সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

খ্রিস্টীয় পরিবারগুলো—যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করুন!

খ্রিস্টীয় পরিবারগুলো—যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করুন!

খ্রিস্টীয় পরিবারগুলো—যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করুন!

“খ্রীষ্টও . . . তোমাদের জন্য এক আদর্শ রাখিয়া গিয়াছেন, যেন তোমরা তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন কর।”—১ পিতর ২:২১.

১. (ক) সৃষ্টির কাজে ঈশ্বরের পুত্রের কোন ভূমিকা ছিল? (খ) মানবজাতি সম্বন্ধে যিশু কেমন বোধ করেন?

 ঈশ্বর যখন আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী নির্মাণ করেছিলেন, তখন তাঁর প্রথমজাত পুত্র “কার্য্যকারী [‘দক্ষ কর্মী,’ বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন]” হিসেবে তাঁর পাশে ছিলেন। এ ছাড়া, ঈশ্বরের পুত্র সেই সময়েও তাঁর পিতার সঙ্গে সহযোগিতা করেছিলেন, যখন যিহোবা এই পৃথিবীতে ব্যাপক বৈচিত্র্যময় পশুপাখি ও উদ্ভিদের নকশা ও সেগুলো সৃষ্টি করেছিলেন এবং যখন তিনি সেই পরমদেশকে প্রস্তুত করেছিলেন, যা যিহোবার প্রতিমূর্তিতে ও সাদৃশ্যে নির্মিত প্রাণীদের বাসগৃহ হবে। মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের পুত্রের প্রচুর ভালোবাসা ছিল, যিনি পরে যিশু নামে পরিচিত হয়েছিলেন। “মনুষ্য-সন্তানগণে [তাঁহার] আনন্দ হইত।”—হিতো. ৮:২৭-৩১; আদি. ১:২৬, ২৭.

২. (ক) অসিদ্ধ মানবজাতির জন্য যিহোবা কী জুগিয়েছেন? (খ) জীবনের একটা ক্ষেত্র কী, যেখানে বাইবেল নির্দেশনা জোগায়?

প্রথম মানব যুগল পাপ করার পর, পাপী মানবজাতিকে মুক্ত করা যিহোবার উদ্দেশ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছিল। যিহোবা সেই মুক্তি সম্ভবপর করার জন্য খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান জুগিয়েছিলেন। (রোমীয় ৫:৮) অধিকন্তু, যিহোবা তাঁর বাক্য বাইবেলও জুগিয়েছেন, যেটি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত অসিদ্ধতার সঙ্গে যেভাবে সবচেয়ে সফল উপায়ে মোকাবিলা করা যায়, সেই বিষয়ে মানুষকে নির্দেশনা দেয়। (গীত. ১১৯:১০৫) তাঁর বাক্যে যিহোবা শক্তিশালী ও সুখী পরিবার বজায় রাখার ক্ষেত্রে মানুষকে সাহায্য করার জন্য নির্দেশনা জুগিয়েছেন। বিয়ে সম্বন্ধে আদিপুস্তক বই বলে যে, মনুষ্য “আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং তাহারা একাঙ্গ হইবে।”—আদি. ২:২৪.

৩. (ক) বিয়ে সম্বন্ধে যিশু কী শিক্ষা দিয়েছিলেন? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?

যিশু তাঁর পার্থিব পরিচর্যার সময় জোর দিয়ে বলেছিলেন, বিয়ের উদ্দেশ্য ছিল যে তা স্থায়ী হবে। তিনি যে-নীতিগুলো সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিলেন, সেগুলো কাজে লাগানো পরিবারের সদস্যদেরকে সেই মনোভাব ও আচরণ এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে, যেগুলো তাদের বিয়েকে অথবা তাদের পরিবারের সুখকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছিল। (মথি ৫:২৭-৩৭; ৭:১২) এই প্রবন্ধ আলোচনা করবে যে, কীভাবে যিশুর শিক্ষাগুলো এবং পৃথিবীতে থাকাকালীন তাঁর দ্বারা স্থাপিত উদাহরণ স্বামী, স্ত্রী, বাবা-মা এবং সন্তানদেরকে সুখী ও পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন উপভোগ করতে সাহায্য করে।

একজন খ্রিস্টান স্বামী যেভাবে তার স্ত্রীকে সমাদর করেন

৪. যিশুর ভূমিকা ও খ্রিস্টান স্বামীদের ভূমিকার মধ্যে কোন সাদৃশ্য রয়েছে?

ঈশ্বর স্বামীকে পরিবারের মস্তক হিসেবে নিযুক্ত করেছেন, ঠিক যেমন যিশু হলেন মণ্ডলীর মস্তক। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “স্বামী স্ত্রীর মস্তক, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর মস্তক; তিনি আবার দেহের ত্রাণকর্ত্তা; স্বামীরা, তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে সেইরূপ প্রেম কর, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীকে প্রেম করিলেন, আর তাহার নিমিত্ত আপনাকে প্রদান করিলেন।” (ইফি. ৫:২৩, ২৫) বস্তুতপক্ষে, খ্রিস্টান পুরুষদেরকে তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হবে, সেই বিষয়ে তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে যিশুর আচরণ একটা আদর্শ স্থাপন করে। আসুন, আমরা কিছু উপায় বিবেচনা করি, যেখানে যিশু ঈশ্বরদত্ত কর্তৃত্বকে ব্যবহার করেছিলেন।

৫. যিশু তাঁর শিষ্যদের ওপর তাঁর কর্তৃত্বকে কীভাবে ব্যবহার করেছিলেন?

যিশু ছিলেন “মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত।” (মথি ১১:২৯) এ ছাড়া, তিনি প্রয়োজনের সময় চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতেন। তিনি কখনো তাঁর দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেননি। (মার্ক ৬:৩৪; যোহন ২:১৪-১৭) তিনি তাঁর শিষ্যদেরকে সদয়ভাবে আর এমনকী প্রয়োজনের সময় বার বার পরামর্শ দিয়েছিলেন। (মথি ২০:২১-২৮; মার্ক ৯:৩৩-৩৭; লূক ২২:২৪-২৭) তা সত্ত্বেও, যিশু তাদেরকে ভর্ৎসনা করেননি বা ছোটো করেননি অথবা তাদেরকে এইরকম মনে করতে পরিচালিত করেননি যে, তাদেরকে তিনি ভালোবাসেন না বা তিনি তাদেরকে যে-দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তারা সেটা পালন করার যোগ্য নয়। এর পরিবর্তে, তিনি তাঁর শিষ্যদের প্রশংসা করেছিলেন এবং তাদেরকে উৎসাহ দিয়েছিলেন। (লূক ১০:১৭-২১) তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, যিশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে প্রেমময় ও সমবেদনামূলক আচরণ করার মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে সম্মান অর্জন করেছিলেন!

৬. (ক) যিশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেছেন, তা থেকে একজন স্বামী কী শিখতে পারেন? (খ) স্বামীদেরকে পিতর কোন উৎসাহ দিয়েছেন?

যিশুর উদাহরণ স্বামীদের এই শিক্ষা দেয় যে, খ্রিস্টীয় মস্তকপদ কঠোর প্রভুত্বপূর্ণ কোনো পদ নয়। বরং, এটা সম্মান ও আত্মত্যাগমূলক প্রেমের দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। প্রেরিত পিতর, স্ত্রীদের সঙ্গে ‘তদ্রূপ বাস করিবার’ এবং ‘তাহাদিগকে সমাদর করিবার’ মাধ্যমে যিশুর প্রেমময় উপায়গুলো অনুকরণ করার জন্য স্বামীদেরকে উৎসাহিত করেছিলেন। (পড়ুন, ১ পিতর ৩:৭.) তাহলে, কীভাবে একজন স্বামী তার কর্তৃত্বকে ব্যবহার করতে এবং একইসময়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে এমনভাবে আচরণ করতে পারেন, যিনি সমাদর পাওয়ার যোগ্য?

৭. কোন উপায়ে একজন স্বামী তার স্ত্রীকে সমাদর করেন? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

একটা যে-উপায়ে একজন স্বামী তার স্ত্রীকে সমাদর করতে পারেন, তা হল পরিবারকে প্রভাবিত করে এমন সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার আগে স্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি ও অনুভূতিগুলো মনোযোগের সঙ্গে বিবেচনা করার মাধ্যমে। হতে পারে বাড়ি বদলি করার অথবা চাকরি পরিবর্তন করার বা রোজকার বিষয়গুলো, যেমন কোথায় ছুটি কাটানো যায় বা জীবনযাত্রার খরচের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য কীভাবে পরিবারের খরচে রদবদল করা যায়, সেই ক্ষেত্রে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যেহেতু এই ক্ষেত্রেগুলোতে পরিবারও প্রভাবিত হবে, তাই স্ত্রীর মতামত বিবেচনা করা স্বামীর জন্য উপকারজনক ও সদয় কাজ হবে কারণ এটা করা তাকে হয়তো এক ভারসাম্যপূর্ণ এবং আরও বিবেচনাপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে আর এর ফলে স্ত্রীর পক্ষেও স্বামীকে সমর্থন করা আরও সহজ হবে। (হিতো. ১৫:২২) যে-খ্রিস্টান স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের সমাদর করে, তারা কেবল তাদের স্ত্রীদের ভালোবাসা ও সম্মানই অর্জন করে না কিন্তু এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অর্থাৎ যিহোবার অনুমোদনও লাভ করে।—ইফি. ৫:২৮, ২৯.

একজন স্ত্রী যেভাবে তার স্বামীর প্রতি গভীর সম্মান দেখান

৮. কেন হবার উদাহরণ এড়িয়ে চলতে হবে?

যিশুর মধ্যে, খ্রিস্টান স্ত্রীদের জন্য কর্তৃত্বের প্রতি বশীভূত হওয়ার এক নিখুঁত আদর্শ রয়েছে। কর্তৃত্বের প্রতি যিশুর দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রথম মানব স্ত্রীর দ্বারা প্রদর্শিত মনোভাবের মধ্যে কত পার্থক্যই না রয়েছে! হবা স্ত্রীদের অনুসরণযোগ্য উত্তম আদর্শ স্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছিল। তার ঐশিকভাবে নিযুক্ত একজন মস্তক ছিল, যার মাধ্যমে যিহোবা নির্দেশনা জানাতেন। কিন্তু, হবা এই ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখায়নি। আদম তাকে যে-নির্দেশনা সম্বন্ধে জানিয়েছিল, সে তা মেনে নিতে ব্যর্থ হয়েছিল। (আদি. ২:১৬, ১৭; ৩:৩; ১ করি. ১১:৩) এটা ঠিক যে হবা প্রবঞ্চিতা হয়েছিল; কিন্তু যে-কণ্ঠস্বর তার কাছে এই দাবি করেছিল যে, “ঈশ্বর জানেন,” সেই কণ্ঠস্বরের কথায় কান দেওয়া ঠিক হবে কি না, সেই বিষয়ে তার স্বামীর সঙ্গে তার আলোচনা করে নেওয়া উচিত ছিল। তা না করে বরং সে তার স্বামীকে নির্দেশনা দেওয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছিল।—আদি. ৩:৫, ৬; ১ তীম. ২:১৪.

৯. বশীভূত হওয়ার বিষয়ে যিশু কোন উদাহরণ স্থাপন করেন?

এর বিপরীতে, যিশু তাঁর মস্তকের প্রতি বশীভূত হওয়ার ব্যাপারে নিখুঁত আদর্শ স্থাপন করেছেন। তাঁর ভাব বা মনোভাব ও জীবনধারা দেখায় যে, তিনি “ঈশ্বরের সহিত সমান থাকা ধরিয়া লইবার বিষয় জ্ঞান করিলেন না।” বরং, তিনি “আপনাকে শূন্য করিলেন, দাসের রূপ ধারণ করিলেন।” (ফিলি. ২:৫-৭) বর্তমানে, শাসনরত রাজা হিসেবে যিশু একই মনোভাব বজায় রাখেন। সমস্ত ব্যাপারে তিনি নম্রভাবে তাঁর পিতার বশীভূত হন এবং তাঁর মস্তকপদকে সমর্থন করেন।—মথি ২০:২৩; যোহন ৫:৩০; ১ করি. ১৫:২৮.

১০. কীভাবে একজন স্ত্রী হয়তো তার স্বামীর মস্তকপদকে সমর্থন করতে পারেন?

১০ একজন খ্রিস্টান স্ত্রীর উচিত তার স্বামীর মস্তকপদকে সমর্থন করে যিশুকে অনুকরণ করা। (পড়ুন, ১ পিতর ২:২১; ৩:১, ২. *) এইরকম একটা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করুন, যেখানে তার এটা করার সুযোগ রয়েছে। তার ছেলে এমন একটা কিছু করার অনুমতি চাইছে, যেটার জন্য বাবা-মায়ের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন। বাবা-মা বিষয়টা নিয়ে আগে আলোচনা করেনি বলে মায়ের পক্ষে এই কথা জিজ্ঞেস করা উপযুক্ত হবে যে, “তুমি কি তোমার বাবাকে জিজ্ঞেস করেছ?” যদি ছেলে জিজ্ঞেস না করে থাকে, তাহলে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তার উচিত স্বামীর সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করা। অধিকন্তু, একজন খ্রিস্টান স্ত্রী নিশ্চিতভাবে তার স্বামীর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করা এবং সন্তানদের সামনে স্বামীর মতামত নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিষয়টা এড়িয়ে চলতে চাইবেন। তিনি যদি কোনো ব্যাপারে স্বামীর সঙ্গে একমত না হন, তাহলে তিনি একান্তে স্বামীর সঙ্গে কথা বলবেন।—ইফি. ৬:৪.

বাবা-মাদের জন্য যিশুর উদাহরণ

১১. বাবা-মাদের জন্য যিশু কোন উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?

১১ যদিও যিশু বিয়ে করেননি বা তাঁর সন্তান ছিল না, তবুও তিনি খ্রিস্টান বাবা-মাদের জন্য এক চমৎকার আদর্শ। কীভাবে? তিনি প্রেমের সঙ্গে ও ধৈর্যপূর্বক তাঁর শিষ্যদেরকে কথা ও উদাহরণের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি তাদেরকে দেখিয়েছিলেন যে, তিনি তাদেরকে যে-দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তা কীভাবে পালন করতে হয়। (লূক ৮:১) শিষ্যদের প্রতি যিশুর মনোভাব ও আচরণ তাদেরকে শিখিয়েছিল যে, পরস্পরের সঙ্গে তাদের কেমন আচারব্যবহার করতে হবে।—পড়ুন, যোহন ১৩:১৪-১৭.

১২, ১৩. বাবা-মায়েরা যদি তাদের সন্তানদের ঈশ্বরভয়শীল ব্যক্তি হিসেবে মানুষ করে তুলতে চায়, তাহলে কীসের প্রয়োজন?

১২ সন্তানরা সাধারণত তাদের বাবা-মাদের অনুকরণ করে, তা সেটা ভালো বা খারাপ যে-উদাহরণই হোক। তাই বাবা-মায়েরা, নিজেদের জিজ্ঞেস করুন: ‘একদিকে টেলিভিশন ও আমোদপ্রমোদের পিছনে যতখানি সময় দিচ্ছি আর অন্যদিকে বাইবেল অধ্যয়ন ও ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশ নেওয়ায় ব্যাপারে যতখানি সময় দিচ্ছি, সেই বিষয়ে আমাদের উদাহরণের মাধ্যমে আমরা আমাদের সন্তানদের কী শিক্ষা দিচ্ছি? আমাদের পরিবারের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো আসলে কী? আমাদের জীবন ও সিদ্ধান্তগুলোকে সত্য উপাসনার ওপর কেন্দ্রীভূত রেখে আমরা কি এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করছি?’ বাবা-মায়েরা যদি তাদের সন্তানদের ঈশ্বরভয়শীল ব্যক্তি হিসেবে মানুষ করে তুলতে চায়, তাহলে ঈশ্বরের আইন প্রথমে তাদের নিজেদের হৃদয়ে থাকতে হবে।—দ্বিতীয়. ৬:৬.

১৩ বাবা-মায়েরা যদি রোজকার বিষয়গুলোতে বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে, তাহলে তা সন্তানদের অলক্ষিত থাকবে না। বাবা-মাদের কথা ও শিক্ষাগুলো সন্তানদের ওপর প্রভাব ফেলবে। কিন্তু, সন্তানরা যদি বুঝতে পারে যে, বাবা-মাদের দ্বৈত মান রয়েছে, তাহলে তারা হয়তো এই উপসংহারে আসবে যে, বাইবেলের নীতিগুলো আসলে গুরুত্বপূর্ণ অথবা ব্যবহারিক নয়। এর ফলে, সন্তানরা হয়তো জাগতিক চাপের কাছে নতিস্বীকার করতে পারে।

১৪, ১৫. বাবা-মাদের তাদের সন্তানদের মধ্যে কোন মূল্যবোধগুলো গড়ে তোলা উচিত আর কোন একটা উপায়ে তারা তা করতে পারে?

১৪ খ্রিস্টান বাবা-মায়েরা বুঝতে পারে যে, একটা সন্তানকে মানুষ করে তোলার সঙ্গে কেবল বস্তুগত চাহিদাগুলো জোগানোর চেয়ে আরও বেশি কিছু জড়িত। তাই, একজন সন্তানকে এমন লক্ষ্যগুলো অনুধাবন করতে শিক্ষা দেওয়া খুবই অদূরদর্শিতার কাজ হবে, যেগুলো কেবল তার নিজের বস্তুগত সুযোগ-সুবিধার জন্য কাজে লাগবে। (উপ. ৭:১২) যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ ও কাজগুলোকে তাদের অগ্রাধিকারের বিষয় করতে শিক্ষা দিয়েছিলেন। (মথি ৬:৩৩) তাই, যিশুকে অনুকরণ করে খ্রিস্টান বাবা-মাদের তাদের সন্তানদের মধ্যে আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলো অনুধাবন করার আকাঙ্ক্ষাও গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা উচিত।

১৫ একটা যে-উপায়ে বাবা-মায়েরা তা করতে পারে তা হল, সন্তানদের জন্য সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করার ব্যবস্থা করে, যারা পূর্ণসময়ের পরিচর্যা করে। কিশোর-কিশোরীদের জন্য অগ্রগামীদের অথবা সীমা অধ্যক্ষ ও তার স্ত্রীর সঙ্গে পরিচিত হওয়া কতখানি উৎসাহজনক হতে পারে, তা বিবেচনা করে দেখুন। অতিথি মিশনারি, বেথেলকর্মী এবং আন্তর্জাতিক নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করে এমন ব্যক্তিরা যিহোবাকে সেবা করার মধ্যে যে-আনন্দ রয়েছে, সেই সম্বন্ধে উদ্যমের সঙ্গে বলতে পারে। নিঃসন্দেহে, এই ধরনের অতিথিদের বলার মতো অনেক আগ্রহজনক অভিজ্ঞতা থাকবে। তাদের আত্মত্যাগমূলক সেবার উদাহরণ আপনার সন্তানদেরকে বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়ার, প্রশংসাযোগ্য লক্ষ্যগুলো স্থাপন করার এবং পূর্ণসময়ের পরিচর্যায় নিজেদের ভরণপোষণ জোগানোর ক্ষেত্রে সমর্থ হওয়ার ব্যাপারে সঠিক শিক্ষা লাভ করার জন্য অনেক সাহায্য করতে পারে।

সন্তানরা—কী তোমাদেরকে যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করতে সাহায্য করবে?

১৬. কীভাবে যিশু তাঁর পার্থিব বাবা-মা ও তাঁর স্বর্গীয় পিতাকে সমাদর করেছিলেন?

১৬ সন্তানরা, তোমাদের জন্যও যিশু এক চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছেন। যিশু যোষেফ ও মরিয়মের যত্নাধীনে ছিলেন আর তিনি তাদের বাধ্য ছিলেন। (পড়ুন, লূক ২:৫১.) তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, তাদের অসিদ্ধতা সত্ত্বেও ঈশ্বর তাদেরকে আস্থা সহকারে তাঁর দেখাশোনা করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেইজন্য তাদেরকে সমাদর করা উচিত ছিল। (দ্বিতীয়. ৫:১৬; মথি ১৫:৪) বড়ো হয়ে যিশু সবসময় তাঁর স্বর্গীয় পিতার সন্তোষজনক কাজ করতেন। এর অর্থ ছিল, পরীক্ষা বা প্রলোভন প্রতিরোধ করা। (মথি ৪:১-১০) তোমরা যারা অল্পবয়সি, তোমরা হয়তো মাঝে মাঝে তোমাদের বাবা-মায়ের অবাধ্য হওয়ার জন্য প্রলোভিত হতে পারো। তাহলে, কী তোমাদেরকে যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

১৭, ১৮. (ক) অল্পবয়সিরা স্কুলে কোন ধরনের চাপের মুখোমুখি হয়? (খ) কী মনে রাখা অল্পবয়সিদের পরীক্ষাগুলো প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

১৭ সম্ভবত, তোমার বেশিরভাগ সহছাত্রছাত্রীর বাইবেলের মানগুলোর প্রতি সামান্য সম্মান রয়েছে বা কোনো সম্মানই নেই। তারা হয়তো তোমাকে আপত্তিকর কাজকর্মে অংশ নেওয়ার জন্য চাপ দিতে অথবা তুমি যখন তা প্রত্যাখ্যান করো, তখন তোমাকে নিয়ে ঠাট্টা করতে পারে। তোমার সহছাত্রছাত্রীরা কি তাদের সঙ্গে তুমি কোনো একটা কাজে অংশ নিতে প্রত্যাখ্যান করো বলে তোমাকে অবমাননাকর নামে ডাকে? যদি ডেকে থাকে, তাহলে তুমি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাও? তুমি জানো যে, তুমি যদি ভয় পেয়ে যাও এবং লোকেদের সঙ্গে গা ভাসিয়ে দাও, তাহলে তুমি তোমার বাবা-মা ও যিহোবাকে দুঃখ দেবে। তুমি যদি তোমার সহছাত্রছাত্রীদের অনুসরণ করো, তাহলে কী হবে? তুমি হয়তো নিজের জন্য কিছু লক্ষ্য স্থাপন করেছ, যেমন একজন অগ্রগামী অথবা পরিচারক দাস হওয়া, যেখানে রাজ্য প্রকাশকদের বেশি প্রয়োজন, সেখানে সেবা করা অথবা একজন বেথেলকর্মী হওয়া। তোমার সহছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মেলামেশা করা কি তোমাকে তোমার লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছাতে সাহায্য করবে?

১৮ খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর অল্পবয়সিরা, তোমরা কি কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়ো, যেখানে তোমাদের বিশ্বাস পরীক্ষায় পড়ে? তোমরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাও? তোমাদের আদর্শ যিশুর কথা চিন্তা করো। তিনি প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং যেটা সঠিক, সেটার পক্ষে দৃঢ় ছিলেন। এটা মনে রাখা তোমাদেরকে তোমাদের সহছাত্রছাত্রীদের কাছে স্পষ্টভাবে এই কথা বলার মতো শক্তি দেবে যে, তোমরা তাদের সঙ্গে এমন কিছু করায় যোগ দিতে চাও না, যেটাকে তোমরা অন্যায় বলে জানো। যিশুর মতো আজীবন আনন্দপূর্ণ সেবা করার প্রত্যাশার ও যিহোবার প্রতি বাধ্যতার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখো।—ইব্রীয় ১২:২.

সুখী পারিবারিক জীবনের চাবিকাঠি

১৯. কোন ধরনের জীবনধারা প্রকৃত সুখ নিয়ে আসে?

১৯ যিহোবা ঈশ্বর ও যিশু খ্রিস্ট মানবজাতির জন্য সর্বোত্তমটুকু চান। এমনকী আমাদের অসিদ্ধ অবস্থা সত্ত্বেও, আমাদের পক্ষে কিছুটা ‘সুখ’ উপভোগ করা সম্ভব। (যিশা. ৪৮:১৭, ১৮; মথি ৫:৩, NW) যিশু এমন ধর্মীয় সত্যগুলো সম্বন্ধে শিখিয়েছিলেন, যেগুলো মানবজাতির সুখের ভিত্তি জোগায় কিন্তু তিনি তাঁর শিষ্যদের কেবল এটাই শেখাননি। যিশু জীবনযাপনের সর্বোত্তম উপায় সম্বন্ধেও শিখিয়েছিলেন। অধিকন্তু, ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ও মনোভাব সম্বন্ধে তিনি এক বাস্তবসম্মত উদাহরণও স্থাপন করেছেন। পরিবারে আমাদের ভূমিকা যা-ই হোক না কেন, তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করে আমরা সকলেই উপকৃত হতে পারি। তাই, স্বামী, স্ত্রী, বাবা-মা ও সন্তানরা, যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করুন! যিশুর শিক্ষাগুলোকে সাদরে গ্রহণ করা এবং তাঁর উদাহরণ অনুকরণ করা সত্যিই এক পরিতৃপ্তিদায়ক ও সুখী পারিবারিক জীবন উপভোগ করার চাবিকাঠি।

[পাদটীকা]

^ ১ পিতর ৩:১, ২ (NW): “একইভাবে, স্ত্রীরা, তোমরা নিজ নিজ স্বামীর বশীভূতা হও, যাতে কেউ কেউ যদিও বাক্যের বাধ্য না-ও হয়, তবুও তারা তোমাদের গভীর সম্মানের সঙ্গে শুদ্ধ আচরণের প্রত্যক্ষ সাক্ষি হয় বলে [তাদের] স্ত্রীদের আচরণের মাধ্যমে কোনো বাক্য ছাড়াই তাদেরকে জয় করা যেতে পারে।”

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• ঈশ্বরদত্ত কর্তৃত্বকে স্বামীদের কীভাবে ব্যবহার করা উচিত?

• কীভাবে একজন স্ত্রী যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করতে পারেন?

• যিশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেছিলেন, তা থেকে বাবা-মায়েরা কী শিখতে পারে?

• যিশুর উদাহরণ থেকে অল্পবয়সিরা কী শিখতে পারে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

পরিবারকে প্রভাবিত করে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, একজন প্রেমময় স্বামী কী করবেন?

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

কোন পরিস্থিতি একজন স্ত্রীকে তার স্বামীর মস্তকপদকে সমর্থন করার সুযোগ করে দেয়?

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

সন্তানরা তাদের বাবা-মায়ের উত্তম অভ্যাসগুলো অনুকরণ করে