না করি।” (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) আমাদের জীবনের রোজকার বিষয়গুলো সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল বলেন: “তোমরা ভোজন, কি পান, কি যাহা কিছু কর, সকলই ঈশ্বরের গৌরবার্থে কর।” (১ করিন্থীয় ১০:৩১) ঈশ্বরের বাক্যে এইরকম আরও অগণিত নীতি রয়েছে।
৬. নীতিগুলো কীভাবে ব্যবস্থার চেয়ে আলাদা?
৬ নীতিগুলো হল জীবন্ত, মূল সত্য আর বিজ্ঞ খ্রীষ্টানরা সেগুলোকে ভালবাসতে শেখেন। যিহোবা শলোমনকে এই কথাগুলো লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন: “আমার বাক্যে অবধান কর, আমার কথায় কর্ণপাত কর। তাহা তোমার দৃষ্টির বহির্ভূত না হউক, তোমার হৃদয়মধ্যে তাহা রাখ। কেননা যাহারা তাহা পায়, তাহাদের পক্ষে তাহা জীবন, তাহা তাহাদের সর্ব্বাঙ্গের স্বাস্থ্যস্বরূপ।” (হিতোপদেশ ৪:২০-২২) নীতিগুলো কীভাবে ব্যবস্থার চেয়ে আলাদা? ব্যবস্থার ভিত্তিই হল নীতি। নিয়মগুলো নির্দিষ্ট হলেও কোন বিশেষ সময় বা পরিস্থিতির প্রতি প্রযোজ্য হতে পারে কিন্তু নীতিগুলো সব সময়ের জন্য প্রযোজ্য। (গীতসংহিতা ১১৯:১১১) ঈশ্বরের নীতিগুলো কখনও সেকেলে বা নির্মূল হয়ে যায় না। ভাববাদী যিশাইয়ের অনুপ্রাণিত বাক্যগুলো সত্য প্রমাণিত হয়: “তৃণ শুষ্ক হইয়া যায়, পুষ্প ম্লান হইয়া পড়ে, কিন্তু আমাদের ঈশ্বরের বাক্য চিরকাল থাকিবে।”—যিশাইয় ৪০:৮.
নীতিগুলোর ওপর ভিত্তি করে চিন্তা ও কাজ করুন
৭. ঈশ্বরের বাক্য কীভাবে আমাদেরকে নীতিগুলোর ওপর ভিত্তি করে চিন্তা ও কাজ করতে উৎসাহ দেয়?
৭ “আমাদের ঈশ্বরের বাক্য” বারবার আমাদেরকে নীতিগুলোর ওপর ভিত্তি করে চিন্তা ও কাজ করতে উৎসাহ দেয়। যীশুকে যখন ব্যবস্থার সারাংশ করতে বলা হয়েছিল, তখন তিনি সংক্ষেপে দুটো কথা বলেছিলেন—একটা যিহোবাকে ভালবাসার ওপর জোর দেয় আর অন্যটা প্রতিবেশীকে ভালবাসার বিষয় তুলে ধরে। (মথি ২২:৩৭-৪০) তা করে যীশু মোশির ব্যবস্থার মৌলিক বিষয়ের সংক্ষিপ্ত সারাংশ আংশিকভাবে উল্লেখ করেছিলেন, যা দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪, ৫ পদে বলা আছে: “আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু একই সদাপ্রভু; আর তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ, ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করিবে।” স্পষ্টতই, লেবীয় পুস্তক ১৯:১৮ পদে ঈশ্বরের নির্দেশনা যীশুর মনে ছিল। উপদেশক বইয়ের স্পষ্ট, সংক্ষিপ্ত এবং জোরালো উপসংহারে রাজা শলোমনের কথাগুলো ঈশ্বরের অনেক আইনের সারসংক্ষেপকে তুলে ধরে: “আইস, আমরা সমস্ত বিষয়ের উপসংহার শুনি; ঈশ্বরকে ভয় কর, ও তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন কর, কেননা ইহাই সকল মনুষ্যের কর্ত্তব্য। কারণ ঈশ্বর সমস্ত কর্ম্ম এবং ভাল হউক, কি মন্দ হউক, সমস্ত গুপ্ত বিষয়, বিচারে আনিবেন।”—উপদেশক ১২:১৩, ১৪; মীখা ৬:৮.
৮. বাইবেলের মৌলিক নীতিগুলোকে পুরোপুরি উপলব্ধি করা কেন এক সুরক্ষা?
৮ এই মৌলিক নীতিগুলোকে পুরোপুরি উপলব্ধি করা আমাদেরকে আরও নির্দিষ্ট নির্দেশগুলোকে বুঝতে ও কাজে লাগাতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও, আমরা যদি মৌলিক নীতিগুলোকে পুরোপুরি বুঝতে ও মেনে নিতে না পারি, তা হলে আমরা হয়তো বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে পারব না এবং আমাদের বিশ্বাস হয়তো সহজেই নড়বড়ে হয়ে যাবে। (ইফিষীয় ৪:১৪) এই নীতিগুলোকে যদি আমাদের মন ও হৃদয়ে গেঁথে রাখি, তা হলে আমরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সেগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য তৈরি থাকব। আমরা যখন বুঝে সেগুলোকে কাজে লাগাব, তখন সেগুলো সফলতা নিয়ে আসবে।—যিহোশূয়ের পুস্তক ১:৮; হিতোপদেশ ৪:১-৯.
৯. বাইবেলের নীতিগুলো বোঝা ও সেগুলোকে কাজে লাগানো সবসময় সহজ নয় কেন?
৯ বাইবেলের নীতিগুলোকে বোঝা ও সেগুলোকে কাজে লাগানো, কিছু ব্যবস্থা মেনে চলার মতো এত সহজ নয়। অসিদ্ধ মানুষ হওয়ায় আমরা হয়তো নীতিগুলোর ওপর যুক্তি করে সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করা এড়িয়ে চলতে পারি। কোন সিদ্ধান্তের বা উভয়সংকটের মুখোমুখি হলে আমরা হয়তো নিয়মকেই সুবিধাজনক বলে বেছে নিতে পারি। মাঝে মাঝে আমরা হয়তো কোন পরিপক্ব খ্রীষ্টানের, হতে পারে মণ্ডলীর একজন প্রাচীনের কাছে নির্দেশনা খুঁজতে পারি এই আশা করে যে, তিনি নির্দিষ্ট করে কোন নিয়মের কথা বলবেন, যেটা আমাদের পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য। কিন্তু, বাইবেল অথবা বাইবেল-ভিত্তিক প্রকাশনাগুলোতে হয়তো নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই আর এমনকি আমাদেরকে কোন নিয়ম দেওয়া হলেও সেটা হয়তো সবসময় ও পরিস্থিতির জন্য কার্যকারী নির্দেশনা না-ও হতে পারে। আপনার হয়তো মনে আছে একজন লোক যীশুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “হে গুরু, আমার ভ্রাতাকে বলুন, যেন আমার সহিত পৈতৃক ধন বিভাগ করে।” ভাইবোনদের মধ্যে কলহ মেটানোর জন্য সঙ্গে সঙ্গে একটা আইন না দিয়ে যীশু তাকে আরও সর্বজনীন একটা নীতির বিষয় জানিয়েছিলেন: “সাবধান, সর্ব্বপ্রকার লোভ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা করিও।” এভাবে যীশু একটা নির্দেশনা জুগিয়েছিলেন, যেটা তখন ও এমনকি আজও উপকারী।—লূক ১২:১৩-১৫.
১০. কীভাবে নীতিগুলোর সঙ্গে মিল রেখে আচরণ করা আমাদের হৃদয়ের উদ্দেশ্যকে প্রকাশ করে?
১০ আপনি হয়তো এমন ব্যক্তিদের দেখেছেন, যারা ইচ্ছে না হলেও কেবল শাস্তির ভয়ে ব্যবস্থার প্রতি বাধ্য থাকে। নীতিগুলোর প্রতি সম্মান এইধরনের মনোভাবকে দূর করে দেয়। যারা নীতিগুলোর দ্বারা পরিচালিত হন, সেগুলোর বৈশিষ্ট্যই তাদেরকে সেগুলো অন্তর থেকে মেনে চলতে পরিচালিত করে। আসলে, বেশির ভাগ নীতির বেলায়ই দেখা যায় যে সেগুলো মেনে না চলার জন্য সঙ্গে সঙ্গেই কোন শান্তি আসে না। এটা আমাদেরকে দেখানোর সুযোগ করে দেয় যে, আমরা কেন যিহোবার বাধ্য হই ও আমাদের অন্তরে কী রয়েছে। আমরা যোষেফের উদাহরণ দেখতে পাই, যিনি পোটীফরের স্ত্রীর অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি হননি। যদিও যিহোবা তখন পর্যন্ত ব্যভিচারের বিরুদ্ধে কোন লিখিত আইন দেননি এবং বলেননি যে অন্য পুরুষের স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করলে ঈশ্বর কী শাস্তি দেবেন, তবুও যোষেফ ঈশ্বরের দেওয়া বৈবাহিক বিশ্বস্ততার নীতিগুলো সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। (আদিপুস্তক ২:২৪; ১২:১৮-২০) তার প্রতিক্রিয়া থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, এই নীতিগুলো তার ওপর খুব জোরালো ছাপ ফেলেছিল: “আমি কিরূপে এই মহা দুষ্কর্ম্ম করিতে ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করিতে পারি?”—আদিপুস্তক ৩৯:৯.
১১. কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে খ্রীষ্টানরা যিহোবার নীতিগুলো দ্বারা পরিচালিত হতে চান?
১১ আজকে, খ্রীষ্টানরা ব্যক্তিগত ব্যাপারে যেমন বন্ধুবান্ধব, বিনোদন, গানবাজনা এবং বইপত্র বাছাই করার ক্ষেত্রে যিহোবার নীতিগুলো দ্বারা পরিচালিত হতে চান। (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩; ফিলিপীয় ৪:৮) আমাদের জ্ঞান, বোঝার ক্ষমতা এবং যিহোবা ও তাঁর মানগুলোর বিষয়ে উপলব্ধি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা যে-কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হই ও এমনকি অত্যন্ত ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলোতেও ঈশ্বরের নীতিগুলোকে কাজে লাগাতে আমাদের বিবেক ও নীতিবোধ আমাদেরকে সাহায্য করবে। বাইবেলের নীতিগুলোর দ্বারা পরিচালিত হয়ে আমরা ঈশ্বরের ব্যবস্থাগুলোতে ফাঁক খোঁজার চেষ্টা করব না। কিংবা যারা কোন একটা ব্যবস্থাকে লঙ্ঘন না করেও কতদূর পর্যন্ত যাওয়া যায় তা দেখার চেষ্টা করে, তাদেরকে আমরা অনুকরণ করব না। আমরা বুঝতে পারি যে, এইরকম চিন্তাভাবনা মানে নিজে নিজে পরাজিত হওয়া আর তা ক্ষতিকর।—যাকোব ১:২২-২৫.
১২. ঈশ্বরের নীতিগুলোর দ্বারা পরিচালিত হওয়ার মূল বিষয়টা কী?
১২ পরিপক্ব খ্রীষ্টানরা বুঝতে পারেন যে, ঈশ্বরের নীতিগুলো মেনে চলার জন্য জরুরি বিষয় হল কোন একটা ব্যাপারে যিহোবা কীরকম মনে করেন, তা জানার চেষ্টা করা। গীতরচক পরামর্শ দেন, “হে সদাপ্রভু-প্রেমিকগণ, দুষ্টতাকে ঘৃণা কর।” (গীতসংহিতা ৯৭:১০) ঈশ্বর মন্দ বলেন এমন কয়েকটা বিষয়কে তালিকাবদ্ধ করে হিতোপদেশ ৬:১৬-১৯ পদ বলে: “এই ছয় বস্তু সদাপ্রভুর ঘৃণিত, এমন কি, সপ্ত বস্তু তাঁহার প্রাণের ঘৃণাস্পদ; উদ্ধত দৃষ্টি, মিথ্যাবাদী জিহ্বা, নির্দ্দোষের রক্তপাতকারী হস্ত, দুষ্ট সঙ্কল্পকারী হৃদয়, দুষ্কর্ম্ম করিতে দ্রুতগামী চরণ, যে মিথ্যাসাক্ষী অসত্য কথা কহে, ও যে ভ্রাতৃগণের মধ্যে বিবাদ খুলিয়া দেয়।” আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে এমন মৌলিক বিষয়গুলো সম্বন্ধে যিহোবা যেমন মনে করেন, সেইরকম মনে করার ইচ্ছা যখন আসে, তখন সেই নীতিগুলো মেনে চলা আমাদের এক অভ্যাসে পরিণত হয়।—যিরমিয় ২২:১৬.
ভাল উদ্দেশ্য থাকা দরকার
১৩. পাহাড়ের ওপর উপদেশ দেওয়ার সময় যীশু কোন্ ধরনের চিন্তার ওপর জোর দিয়েছিলেন?
১৩ নীতিগুলোকে জানা ও সেগুলো কাজে লাগানো আমাদেরকে অবাস্তব, লোক দেখানো উপাসনার ফাঁদ থেকে রক্ষা করে। নীতিগুলো মেনে চলা এবং কড়াকড়িভাবে নিয়ম মানার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে। যীশু পাহাড়ের ওপর উপদেশ দেওয়ার সময় এটা স্পষ্টভাবে দেখিয়েছিলেন। (মথি ৫:১৭-৪৮) মনে করে দেখুন যে, যীশুর শ্রোতারা যিহুদি ছিল, তাই তাদের আচরণ মোশির ব্যবস্থার দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু, বাস্তবে ব্যবস্থার প্রতি তাদের এক বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। তারা ব্যবস্থার মূল নীতি মেনে না চলে বরং অক্ষরে অক্ষরে ব্যবস্থা মানার ওপর জোর দিয়েছিল। আর তারা তাদের পরম্পরাগত রীতিনীতির ওপর জোর দিয়েছিল, সেগুলোকে ঈশ্বরের শিক্ষার ওপরে রেখেছিল। (মথি ১২:৯-১২; ১৫:১-৯) ফলে, সাধারণ মানুষকে কোন কিছুর পিছনে যে-নীতি রয়েছে, তা চিন্তা করতে শেখানো হয়নি।
১৪. কীভাবে যীশু তাঁর শ্রোতাদেরকে নীতিগুলোর ওপর ভিত্তি করে চিন্তা করতে সাহায্য করেছিলেন?
১৪ অন্যদিকে, যীশু পাহাড়ের ওপর উপদেশ দেওয়ার সময় নৈতিকতার পাঁচটা ক্ষেত্রে নীতির ওপর জোর দিয়েছিলেন: রাগ, বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ, প্রতিজ্ঞা, প্রতিশোধ এবং প্রেম করা ও ঘৃণা। প্রতিটা ক্ষেত্রে যীশু নীতি মেনে চলার উপকারিতা সম্বন্ধে দেখিয়েছিলেন। এভাবে যীশু তাঁর অনুসারীদের জন্য নৈতিক মানকে তুলে ধরেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ব্যভিচারের বিষয়ে তিনি আমাদেরকে একটা নীতি দিয়েছিলেন, যা শুধু আমাদের কাজগুলোকে নয় কিন্তু সেইসঙ্গে আমাদের চিন্তা ও আকাঙ্ক্ষাগুলোকেও রক্ষা করে: “যে কেহ কোন স্ত্রীলোকের প্রতি কামভাবে দৃষ্টিপাত করে, সে তখনই মনে মনে তাহার সহিত ব্যভিচার করিল।”—মথি ৫:২৮.
১৫. কড়াকড়িভাবে আইন মেনে চলার প্রবণতাকে আমরা কীভাবে এড়াতে পারি?
১৫ এই উদাহরণ দেখায় যে, আমাদের কখনও যিহোবার নীতিগুলোর উদ্দেশ্য ও মূল বিষয় থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়া উচিত নয়। বাহ্যিক দিক দিয়ে নৈতিক রীতিনীতিগুলো পালন করে আমরা নিশ্চয়ই ঈশ্বরের অনুগ্রহ পেতে চাইব না। যীশু, ঈশ্বরের করুণা ও প্রেমের কথা বলে এইরকম মনোভাবের মধ্যে প্রতারণার বিষয়টাকে প্রকাশ করেছিলেন। (মথি ১২:৭; লূক ৬:১-১১) বাইবেলের নীতিগুলোকে মেনে চলে আমরা কী করব বা কী করব না, সেই সম্বন্ধে এক ব্যাপক ও কড়াকড়ি নিয়ম মেনে চলা (বা অন্যদের কাছ থেকে এমনটা দাবি করা) এড়িয়ে চলব, যা বাইবেলের শিক্ষাগুলোতে নেই। আমরা উপাসনার বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের চেয়ে ঈশ্বরের প্রতি প্রেম ও বাধ্যতার নীতিগুলোর বিষয়ে বেশি চিন্তিত হব।—লূক ১১:৪২.
ভাল ফলগুলো
১৬. বাইবেলের কিছু নির্দেশের পিছনে যে-নীতিগুলো আছে সেগুলোর উদাহরণ দিন।
১৬ আমরা যখন যিহোবার বাধ্য হওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করি, তখন আমাদের এটা বোঝা খুবই জরুরি যে, তাঁর ব্যবস্থাগুলো মৌলিক নীতিগুলোর ওপর ভিত্তি করে তৈরি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, খ্রীষ্টানদের প্রতিমাপূজা, যৌন অনৈতিকতা এবং রক্তের অপব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত। (প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯) এই বিষয়গুলোতে খ্রীষ্টানদের পদক্ষেপ নেওয়ার মূলে কী রয়েছে? ঈশ্বর আমাদের ঐকান্তিক ভক্তি পাওয়ার যোগ্য; আমাদের সাথির প্রতি আমাদের বিশ্বস্ত হওয়া উচিত; এবং যিহোবা হলেন আমাদের জীবনদাতা। (আদিপুস্তক ২:২৪; যাত্রাপুস্তক ২০:৫; গীতসংহিতা ৩৬:৯) এই মূলনীতিগুলোকে বোঝা এই বিষয়টাকে গ্রহণ করা ও এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ব্যবস্থাগুলোকে মেনে চলাকে সহজ করে দেয়।
১৭. বাইবেলের নীতিগুলো উপলব্ধি করে ও কাজে লাগিয়ে কী কী ভাল ফল পাওয়া যায়?
১৭ মূল নীতিগুলো উপলব্ধি করে ও সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে আমরা বুঝতে পারি যে, সেগুলো আমাদের উপকারের জন্য দেওয়া হয়েছে। ঈশ্বরের লোকেরা যে-আধ্যাত্মিক আশীর্বাদগুলো উপভোগ করেন, সেগুলো প্রায়ই আমাদের প্রকৃত উপকার করে থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যারা ধূমপান করে না, নৈতিক দিক দিয়ে শুদ্ধ জীবনযাপন করে এবং যারা রক্তের পবিত্রতাকে সম্মান করে, তারা কিছু কিছু রোগে ভোগা এড়িয়ে চলতে পারে। একইভাবে, বাইবেলের সত্যের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করা হয়তো আমাদেরকে অর্থনৈতিক, সামাজিক বা পারিবারিক দিক দিয়ে উপকার করতে পারে। এইরকম যে-কোন প্রকৃত উপকারগুলো যিহোবার মানগুলোর মূল্যকে প্রমাণ করে যে, এগুলো সত্যিই ব্যবহারিক। কিন্তু এই ব্যবহারিক সুবিধাগুলো পাওয়াই ঈশ্বরের নীতিগুলোকে মেনে চলার প্রধান কারণ নয়। সত্য খ্রীষ্টানরা যিহোবার বাধ্য হন কারণ তারা তাঁকে ভালবাসেন, তিনি তাদের উপাসনা পাওয়ার যোগ্য ও তা করা একেবারে সঠিক।—প্রকাশিত বাক্য ৪:১১.
১৮. যদি আমরা সফল খ্রীষ্টান হতে চাই, তা হলে কোন্ বিষয়ের দ্বারা আমাদের জীবনকে পরিচালিত করা উচিত?
১৮ বাইবেলের নীতিগুলো দিয়ে আমাদের জীবনকে পরিচালিত করতে দেওয়া আরও ভাল এক জীবনের দিকে নিয়ে যায়, যেটা অন্যদেরকে ঈশ্বরের পথে আকৃষ্ট করে। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল আমাদের জীবনযাপন যিহোবার সম্মান নিয়ে আসে। আমরা বুঝতে পারি যে, যিহোবা সত্যিই এক প্রেমময় ঈশ্বর, যিনি আমাদের সর্বোত্তম মঙ্গল চান। যখন আমরা বাইবেলের নীতিগুলোর সঙ্গে মিল রেখে সিদ্ধান্ত নিই এবং যিহোবা কীভাবে আমাদেরকে আশীর্বাদ করেন তা দেখি, তখন আমরা তাঁর আরও কাছে আসি। হ্যাঁ, সেইসঙ্গে আমরা আমাদের স্বর্গস্থ পিতার সঙ্গে এক প্রেমপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলি।
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• নীতি বলতে আসলে কী বোঝায়?
• ব্যবস্থা থেকে নীতি কীভাবে আলাদা?
• কেন নীতিগুলোর ওপর ভিত্তি করে চিন্তা ও কাজ করা আমাদের জন্য উপকারজনক?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২০ পৃষ্ঠার বাক্স]
উইলসন নামে ঘানার একজন খ্রীষ্টানকে বলা হয় যে, কিছুদিনের মধ্যেই তাকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হবে। তার চাকরির শেষ দিনে তাকে ওই কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টরের গাড়ি ধোয়ার কাজ দেওয়া হয়। উইলসন যখন গাড়িতে কিছু টাকা পান, তখন তার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তাকে বলেছিলেন যে, ঈশ্বরই তার জন্য এই টাকাটা পাঠিয়েছেন কারণ সেদিনই উইলসনের চাকরি চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, সততা সম্বন্ধে বাইবেলের নীতিগুলোকে কাজে লাগানোর ফলে উইলসন টাকাটা ডিরেক্টরকে ফেরত দিয়ে দেন। কিছুটা অবাক ও মুগ্ধ হয়ে ডিরেক্টর সঙ্গে সঙ্গে উইলসনকে শুধু চাকরিতে স্থায়ীভাবে থাকার প্রস্তাবই দেননি কিন্তু সেইসঙ্গে তাকে কোম্পানির একজন সিনিয়র কর্মীও করেছিলেন।—ইফিষীয় ৪:২৮.
[২১ পৃষ্ঠার বাক্স]
রোকিয়া আলবানিয়ার একজন মহিলা, যার বয়স ৬০ এর কোঠায়। পারিবারিক কলহের জন্য তিনি ১৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে তার দাদার সঙ্গে কথা বলেননি। রোকিয়া যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেন এবং জানতে পারেন যে, ঝগড়া মনে পুষে না রেখে সত্য খ্রীষ্টানদেরকে অন্যদের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখতে হবে। তিনি সারারাত প্রার্থনা করেন এবং তার মনের কষ্ট নিয়ে তিনি তার দাদার বাড়িতে যান। তার ভাইঝি দরজা খুলে দেয়। রোকিয়াকে দেখে অবাক হয়ে সে জিজ্ঞেস করে: “কে মারা গেছে? তুমি এখানে কী করছ?” রোকিয়া বলেন যে, তিনি তার দাদাকে দেখতে চান। তিনি শান্তভাবে ব্যাখ্যা করেন যে, বাইবেলের নীতিগুলো শেখা ও যিহোবার সম্বন্ধে জানা তাকে তার দাদার সঙ্গে শান্তি স্থাপন করতে পরিচালিত করেছে। অনেক চোখের জল ফেলে ও আলিঙ্গনের মাধ্যমে তারা এই বিশেষ পুনর্মিলনকে উদ্যাপন করেছিলেন!—রোমীয় ১২:১৭, ১৮.
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
“তিনি বিস্তর লোক দেখিয়া পর্ব্বতে উঠিলেন; আর তিনি বসিলে পর তাঁহার শিষ্যেরা তাঁহার নিকটে আসিলেন। তখন তিনি মুখ খুলিয়া তাঁহাদিগকে . . . উপদেশ দিতে লাগিলেন।”—মথি ৫:১, ২