সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিশুকে অনুকরণ করুন—সাহসের সঙ্গে প্রচার করুন

যিশুকে অনুকরণ করুন—সাহসের সঙ্গে প্রচার করুন

যিশুকে অনুকরণ করুন—সাহসের সঙ্গে প্রচার করুন

‘ঈশ্বরে সাহসী হইয়া তোমাদের কাছে সুসমাচারের কথা বলিয়াছিলাম।’—১ থিষল. ২:২.

১. কেন রাজ্যের সুসমাচার এতটা আবেদনময়?

 সুসমাচার শোনা কতই না মনোরম! আর ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার হচ্ছে সর্বোত্তম সংবাদ। এই সুসমাচার আমাদেরকে কষ্ট, অসুস্থতা, ব্যথা, দুঃখ এবং মৃত্যুর শেষ সম্বন্ধে আশ্বাস দেয়। এটা অনন্তজীবনের পথ খুলে দেয়, ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে প্রকাশ করে এবং আমাদেরকে দেখায় যে, তাঁর সঙ্গে কীভাবে এক প্রেমপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়। আপনি হয়তো ভাববেন যে, সেই সংবাদ শুনে প্রত্যেকেই আনন্দিত হবে, যা যিশু মানবজাতিকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আসলে তেমনটা হয় না।

২. যিশুর এই বিবৃতিটি ব্যাখ্যা করুন: ‘আমি বিচ্ছেদ জন্মাইতে আসিয়াছি।’

যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “মনে করিও না যে, আমি পৃথিবীতে শান্তি দিতে আসিয়াছি; শান্তি দিতে আসি নাই, কিন্তু খড়গ দিতে আসিয়াছি। কেননা আমি পিতার সহিত পুত্ত্রের, মাতার সহিত কন্যার, এবং শাশুড়ীর সহিত বধূর বিচ্ছেদ জন্মাইতে আসিয়াছি; আর আপন আপন পরিজনই মনুষ্যের শত্রু হইবে।” (মথি ১০:৩৪-৩৬) সুসমাচারকে সাগ্রহে গ্রহণ করে নেওয়ার পরিবর্তে অধিকাংশ লোক তা প্রত্যাখ্যান করে। কেউ কেউ নিজেদেরকে সেই ব্যক্তিদের শত্রু করে তোলে, যারা তা ঘোষণা করে, যদিও সেই ব্যক্তিরা তাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্য।

৩. আমাদের প্রচার করার কার্যভারকে সম্পাদন করার জন্য আমাদের কীসের প্রয়োজন?

আমরা যিশুর মতো সেই একই সত্যগুলো ঘোষণা করি আর সেগুলো শুনে আজকে লোকেরা আমাদের প্রতি ঠিক তেমন প্রতিক্রিয়াই দেখিয়ে থাকে, যেমনটা সেই সময়ে অনেকে তাঁর প্রতি দেখিয়েছিল। এইরকমটা আশা করা স্বাভাবিক। কারণ যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “‘দাস আপন প্রভু হইতে বড় নয়;’ লোকে যখন আমাকে তাড়না করিয়াছে, তখন তোমাদিগকেও তাড়না করিবে।” (যোহন ১৫:২০) অনেক দেশে আমরা সরাসরি তাড়না ভোগ করি না কিন্তু আমরা অবজ্ঞা ও উদাসীনতার মুখোমুখি হই। তাই, সাহসের সঙ্গে সুসমাচার প্রচার করার কাজে ধৈর্য ধরার জন্য আমাদের বিশ্বাস ও দৃঢ়তার প্রয়োজন।—পড়ুন, ২ পিতর ১:৫-৮.

৪. কেন পৌলকে প্রচার করার জন্য ‘সাহসী হইতে’ হয়েছিল?

মাঝে মাঝে আপনি হয়তো পরিচর্যায় অংশ নেওয়াকে কঠিন বলে মনে করেন বা প্রচারের কিছু কিছু দিক হয়তো ভীতিকর বলে মনে হয়। যদি তা-ই হয়, তাহলে মনে রাখবেন যে, আপনি একাই এইরকম বোধ করেন না। প্রেরিত পৌল একজন সাহসী ও নির্ভীক প্রচারক ছিলেন, যার সত্য সম্বন্ধে চমৎকার বোধগম্যতা ছিল, কিন্তু তাকেও কখনো কখনো প্রচার করার জন্য প্রাণপণ করতে হয়েছিল। থিষলনীকীর খ্রিস্টানদের উদ্দেশে পৌল লিখেছিলেন: “ফিলিপীতে পূর্ব্বে দুঃখভোগ ও অপমান ভোগ করিলে পর, তোমরা জান, আমরা আমাদের ঈশ্বরে সাহসী হইয়া অতিশয় প্রাণপণে তোমাদের কাছে ঈশ্বরের সুসমাচারের কথা বলিয়াছিলাম।” (১ থিষল. ২:২) ফিলিপীতে, কর্তৃপক্ষ পৌল ও তার সঙ্গী সীলকে বেত্রাঘাত করেছিল, তাদেরকে কারাগারে বন্ধ করেছিল এবং তাদের পায়ে হাড়িকাঠ দিয়ে রেখেছিল। (প্রেরিত ১৬:১৬-২৪) তা সত্ত্বেও, পৌল ও সীল প্রচার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ‘সাহসী হইয়াছিল।’ কীভাবে আমরাও একই বিষয় করতে পারি? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আসুন আমরা বিবেচনা করি যে, কী বাইবেলের সময়ে ঈশ্বরের দাসদের সাহসের সঙ্গে যিহোবা সম্বন্ধে সত্য বলতে সমর্থ করেছিল এবং আসুন আমরা এও শিখি যে, কীভাবে আমরা তাদের উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি।

শত্রুতার মুখোমুখি হওয়ার জন্য সাহসের প্রয়োজন ছিল

৫. কেন যিহোবার প্রতি অনুগত ব্যক্তিদের সবসময় সাহসের প্রয়োজন হয়েছে?

অবশ্য, নির্ভীকতা ও সাহসের সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ ছিলেন যিশু খ্রিস্ট। তা সত্ত্বেও দেখা গিয়েছে যে, মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই, যিহোবার প্রতি অনুগত সকলেরই সবসময় সাহসের প্রয়োজন হয়েছে। কেন? এদনে বিদ্রোহের পর, যিহোবা ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, যারা ঈশ্বরকে সেবা করবে ও যারা শয়তানকে সেবা করবে, তাদের মধ্যে শত্রুতা থাকবে। (আদি. ৩:১৫) এই শত্রুতা শীঘ্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল, যখন একজন ধার্মিক ব্যক্তি হেবলকে তার ভাই হত্যা করেছিল। পরে, আরেকজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি হনোকের সঙ্গে শত্রুতা করা হয়েছিল, যিনি জলপ্লাবনের আগে বেঁচে ছিলেন। তিনি ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, ঈশ্বর তাঁর অযুত অযুত পবিত্র লোকের সঙ্গে ভক্তিহীন লোকেদের বিচার করতে আসবেন। (যিহূদা ১৪, ১৫) এই বার্তা নিশ্চয়ই পছন্দসই বার্তা ছিল না। লোকেরা হনোককে ঘৃণা করত এবং এটা স্পষ্ট যে, যিহোবা যদি তার জীবনকে সংক্ষিপ্ত না করতেন, তাহলে সেই লোকেরাই তাকে হত্যা করত। হনোক কত সাহসই না দেখিয়েছিলেন!—আদি. ৫:২১-২৪.

৬. ফরৌণের সঙ্গে কথা বলার সময় মোশির কেন সাহসের প্রয়োজন ছিল?

এ ছাড়া, মোশির সাহসের কথাও বিবেচনা করুন, যা তিনি ফরৌণের সঙ্গে কথা বলার সময় দেখিয়েছিলেন, যে-ফরৌণ এমন একজন শাসক ছিলেন, যাকে দেবতাদের শুধু একজন প্রতিনিধিই নয় কিন্তু সূর্য দেবতা রা-এর পুত্র হিসেবে স্বয়ং এক দেবতার মতোই দেখা হতো। এইরকম হতে পারে যে, অন্য ফরৌণদের মতো তিনি নিজেও তার নিজ প্রতিকৃতিকে উপাসনা করতেন। ফরৌণের কথাই ছিল আইন; তিনি শুধু হুকুম করতেন। কী করতে হবে, তা অন্যেরা তাকে বলে দেবে, এইরকম বিষয় এই ক্ষমতাবান, উদ্ধত এবং একগুঁয়ে ফরৌণের চরিত্রের সঙ্গে মিলত না। এইরকম একজন ব্যক্তির সামনেই এক মৃদুশীল মেষপালক মোশি কোনোরকম আমন্ত্রণ বা অভ্যর্থনা ছাড়াই বার বার গিয়েছিলেন। আর মোশি কোন বিষয়ে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন? মারাত্মক কয়েকটা আঘাত সম্বন্ধে। এ ছাড়া, তিনি কী চেয়েছিলেন? ফরৌণের লক্ষ লক্ষ দাসকে সেই দেশ ছেড়ে চলে যেতে দেওয়ার অনুমতি! এর জন্য কি মোশির সাহসের প্রয়োজন ছিল? অবশ্যই!—গণনা. ১২:৩; ইব্রীয় ১১:২৭.

৭, ৮. (ক) প্রাচীনকালের বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের ওপর কোন পরীক্ষাগুলো এসেছিল? (খ) কী প্রাক্‌খ্রিস্টীয় সময়ের ব্যক্তিদের বিশুদ্ধ উপাসনাকে সমর্থন করতে ও ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সাহস দেখাতে সমর্থ করেছিল?

এই ঘটনার কয়েক শতাব্দী পর, ভাববাদীরা ও ঈশ্বরের অন্যান্য বিশ্বস্ত দাস বিশুদ্ধ উপাসনার পক্ষে ক্রমাগত এক সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিল। শয়তানের জগৎ তাদের প্রতি দয়া দেখায়নি। পৌল বলেন: “তাঁহারা প্রস্তরাঘাতে হত, পরীক্ষিত, করাত দ্বারা বিদীর্ণ, খড়গ দ্বারা নিহত হইলেন; তাঁহারা মেষের ও ছাগের চর্ম্ম পরিয়া বেড়াইতেন, দীনহীন, ক্লিষ্ট, উপদ্রুত হইতেন।” (ইব্রীয় ১১:৩৭) কোন বিষয়টা ঈশ্বরের সেই অনুগত দাসদের দৃঢ় থাকতে সাহায্য করেছিল? অল্প কয়েকটি পদ আগে প্রেরিত পৌল উল্লেখ করেছিলেন যে, কী হেবল, অব্রাহাম, সারা ও অন্যান্যদের সহ্য করার শক্তি জুগিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন: “ইহাঁরা প্রতিজ্ঞাকলাপের ফল প্রাপ্ত হন নাই, কিন্তু [বিশ্বাসে] দূর হইতে তাহা দেখিতে পাইয়া সাদর সম্ভাষণ করিয়াছিলেন।” (ইব্রীয় ১১:১৩) কোনো সন্দেহ নেই যে, এলিয় ও যিরমিয়ের মতো ভাববাদীরা এবং প্রাক্‌খ্রিস্টীয় সময়ের অন্যান্য বিশ্বস্ত ব্যক্তি, যারা সত্য উপাসনার পক্ষে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিল, তাদেরকেও একইভাবে যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করার দ্বারা সহ্য করতে সাহায্য করা হয়েছিল।—তীত ১:২.

প্রাক্‌খ্রিস্টীয় সময়ের সেই বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা এক উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয় ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ছিল। পুনরুত্থিত হওয়ার পর তারা শেষপর্যন্ত সিদ্ধতায় পৌঁছাবে এবং খ্রিস্ট যিশু ও তাঁর ১,৪৪,০০০ জন অধীনস্থ যাজকদের যাজকীয় সেবার মাধ্যমে “ক্ষয়ের দাসত্ব হইতে মুক্ত” হবে। (রোমীয় ৮:২১) অধিকন্তু, যিরমিয় এবং প্রাচীনকালে ঈশ্বরের অন্যান্য সাহসী সেবক যিহোবার আশ্বাসের কারণে সাহসী হয়েছিল, যা যিরমিয়ের কাছে করা তাঁর এই প্রতিজ্ঞায় প্রকাশ পেয়েছে: “তাহারা তোমার সহিত যুদ্ধ করিবে, কিন্তু তোমাকে পরাজয় করিতে পারিবে না, কারণ তোমার উদ্ধারার্থে আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি, ইহা সদাপ্রভু কহেন।” (যির. ১:১৯) আজকে, যখন আমরা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য করা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো এবং আধ্যাত্মিক সুরক্ষার বিষয়ে তাঁর আশ্বাসের কথা চিন্তা করি, তখন আমরাও একইভাবে শক্তিশালী হই।—হিতো. ২:৭; পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৪:১৭, ১৮.

প্রেম যিশুকে সাহসের সঙ্গে প্রচার করতে প্রেরণা দিয়েছিল

৯, ১০. কোন কোন উপায়ে যিশু সাহস দেখিয়েছিলেন (ক) ধর্মীয় নেতাদের সামনে, (খ) সৈন্যদলের সামনে, (গ) মহাযাজকের সামনে, (ঘ) পীলাতের সামনে?

আমাদের আদর্শ যিশু বিভিন্ন উপায়ে তাঁর সাহস প্রদর্শন করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা ঘৃণিত হওয়া সত্ত্বেও, যিশু সেই বার্তাকে হালকা করে ফেলেননি, যে-বার্তা ঈশ্বর চেয়েছিলেন যে, লোকেরা জানুক। তিনি নির্ভীকভাবে ক্ষমতাবান ধর্মীয় নেতাদের আত্মধার্মিকতা ও সেইসঙ্গে তাদের মিথ্যা শিক্ষাগুলোকে উন্মোচন করে দিয়েছিলেন। সেই ব্যক্তিদেরকে যিশু সরাসরি ও স্পষ্ট ভাষায় ভর্ৎসনা করেছিলেন। একবার তিনি বলেছিলেন: “হা অধ্যাপক ও ফরীশীগণ, কপটীরা, ধিক্‌ তোমাদিগকে! কারণ তোমরা চূণকাম করা কবরের তুল্য; তাহা বাহিরে দেখিতে সুন্দর বটে, কিন্তু ভিতরে মরা মানুষের অস্থি ও সর্ব্বপ্রকার অশুচিতা ভরা। তদ্রূপ তোমরাও বাহিরে লোকদের কাছে ধার্ম্মিক বলিয়া দেখাইয়া থাক, কিন্তু ভিতরে তোমরা কাপট্য ও অধর্ম্মে পরিপূর্ণ।”—মথি ২৩:২৭, ২৮.

১০ গেৎশিমানী বাগানে, সৈন্যদলের মুখোমুখি হয়ে যিশু সাহসের সঙ্গে তাদের কাছে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন। (যোহন ১৮:৩-৮) পরে, তাঁকে মহাসভায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং মহাযাজক তাঁকে জেরা করেছিলেন। যদিও তিনি জানতেন যে, মহাযাজক তাঁকে হত্যা করার জন্য এক সূত্র খুঁজছিলেন কিন্তু তবুও যিশু নির্ভীকভাবে দৃঢ়তা সহকারে বলেছিলেন যে তিনিই ছিলেন সেই খ্রিস্ট ও ঈশ্বরের পুত্র উভয়ই। তিনি আরও বলেছিলেন যে, তারা তাঁকে “পরাক্রমের দক্ষিণ পার্শ্বে বসিয়া থাকিতে ও আকাশের মেঘসহ আসিতে দেখিবে।” (মার্ক ১৪:৫৩, ৫৭-৬৫) এর অল্প কিছুসময় পর, যিশুকে বেঁধে পীলাতের সামনে দাঁড় করানো হয়েছিল, যিনি তাঁকে মুক্ত করে দিতে পারতেন। কিন্তু, যিশু তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর উত্তরে নীরব থেকেছিলেন। (মার্ক ১৫:১-৫) এই সমস্তকিছুর জন্য অনেক সাহসের প্রয়োজন ছিল।

১১. কীভাবে সাহস প্রেমের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?

১১ পীলাতকে যিশু বলেছিলেন: “আমি এই জন্যই জন্মগ্রহণ করিয়াছি ও এই জন্য জগতে আসিয়াছি, যেন সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিই।” (যোহন ১৮:৩৭) যিহোবা যিশুকে সুসমাচার প্রচার করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন আর যিশু তা করতে পেরে আনন্দিত ছিলেন কারণ তিনি তাঁর স্বর্গীয় পিতাকে ভালোবাসতেন। (লূক ৪:১৮, ১৯) এ ছাড়া, লোকেদের প্রতিও যিশুর প্রেম ছিল। তিনি জানতেন যে, তাদের জীবনযাপন কষ্টকর ছিল। একইভাবে, আমাদের সাহসী ও নির্ভীক সাক্ষ্যদান ঈশ্বর ও প্রতিবেশীর প্রতি প্রেমের ওপর গভীরভাবে স্থাপিত।—মথি ২২:৩৬-৪০.

পবিত্র আত্মা আমাদেরকে সাহসের সঙ্গে প্রচার করতে শক্তি প্রদান করে

১২. কোন বিষয়টা প্রাথমিক শিষ্যদের আনন্দিত করেছিল?

১২ যিশুর মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ পরে শিষ্যরা আনন্দ করতে পেরেছিল কারণ যিহোবা তাদের সঙ্গে সেই ব্যক্তিদের যুক্ত করছিলেন, যারা পরিত্রাণ পাচ্ছিল। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা প্রায় ৩,০০০ যিহুদি ও ধর্মান্তরিত ব্যক্তি, যারা পঞ্চাশত্তমী উদ্‌যাপন করার জন্য তখন যিরূশালেমে ছিল, তারা মাত্র এক দিনে বাপ্তাইজিত হয়েছিল! সেই বিষয়টা নিয়ে যিহুদি সমাজে নিশ্চয়ই কত কথাই না বলাবলি হয়েছিল! বাইবেল বলে: “সকলের ভয় উপস্থিত হইল, এবং প্রেরিতগণ কর্ত্তৃক অনেক অদ্ভুত লক্ষণ ও চিহ্ন-কার্য্য সাধিত হইত।”—প্রেরিত ২:৪১, ৪৩.

১৩. কেন ভাইয়েরা সাহস চেয়ে প্রার্থনা করেছিল আর এর ফল কী হয়েছিল?

১৩ প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়ে ধর্মীয় নেতারা পিতর ও যোহনকে গ্রেপ্তার করেছিল, তাদেরকে সারারাত কারাগারে রেখেছিল এবং যিশুর বিষয়ে কথা না বলার জন্য আদেশ দিয়েছিল। মুক্তি পেয়ে সেই দু-জন সমস্ত ঘটনা ভাইদের জানিয়েছিল আর তারা সবাই যে-বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিল, সেই ব্যাপারে এই অনুরোধ করে প্রার্থনা করেছিল: “হে প্রভু [“যিহোবা,” NW], . . . তোমার এই দাসদিগকে সম্পূর্ণ সাহসের সহিত তোমার বাক্য বলিবার ক্ষমতা দেও।” এর ফল কী হয়েছিল? “তাঁহারা সকলেই পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হইলেন ও সাহসপূর্ব্বক ঈশ্বরের বাক্য বলিতে থাকিলেন।”—প্রেরিত ৪:২৪-৩১.

১৪. কীভাবে পবিত্র আত্মা আমাদের প্রচার কাজে সাহায্য করে?

১৪ লক্ষ করুন যে, যিহোবার শক্তিশালী পবিত্র আত্মাই শিষ্যদেরকে সাহসের সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য বলতে সাহায্য করেছিল। অন্যদের কাছে, এমনকী যারা আমাদের বার্তার বিরোধিতা করে, তাদের কাছে সত্য বলার জন্য সাহসী হওয়া আমাদের নিজেদের ওপর নির্ভর করে না। যিহোবা আমাদেরকে তাঁর পবিত্র আত্মা দিতে পারেন এবং দেবেন, যদি আমরা তাঁর কাছে তা যাচ্ঞা করি। যিহোবার সাহায্যে আমরাও, যেকোনো বিরোধিতার মুখে বিজয়ী হওয়ার জন্য গীতরচকের মতো প্রয়োজনীয় সাহস প্রদর্শন করতে পারি, যিনি বলেছিলেন: “আমি যখন তোমাকে ডাকলাম তুমি আমাকে উত্তর দিলে; আমার অন্তরে শক্তি দিয়ে তুমি আমাকে সাহসী করলে।”—গীতসংহিতা ১৩৮:৩, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন।

খ্রিস্টানরা আজকে সাহসের সঙ্গে প্রচার করে

১৫. সত্য আজকে কীভাবে লোকেদের মধ্যে বিচ্ছেদ জন্মায়?

১৫ অতীতের মতো আমাদের দিনেও সত্য লোকেদের মধ্যে বিচ্ছেদ জন্মিয়ে চলেছে। কেউ কেউ অনুকূলভাবে সাড়া দেয়, আবার অন্যেরা আমাদের উপাসনার ধরনকে বোঝে না কিংবা উপলব্ধিও করে না। কেউ কেউ আমাদের সমালোচনা করে, আমাদের উপহাস করে বা এমনকী আমাদের ঘৃণা করে, ঠিক যেমন যিশু ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন। (মথি ১০:২২) মাঝে মাঝে, আমরা প্রচারমাধ্যমের ভুল তথ্য ও বিদ্বেষপূর্ণ অপপ্রচারের লক্ষ্যবস্তু হই। (গীত. ১০৯:১-৩) তা সত্ত্বেও, সারা পৃথিবীতে যিহোবার লোকেরা সাহসের সঙ্গে সুসমাচার ঘোষণা করে।

১৬. কোন অভিজ্ঞতা দেখায় যে, সাহস সেই ব্যক্তিদের দৃষ্টিভঙ্গিকে পালটে দিতে পারে, যাদের কাছে আমরা প্রচার করি?

১৬ আমাদের সাহস লোকেদেরকে রাজ্যের বার্তার প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে পালটে দিতে পরিচালিত করতে পারে। কিরগিজস্তানের একজন বোন বর্ণনা করেন: “একবার আমি যখন প্রচার করছিলাম, তখন একজন গৃহকর্তা আমাকে বলেছিলেন: ‘আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি কিন্তু খ্রিস্টানদের ঈশ্বরে নয়। আপনি যদি আবারও আমার গেটে আসেন, তাহলে আমি আপনার দিকে আমার কুকুর লেলিয়ে দেব!’ তার পিছনেই চেন দিয়ে একটা বড়ো বুলডগ বাঁধা ছিল। কিন্তু, ‘ধর্মের নামে সংঘটিত মন্দ বিষয়গুলো কি শেষ হবে?’ শিরোনামের রাজ্য সংবাদ নং ৩৭ বিতরণ করার অভিযানের সময় আমি সেই একই বাড়িতে ফিরে যাব বলে ঠিক করেছিলাম, এই আশা করে যে হয়তো সেই ব্যক্তির পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে দেখা হতে পারে। কিন্তু, সেই ব্যক্তিই দরজা খুলেছিলেন। আমি সঙ্গেসঙ্গে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলাম ও এরপর তাকে বলেছিলাম: ‘ভালো আছেন? তিন দিন আগে আপনার সঙ্গে আমার যে-আলোচনা হয়েছিল, তা আমার মনে আছে আর আপনার কুকুরের কথাও আমার মনে আছে। কিন্তু, আমি আপনাকে এই ট্র্যাক্টটি না দিয়ে চলে যেতে পারছিলাম না কারণ ঠিক আপনার মতো আমিও একমাত্র সত্য ঈশ্বরে বিশ্বাস করি। ঈশ্বর শীঘ্র সেই ধর্মগুলোকে শাস্তি দেবেন, যেগুলো তাঁকে অসম্মান করে। আপনি এটি পড়ে এই বিষয়ে আরও কিছু জানতে পারবেন।’ আমাকে অবাক করে দিয়ে সেই ব্যক্তি ওই রাজ্য সংবাদ-এর কপিটি নিয়েছিলেন। এরপর আমি সেখান থেকে আরেকটা বাড়িতে গিয়েছিলাম। কয়েক মিনিট পর, সেই ব্যক্তি রাজ্য সংবাদ হাতে নিয়ে দৌড়ে আমার কাছে এসেছিলেন। ‘আমি এটি পড়েছি,’ তিনি বলেছিলেন। ‘আমি যেন ঈশ্বরের ক্রোধ থেকে রক্ষা পাই, সেইজন্য আমাকে কী করতে হবে?’” সেই ব্যক্তির সঙ্গে একটি বাইবেল অধ্যয়ন শুরু হয়েছিল আর তিনি খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দিতে শুরু করেছিলেন।

১৭. একজন বোনের সাহস কীভাবে ভয়ে জর্জরিত এক বাইবেল ছাত্রীকে শক্তিশালী করেছিল?

১৭ আমাদের সাহস অন্যদেরকেও সাহসী হতে উৎসাহিত করতে পারে। রাশিয়াতে, একজন বোন বাসে করে যাওয়ার সময় তার এক সহযাত্রীকে একটি পত্রিকা দেন। তা দেখে অন্য একজন ব্যক্তি তার সিট থেকে লাফ দিয়ে উঠে বোনের হাত থেকে পত্রিকাটি কেড়ে নেন, সেটিকে দুমড়ে-মুচড়ে বাসের মেঝেতে ফেলে দেন। চিৎকার করে সেই বোনকে বকাবকি করে ওই ব্যক্তি বোনের ঠিকানা চান এবং তাকে সেই গ্রামে গিয়ে প্রচার না করার বিষয়ে সাবধান করে দেন। সেই বোন সাহায্যের জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেন এবং যিশুর এই কথাগুলো তার মনে পড়ে যায়: “যাহারা শরীর বধ করে, . . . তাহাদিগকে ভয় করিও না।” (মথি ১০:২৮) শান্তভাবে তিনি উঠে দাঁড়ান এবং সেই ব্যক্তিকে বলেন, “আমার ঠিকানা আমি আপনাকে দেব না আর আমি গ্রামে প্রচার কাজ চালিয়ে যাব।” এরপর সেই বোন বাস থেকে নেমে যান। সেই বোন জানতেন না যে, তারই এক বাইবেল ছাত্রী সেই বাসেই ছিলেন। সেই মহিলা খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে লোকভয়কে প্রশ্রয় দিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের বোনের সাহস দেখার পর, সেই বাইবেল ছাত্রী সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি সভাগুলোতে যোগ দিতে শুরু করবেন।

১৮. কী আপনাকে যিশুর মতো সাহসের সঙ্গে প্রচার করতে সাহায্য করবে?

১৮ ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন এই জগতে প্রচার করার জন্য যিশুর মতো সাহসের প্রয়োজন হয়। তা করার জন্য কী আপনাকে সাহায্য করবে? ভবিষ্যতের দিকে তাকান। ঈশ্বর ও প্রতিবেশীর প্রতি আপনার ভালোবাসাকে শক্তিশালী রাখুন। সাহসের জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন। সবসময় মনে রাখবেন যে, আপনি একা নন কারণ যিশু আপনার সঙ্গে আছেন। (মথি ২৮:২০) পবিত্র আত্মা আপনাকে শক্তিশালী করবে। আর যিহোবা আপনাকে আশীর্বাদ ও সমর্থন করবেন। তাই, আমরা যেন অতিশয় সাহসী হই ও বলি: “প্রভু [“যিহোবা,” NW] আমার সহায়, আমি ভয় করিব না; মনুষ্য আমার কি করিবে?”—ইব্রীয় ১৩:৬.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• ঈশ্বরের দাসদের কেন সাহসের প্রয়োজন?

• সাহসী হওয়ার বিষয়ে আমরা কী শিখতে পারি . . .

খ্রিস্টের আগে বেঁচে ছিলেন এমন বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে?

যিশু খ্রিস্টের কাছ থেকে?

প্রাথমিক খ্রিস্টানদের কাছ থেকে?

আজকে সহখ্রিস্টানদের কাছ থেকে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশু নির্ভীকভাবে ধর্মীয় নেতাদের দুষ্কর্ম উন্মোচন করে দিয়েছিলেন

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবা আমাদের প্রচার করার জন্য সাহস দেন