সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অলীক বিষয়গুলো থেকে আপনার চোখ সরিয়ে নিন!

অলীক বিষয়গুলো থেকে আপনার চোখ সরিয়ে নিন!

অলীক বিষয়গুলো থেকে আপনার চোখ সরিয়ে নিন!

“অলীকতা-দর্শন হইতে আমার চক্ষু ফিরাও, তোমার পথে আমাকে সঞ্জীবিত কর।” —গীত. ১১৯:৩৭.

১. উপহার হিসেবে প্রাপ্ত দর্শনেন্দ্রিয় কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

 আমাদের দর্শনেন্দ্রিয় কতই না মূল্যবান! এই ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে আমরা মুহূর্তের মধ্যে আমাদের পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলো—পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এবং সেগুলোর বিভিন্ন রং—প্রত্যক্ষ করতে পারি। আমাদের দর্শনেন্দ্রিয় আমাদের প্রিয় বন্ধুবান্ধবকে দেখতে অথবা বিপদগুলোকে পরিহার করতে সমর্থ করে। এর মাধ্যমে আমরা সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করতে, সৃষ্টির বিস্ময়গুলো উপলব্ধি করতে এবং ঈশ্বরের অস্তিত্ব ও গৌরবের প্রমাণ লাভ করতে পারি। (গীত. ৮:৩, ৪; ১৯:১, ২; ১০৪:২৪; রোমীয় ১:২০) আর মনের সঙ্গে যোগাযোগের অতি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে দর্শনেন্দ্রিয়, যিহোবা সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করার এবং তাঁর ওপর বিশ্বাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এক প্রধান ভূমিকা পালন করে।—যিহো. ১:৮; গীত. ১:২, ৩.

২. কেন আমাদের আমরা যা দেখি, সেই সম্বন্ধে চিন্তিত হওয়া উচিত আর গীতরচকের আন্তরিক অনুরোধ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

কিন্তু, আমরা যা দেখি, সেটা আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে। আমাদের দর্শনেন্দ্রিয় ও মনের মধ্যে সম্পর্ক এতটাই জোরালো যে, আমরা আমাদের চোখ দিয়ে যা দেখি, তা আমাদের হৃদয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও অভিলাষ জাগিয়ে তুলতে ও সেগুলোকে প্রবলতর করতে পারে। আর যেহেতু আমরা নৈতিক দিক দিয়ে কলুষিত ও আত্মতুষ্টিসম্পন্ন এক জগতে বাস করি, যা শয়তান দিয়াবলের দ্বারা শাসিত, তাই আমাদের চারপাশে এমন প্রতিকৃতি ও অপপ্রচার ছেয়ে রয়েছে, যেগুলো সহজেই আমাদের বিপথে নিয়ে যেতে পারে—এমনকী আমরা যদি সেগুলোর প্রতি সামান্য মনোযোগও দিই। (১ যোহন ৫:১৯) তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, গীতরচক ঈশ্বরের কাছে এই মিনতি করেছিলেন: “অলীকতা-দর্শন হইতে আমার চক্ষু ফিরাও, তোমার পথে আমাকে সঞ্জীবিত কর।”—গীত. ১১৯:৩৭.

যেভাবে আমাদের চোখ আমাদের ভ্রান্ত করতে পারে

৩-৫. বাইবেলের কোন বিবরণগুলো, আমাদের চোখকে নিজেদেরকে প্রলুব্ধ করতে দেওয়ার বিপদ সম্বন্ধে তুলে ধরে?

প্রথম মানবী হবার ক্ষেত্রে কী ঘটেছিল, তা বিবেচনা করুন। শয়তান এই ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, হবা যদি ‘সদসদ্‌-জ্ঞানদায়ক বৃক্ষের’ ফল খায়, তাহলে তার “চক্ষু খুলিয়া যাইবে।” তার চোখ “খুলিয়া যাইবে,” এই কথা শুনে হবা নিশ্চয়ই কৌতূহলী হয়ে উঠেছিল। নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার ব্যাপারে তার আগ্রহ আরও বেড়ে গিয়েছিল, যখন সে ‘দেখিল, ঐ বৃক্ষ সুখাদ্যদায়ক ও চক্ষুর লোভজনক, আর ঐ বৃক্ষ জ্ঞানদায়ক বলিয়া বাঞ্ছনীয়।’ লোভ বা তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সেই গাছের দিকে তাকানো হবাকে ঈশ্বরের আজ্ঞার অবাধ্য হতে পরিচালিত করেছিল। তার স্বামী আদমও অবাধ্য হয়েছিল আর তা সমস্ত মানবজাতির জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি নিয়ে এসেছিল।—আদি. ২:১৭; ৩:২-৬; রোমীয় ৫:১২; যাকোব ১:১৪, ১৫.

নোহের দিনে কিছু স্বর্গদূতও, তারা যা দেখেছিল, সেটার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। তাদের বিষয়ে উল্লেখ করে আদিপুস্তক ৬:২ পদ বলে: “ঈশ্বরের পুত্ত্রেরা মনুষ্যদের কন্যাগণকে সুন্দরী দেখিয়া, যাহার যাহাকে ইচ্ছা, সে তাহাকে বিবাহ করিতে লাগিল।” মনুষ্য কন্যাদেরকে কামনার দৃষ্টিতে দেখা, বিদ্রোহী দূতদের মধ্যে মানুষের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করার এক অস্বাভাবিক লালসা জাগিয়ে তুলেছিল আর সেই দূতদের দ্বারা হিংস্র সন্তান জন্মেছিল। সেই সময়ে মানুষের দুষ্টতার কারণে, নোহ ও তার পরিবার ছাড়া বাকি সমস্ত মানবজাতিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল।—আদি. ৬:৪-৭, ১১, ১২.

এই ঘটনার কয়েক-শো বছর পর, ইস্রায়েলের আখন যখন হস্তগত যিরীহো নগরের কিছু দ্রব্য ‘দেখিয়াছিলেন,’ তখন তিনি সেগুলো চুরি করেছিলেন। ঈশ্বর সেই নগরের সমস্ত দ্রব্য ধ্বংস করে দেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন, তবে শুধু সেই দ্রব্যগুলো ছাড়া, যেগুলো যিহোবার ভাণ্ডারে দেওয়া হবে। ইস্রায়েলীয়দের এই সতর্কবাণী দেওয়া হয়েছিল: “সেই বর্জ্জিত দ্রব্য হইতে আপনাদিগকে সাবধানে রক্ষা করিও,” নতুবা তাদের মধ্যে আকাঙ্ক্ষা জেগে ওঠার আশঙ্কা থাকতে পারে আর তারা সেই নগরের কিছু দ্রব্য নিয়ে নিতে পারে। আখন যখন অবাধ্য হয়েছিলেন, তখন ইস্রায়েলের লোকেরা অয় নগরের কাছে পরাজিত হয়েছিল এবং তাদের মধ্যে অনেকে মারা গিয়েছিল। ধরা না পড়া পর্যন্ত আখন তার চুরির কথা স্বীকার করেননি। দ্রব্যগুলো ‘আমি দেখিয়া,’ আখন বলেন, সেগুলো “লোভে পড়িয়া হরণ করিয়াছি।” তার চক্ষুর অভিলাষ তার নিজের ও সেইসঙ্গে ‘তাহার যাহা কিছু ছিল, সমস্তরই’ ধ্বংস নিয়ে এসেছিল। (যিহো. ৬:১৮, ১৯; ৭:১-২৬) আখন সেই বিষয়ের জন্য লালসা করেছিলেন, যেগুলো তার জন্য নিষিদ্ধ ছিল।

আমাদের আত্মশাসনের প্রয়োজন

৬, ৭. শয়তানের ‘কল্পনাগুলোর’ মধ্যে কোনটা প্রায়ই আমাদের প্রলুব্ধ করার জন্য ব্যবহার করা হয় আর কীভাবে বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনদাতারা এটাকে ব্যবহার করে থাকে?

আজকে মানবজাতিকে ঠিক একই উপায়ে প্রলুব্ধ করা হয়ে থাকে, যে-উপায়টা হবা, অবাধ্য স্বর্গদূত এবং আখনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল। মানবজাতিকে ভ্রান্ত করার জন্য শয়তানের দ্বারা ব্যবহৃত সমস্ত ‘কল্পনার’ মধ্যে ‘চক্ষুর অভিলাষের’ প্রতি আবেদন হচ্ছে সবচেয়ে জোরালো। (২ করি. ২:১১; ১ যোহন ২:১৬) আধুনিক বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনদাতারা খুব ভালোভাবেই জানে যে, লোকেরা সবসময় যা দেখে, সেটার দ্বারা প্রভাবিত হয়। “সমস্ত ইন্দ্রিয়র মধ্যে দর্শনেন্দ্রিয় হচ্ছে সবচেয়ে প্রলুব্ধকারী ইন্দ্রিয়,” ইউরোপের একজন প্রধান বিপণন বিশেষজ্ঞ বলেন। “এটা প্রায়ই অন্যান্য ইন্দ্রিয়র ওপর প্রভুত্ব করে এবং সমস্ত যুক্তিতর্কের কাছে আমাদের হার মানাতে বাধ্য করানোর ক্ষমতা এর রয়েছে।”

তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, বিজ্ঞাপনদাতারা আমাদের সামনে একটার পর একটা এমন সব প্রতিকৃতি তুলে ধরে, যেগুলোকে সুচতুরভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে সেগুলো আমাদের চোখের ওপর জোরালো প্রভাব ফেলে এবং তাদের পণ্য বা সেবা লাভ করার আকাঙ্ক্ষাকে উদ্দীপিত করে! যুক্তরাষ্ট্রের একজন গবেষক, যিনি বিজ্ঞাপনগুলো কীভাবে ব্যক্তি-বিশেষদের প্রভাবিত করে, সেই সম্বন্ধে অধ্যয়ন করেছেন, তিনি বলেন, এটা “শুধু ধারণামূলক তথ্য প্রকাশ করার জন্যই তৈরি করা হয় না কিন্তু এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, দর্শকদের মধ্যে নির্দিষ্ট আবেগ এবং কার্যকর প্রতিক্রিয়া জাগিয়ে তোলার জন্যও উৎপন্ন করা হয়ে থাকে।” উত্তেজনাকর যৌন প্রতিকৃতি হচ্ছে একটা বিষয়, যা প্রায়ই ব্যবহার করা হয়। তাই, আমরা যা দেখি এবং আমাদের মন ও হৃদয়ে যা প্রবেশ করতে দিই, সেই ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করা কতই না গুরুত্বপূর্ণ!

৮. কীভাবে বাইবেলে আমাদের চোখকে সাবধানে রাখার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে জোর দেওয়া হয়েছে?

সত্য খ্রিস্টানরা চক্ষুর ও মাংসের অভিলাষ থেকে মুক্ত নয়। তাই, ঈশ্বরের বাক্য আমাদেরকে আমরা যা দেখি ও যে-বিষয়ের জন্য লালসা করি, সেই ক্ষেত্রে আত্মশাসন অনুশীলন করার জন্য উৎসাহিত করে। (১ করি. ৯:২৫, ২৭; পড়ুন, ১ যোহন ২:১৫-১৭.) ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি ইয়োব ছিলেন এমন একজন, যিনি ক্রমাগত দেখার ও লালসা করার মধ্যে যে-জোরালো সম্পর্ক রয়েছে, সেই বিষয়টা স্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি নিজ চক্ষুর সহিত নিয়ম করিয়াছি; অতএব যুবতীর প্রতি কটাক্ষপাত কেন করিব?” (ইয়োব ৩১:১) ইয়োব একজন স্ত্রীলোককে অনৈতিকভাবে স্পর্শ করাকে কেবল প্রত্যাখ্যানই করেননি কিন্তু সেইসঙ্গে তার মনে এই ধরনের চিন্তাকে এমনকী স্থানও দেননি। মনকে যে অনৈতিক চিন্তাভাবনা থেকে বিশুদ্ধ রাখতে হবে, সেই সম্বন্ধে যিশু জোর দিয়েছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “যে কেহ কোন স্ত্রীলোকের প্রতি কামভাবে দৃষ্টিপাত করে, সে তখনই মনে মনে তাহার সহিত ব্যভিচার করিল।”—মথি ৫:২৮.

আমাদের অলীক বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা উচিত

৯. (ক) কেন আমাদের বিশেষ করে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকতে হবে? (খ) এমনকী এক পলকের জন্যও পর্নোগ্রাফি দেখার ফল কী হতে পারে?

আজকের জগতে, পর্নোগ্রাফির প্রতি “দৃষ্টিপাত করে” চলা, বিশেষ করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে, দিন দিন খুবই সাধারণ হয়ে উঠেছে। আমাদের এই ধরনের সাইটগুলো খুঁজতে হয় না—এই সাইটগুলোই আমাদেরকে খুঁজে নেয়! কীভাবে? প্রলুব্ধকর চিত্রসহ একটা বিজ্ঞাপন হয়তো হঠাৎ করেই একজনের কম্পিউটার স্ক্রিনে ভেসে উঠতে পারে। অথবা এমনকী সাধারণ ই-মেইল দেখার জন্য সেটা একবার খোলা হলে হঠাৎ করেই হয়তো পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত ছবি চলে আসতে পারে, যেটা এমনভাবে তৈরি যে, সেখান থেকে বের হয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকী একজন ব্যক্তি যদি সেটা ডিলিট করার আগে মাত্র এক ঝলকও তা দেখেন, তাহলেও সেই চিত্র ইতিমধ্যেই তার মনের মধ্যে গেঁথে যায়। মাত্র এক পলকের জন্যও পর্নোগ্রাফি দেখার পরিণতি দুঃখজনক হতে পারে। এর ফলে একজন ব্যক্তি হয়তো বিবেকের দংশন অনুভব করতে পারেন ও সেইসঙ্গে তাকে তার মন থেকে অনৈতিক চিত্রগুলো মুছে ফেলার জন্য লড়াই করতে হতে পারে। কিন্তু, এর চেয়েও ক্ষতিকর বিষয় হল, যে-ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে “দৃষ্টিপাত করে” চলেন, তিনি প্রকাশ করেন যে, তিনি এখনও তার হৃদয়ের অসংগত আকাঙ্ক্ষাগুলোকে মৃত্যুসাৎ করেননি।—পড়ুন, ইফিষীয় ৫:৩, ৪, ১২; কল. ৩:৫, ৬.

১০. কেন বিশেষভাবে ছোটো ছেলে-মেয়েরা পর্নোগ্রাফির ক্ষেত্রে ঝুঁকির মুখে রয়েছে আর তাদের তা দেখার ফল কী হতে পারে?

১০ ছোটো ছেলে-মেয়েরা তাদের স্বাভাবিক কৌতূহলের কারণে পর্নোগ্রাফির প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে। যদি এইরকমটা হয়ে থাকে, তাহলে এর ফলে হয়তো যৌন সংক্রান্ত বিষয়ের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়তে পারে। একটা রিপোর্ট বলে, এগুলোর প্রভাব স্বাভাবিক যৌনতার প্রতি বিকৃত মনোভাব থেকে শুরু করে আরও যা হতে পারে তা হল, “এক উত্তম ও প্রেমময় সম্পর্ক বজায় রাখা কঠিন হয়; নারীদের প্রতি এক অবাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে; আর খুব সম্ভবত পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তি জন্মে, যা স্কুলের কাজকর্মে, বন্ধুত্বের ও পারিবারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।” এটা পরবর্তী সময়ে একটা বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে এমনকী আরও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

১১. পর্নোগ্রাফি দেখার বিপদ সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করার জন্য একটা উদাহরণ বলুন।

১১ “একজন যিহোবার সাক্ষি হওয়ার আগে আমার যে-সমস্ত আসক্তি ছিল, সেগুলোরর মধ্যে পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তি দূর করাই ছিল সবচেয়ে কঠিন বিষয়,” একজন খ্রিস্টান ভাই লিখেছিলেন। “আমি এখনও অদ্ভুত সময়গুলোতে এই প্রতিচ্ছবিগুলো দেখতে পাই—যেগুলোর সূত্রপাত হয় হঠাৎ কোনো একটা গন্ধ, কোনো সংগীত, আমার দেখা কোনো বিষয় অথবা এমনকী কোনো আজেবাজে চিন্তার দ্বারা। এটা এক রোজকার ও ক্রমাগত লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে।” আরেক জন ভাই, ছোটোবেলায় তার বাবা-মা যখন ঘরে থাকত না, তখন তার ন-সাক্ষি বাবার পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত পত্রিকাগুলো দেখতেন। তিনি লিখেছিলেন: “সেই চিত্রগুলো আমার কচি মনে কত ভয়ানক প্রভাবই না ফেলেছিল! তখন থেকে ২৫ বছর পর, এমনকী এখনও, কিছু চিত্র আমার মাথায় ঘুরপাক খায়। যত কঠিন লড়াই-ই করি না কেন, আমি কিছুতেই আমার মন থেকে সেগুলো মুছে ফেলতে পারছি না। ফলে আমি নিজেকে দোষী মনে করি, এমনকী যদিও আমি সেগুলো নিয়ে চিন্তা করি না।” অলীক বিষয়গুলো না দেখার দ্বারা এইরকম পীড়নকর অনুভূতিকে পরিহার করা কতই না বিজ্ঞতার কাজ! কীভাবে একজন ব্যক্তি তা করতে পারেন? তাকে ‘সমুদয় চিন্তাকে বন্দি করিয়া খ্রীষ্টের আজ্ঞাবহ করিবার’ জন্য প্রচেষ্টা করতে হবে।—২ করি. ১০:৫.

১২, ১৩. কোন অলীক বিষয়গুলো দেখা খ্রিস্টানদের অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে এবং কেন?

১২ এড়িয়ে চলার মতো আরেকটা “জঘন্য” বা অলীক বিষয় হচ্ছে সেই ধরনের আমোদপ্রমোদ, যেগুলো বস্তুবাদিতা বা জাদুবিদ্যাকে তুলে ধরে অথবা দৌরাত্ম্য, রক্তপাত ও মৃত্যুকে উপস্থাপন করে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১০১:৩.) খ্রিস্টান বাবা-মারা তাদের ঘরে কোন বিষয়গুলো দেখার অনুমতি দেবে, সেটা নির্বাচন করার বিষয়ে যিহোবার কাছে দায়বদ্ধ। এটা ঠিক যে, কোনো সত্য খ্রিস্টানই ইচ্ছাকৃতভাবে প্রেতচর্চায় জড়িত হবেন না। তা সত্ত্বেও, জাদুবিদ্যাকে তুলে ধরে এমন সিনেমা, টেলিভিশনের ধারাবাহিক অনুষ্ঠানগুলো, ভিডিও গেমগুলো এবং এমনকী কমিক্‌স ও ছোটোদের বইপত্রের বিষয়ে বাবা-মাদের সতর্ক থাকতে হবে।—হিতো. ২২:৫.

১৩ আমরা যুবক বা বৃদ্ধ যে-ই হই না কেন, আমাদের চোখ দ্বারা সেইসব ভিডিও গেমগুলো দেখে আনন্দ খোঁজা উচিত নয়, যেগুলো দৌরাত্ম্যকে তুলে ধরে এবং রক্তাক্ত খুনোখুনিকে বাস্তব হিসেবে চিত্রিত করে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১১:৫.) আমাদের এমন যেকোনো কর্মকাণ্ডের ওপর নিজেদের মনকে কেন্দ্রীভূত করা প্রত্যাখ্যান করতে হবে, যেগুলোকে যিহোবা নিন্দা করেন। মনে রাখবেন যে, শয়তান আমাদের চিন্তাভাবনাকে লক্ষ্যবস্তু করে চলেছে। (২ করি. ১১:৩) যেসব আমোদপ্রমোদ হয়তো গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়, এমনকী সেগুলো দেখার জন্যও অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা হলে, পারিবারিক উপাসনা, প্রতিদিন বাইবেল পড়া এবং সভাগুলোর জন্য আমাদের প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে তা বাধাস্বরূপ হতে পারে।—ফিলি. ১:৯, ১০, পাদটীকা।

যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করুন

১৪, ১৫. খ্রিস্টের বেলায় শয়তানের তৃতীয় প্রলোভনের উল্লেখযোগ্য বিষয়টা কী ছিল আর কীভাবে যিশু সেটা প্রতিহত করতে পেরেছিলেন?

১৪ দুঃখের বিষয় হল, এই দুষ্ট জগতে আমরা কিছু অলীক বিষয় দেখা এড়াতে পারি না। এমনকী যিশুকেও এই ধরনের বিষয়গুলোর মুখোমুখি হতে হয়েছিল। যিশুকে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে শয়তানের তৃতীয় প্রচেষ্টায় “দিয়াবল তাঁহাকে অতি উচ্চ এক পর্ব্বতে লইয়া গেল, এবং জগতের সমস্ত রাজ্য ও সেই সকলের প্রতাপ দেখাইল।” (মথি ৪:৮) কেন শয়তান এইরকমটা করেছিল? কোনো সন্দেহ নেই যে, সে চোখের জোরালো প্রভাবকে স্বীয়স্বার্থে কাজে লাগাতে চেয়েছিল। জগতের সমস্ত রাজ্যের মহিমা দেখা হয়তো যিশুকে জাগতিক বিশিষ্টতা লাভ করার আকাঙ্ক্ষার কাছে নতিস্বীকার করতে প্ররোচিত করতে পারত। যিশু কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

১৫ যিশু এই প্রলুব্ধকর প্রস্তাবের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেননি। তিনি তাঁর হৃদয়ে মন্দ আকাঙ্ক্ষাকে স্থান দেননি। আর দিয়াবলের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাঁকে সেটা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাও করতে হয়নি। যিশু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন। “দূর হও, শয়তান,” তিনি আদেশ দিয়েছিলেন। (মথি ৪:১০) যিশু যিহোবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন এবং তাঁর জীবনের উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে উত্তর দিয়েছিলেন, যা ছিল ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করা। (ইব্রীয় ১০:৭) এর ফলে, শয়তানের ধূর্ত ফন্দিকে যিশু সফলভাবে ব্যর্থ করেছিলেন।

১৬. শয়তানের প্রলোভনগুলো প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে যিশুর উদাহরণ থেকে আমরা কোন শিক্ষাগুলো লাভ করতে পারি?

১৬ যিশুর উদাহরণ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। প্রথমত, কেউই শয়তানের কলাকৌশল থেকে মুক্ত নয়। (মথি ২৪:২৪) দ্বিতীয়ত, যে-বিষয়টার ওপর আমরা আমাদের চোখকে কেন্দ্রীভূত করি, সেটা আমাদের হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষাকে তীব্র করতে পারে, হতে পারে তা ভালো অথবা খারাপ। তৃতীয়ত, আমাদেরকে বিপথে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায় শয়তান যথাসাধ্যভাবে আমাদের ‘চক্ষুর অভিলাষকে’ স্বীয়স্বার্থে কাজে লাগাবে। (১ পিতর ৫:৮) আর চতুর্থত, আমরাও দিয়াবলের প্রতিরোধ করতে পারি, বিশেষ করে যদি আমরা অবিলম্বে পদক্ষেপ নিয়ে থাকি।—যাকোব ৪:৭; ১ পিতর ২:২১.

আপনার চোখ “সরল” রাখুন

১৭. আমরা কী করব, তা স্থির করার জন্য অলীক বিষয়গুলোর মুখোমুখি হওয়ার আগে পর্যন্ত অপেক্ষা করাটা কেন মূর্খতার কাজ?

১৭ যিহোবার প্রতি আমাদের উৎসর্গীকরণের অন্তর্ভুক্ত হল যা-কিছু অলীক, সেগুলো থেকে দূরে থাকার বিষয়ে এক গুরুগম্ভীর প্রতিজ্ঞা। ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার ব্যাপারে অঙ্গীকার করে, আমরা গীতরচকের সঙ্গে এই কথা বলায় যোগ দিই: “আমি সমস্ত কুপথ হইতে আপন চরণ নিবৃত্ত করিয়াছি, যেন আমি তোমার বাক্য পালন করি।” (গীত. ১১৯:১০১) আমরা কী করব, তা স্থির করার জন্য অলীক বিষয়গুলোর মুখোমুখি হওয়ার আগে পর্যন্ত অপেক্ষা করা মূর্খতার কাজ। শাস্ত্র যে-বিষয়গুলোকে নিন্দা করে, সেগুলো আমাদের কাছে স্পষ্ট করা হয়েছে। আমরা শয়তানের কলাকৌশল সম্বন্ধে অজ্ঞাত নই। যিশুকে কখন পাথরগুলোকে রুটি বানানোর জন্য প্রলোভন দেখানো হয়েছিল? তিনি চল্লিশ দিবারাত্র অনাহারে থেকে শেষে ‘ক্ষুধিত হইলে’ পর। (মথি ৪:১-৪) শয়তান বুঝতে পারে যে, কখন আমরা দুর্বল আর খুব সম্ভবত প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করব। তাই, এই বিষয়গুলো নিয়ে মনোযোগপূর্বক বিবেচনা করার সময় এখনই। এই ক্ষেত্রে বিলম্ব করবেন না! আমরা যদি প্রতিদিন যিহোবার প্রতি আমাদের উৎসর্গীকরণের অঙ্গীকারের কথা মনে রাখি, তাহলে আমরা অলীক বিষয়গুলো থেকে দূরে থাকার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হব।—হিতো. ১:৫; ১৯:২০.

১৮, ১৯. (ক) এক “সরল” চোখ ও “মন্দ” চোখের মধ্যে পার্থক্য করুন। (খ) কেন উপকারজনক বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করে চলা গুরুত্বপূর্ণ আর এই ব্যাপারে ফিলিপীয় ৪:৮ পদে কোন উপদেশ দেওয়া হয়েছে?

১৮ প্রতিদিন আমরা এমন প্রচুর বিক্ষেপের মুখোমুখি হই, যেগুলো আমাদের চোখে আবেদনময় আর সেগুলোর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই, আমাদের চোখকে “সরল” রাখার বিষয়ে যিশুর উপদেশকে আমরা আগের চেয়ে আরও বেশি উপলব্ধি করতে পারি। (মথি ৬:২২, ২৩) এক “সরল” চোখ সম্পূর্ণরূপে একটা উদ্দেশ্যের ওপর কেন্দ্রীভূত থাকে আর তা হল ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করা। অন্যদিকে, এক “মন্দ” চোখ হল ধূর্ত, লোভী এবং এমন বিষয়গুলোর প্রতি আকৃষ্ট হয়, যেগুলো অলীক।

১৯ মনে রাখবেন যে, আমরা আমাদের মনের মধ্যে যা গ্রহণ করি, সেগুলো আমাদের হৃদয়ের ওপর এক প্রভাব ফেলে। উপকারজনক বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করে চলা কতই না গুরুত্বপূর্ণ। (পড়ুন, ফিলিপীয় ৪:৮.) বস্তুতপক্ষে, আমরা যেন গীতরচকের এই প্রার্থনার সঙ্গে ক্রমাগত সুর মিলাই: “অলীকতা-দর্শন হইতে আমার চক্ষু ফিরাও।” এরপর আমরা যখন সেই প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে চলার প্রচেষ্টা করি, তখন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা “[তাঁহার] পথে [আমাদিগকে] সঞ্জীবিত” করবেন।—গীত. ১১৯:৩৭; ইব্রীয় ১০:৩৬.

আমাদের কী মনে রাখা উচিত . . .

• আমাদের চোখ, মন ও হৃদয়ের মধ্যে সংযোগ সম্বন্ধে?

• পর্নোগ্রাফি দেখার বিপদ সম্বন্ধে?

• আমাদের চোখ “সরল” রাখার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

খ্রিস্টানদের কোন অলীক বিষয়গুলো দেখা এড়িয়ে চলতে হবে?