সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সত্য খ্রিস্টানরা ঈশ্বরের বাক্যকে সম্মান করে

সত্য খ্রিস্টানরা ঈশ্বরের বাক্যকে সম্মান করে

সত্য খ্রিস্টানরা ঈশ্বরের বাক্যকে সম্মান করে

“তোমার বাক্যই সত্যস্বরূপ।”—যোহন ১৭:১৭.

এই বিষয়গুলো খুঁজে বের করুন:

৪৯ খ্রিস্টাব্দে যে-সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেটার সঙ্গে পরবর্তী সময়ের গির্জা উপদেষ্টা পরিষদের সভার পার্থক্য কী?

ঈশ্বরের বাক্যের কিছু সমর্থক কারা, যারা মধ্যযুগে বাস করত?

১৮ শতকের শেষের দিকে বিশ্বস্ত খ্রিস্টানরা বাইবেল অধ্যয়নের জন্য কোন পদ্ধতি ব্যবহার করত এবং কেন তা কার্যকারী ছিল?

১. ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র সম্বন্ধে বলুন, যে-ক্ষেত্রটাতে যিহোবার সাক্ষিরা অন্যান্য ধর্মীয় দল থেকে আলাদা।

 যিহোবার সাক্ষিদের একজনের সঙ্গে প্রথম আপনার যে-অর্থপূর্ণ আলোচনা হয়েছিল, তা মনে করে দেখুন। এই সম্বন্ধে আপনি কী মনে করতে পারেন? অনেকে এইরকম উত্তর দিয়ে থাকে, ‘এই বিষয়টা আমাকে অত্যন্ত অভিভূত করেছিল যে, সাক্ষিরা আমার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর বাইবেল থেকে দিয়েছিল।’ পৃথিবীর জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য, মারা গেলে আমাদের কী হয় এবং আমাদের মৃত প্রিয়জনদের জন্য ভবিষ্যতে কী রয়েছে, সেই সম্বন্ধে জানতে পেরে আমরা কত আনন্দিতই না হয়েছিলাম!

২. কিছু কারণ কী, যেগুলোর জন্য আপনি বাইবেলের প্রতি উপলব্ধি দেখিয়েছিলেন?

কিন্তু, আমরা যখন আরও অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলাম, তখন আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে, বাইবেল কেবল আমাদের জীবন, মৃত্যু এবং ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার চেয়ে আরও বেশি কিছু করে থাকে। আমরা এই বিষয়টা উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম যে, বাইবেল হল এই জগতের সবচেয়ে ব্যবহারিক বই। এটির পরামর্শ সবসময়ের জন্য উপযোগী এবং যারা সতর্কতার সঙ্গে এগুলো পালন করে, তারা এক সফল এবং সুখী জীবনযাপন করতে পারবে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১:১-৩.) প্রকৃত খ্রিস্টানরা বাইবেলকে সবসময় “মনুষ্যদের বাক্য নয়, কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য বলিয়া তাহা” গ্রহণ করে থাকে এবং “তাহা ঈশ্বরের বাক্যই বটে।” (১ থিষল. ২:১৩) এক সংক্ষিপ্ত ঐতিহাসিক পর্যালোচনা সেই ব্যক্তিদের মধ্যে বৈসাদৃশ্য তুলে ধরবে, যারা প্রকৃতই ঈশ্বরের বাক্যকে সম্মান করে এবং যারা করে না।

এক জটিল সমস্যার সমাধান করা হয়

৩. কোন বিষয়টা প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর একতাকে হুমকির মুখে ফেলেছিল আর কী ঝুঁকির মুখে ছিল?

প্রথম অছিন্নত্বক পরজাতীয় ব্যক্তি কর্ণীলিয়ের অভিষেকের পর, ১৩ বছরের মধ্যে এমন একটা বিষয় উত্থাপিত হয়, যা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর একতাকে হুমকির মুখে ফেলেছিল। বৃদ্ধিরত পরজাতীয়রা খ্রিস্টীয় বিশ্বাসকে নিজের করে নিচ্ছিল। প্রশ্ন উঠেছিল যে, বাপ্তিস্মের জন্য নিজেদেরকে উপস্থাপিত করার আগে পুরুষদেরকে কি যিহুদি রীতি অনুযায়ী ত্বক্‌চ্ছেদ করতে হবে? একজন যিহুদির পক্ষে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সহজ ছিল না। যিহুদিরা, যারা ব্যবস্থা পালন করত, তারা এমনকী একজন পরজাতীয় ব্যক্তির ঘরেই প্রবেশ করত না আর তাদের সঙ্গে উষ্ণ সাহচর্য উপভোগ করা তো দূরের কথা। যিহুদি খ্রিস্টানরা তাদের পূর্বের ধর্ম ত্যাগ করার জন্য ইতিমধ্যেই প্রচণ্ড তাড়না ভোগ করেছে। তারা যদি অছিন্নত্বক পরজাতীয় ব্যক্তিদেরকে তাদের মাঝে স্বাগত জানানোর মতো দুঃসাহস দেখায়, তাহলে ব্যবস্থা পালনকারী যিহুদি এবং খ্রিস্টানদের মধ্যে ফাটল কেবল আরও প্রসারিতই হবে আর এতে খ্রিস্টানরা আরও নিন্দার মুখোমুখি হবে।—গালা. ২:১১-১৪.

৪. সমস্যার সমাধান করার জন্য কাদেরকে ডাকা হয়েছিল আর এই ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষদর্শীদের মনে হয়তো কোন প্রশ্নগুলোর উদয় হয়েছিল?

উনপঞ্চাশ খ্রিস্টাব্দে, যিরূশালেমের প্রেরিতরা এবং প্রাচীনবর্গ, যারা নিজেরা ছিন্নত্বক যিহুদি ছিল, তারা ‘এই বিষয় আলোচনা করিবার জন্য সমবেত হইল।’ (প্রেরিত ১৫:৬) তাদের সভা অপ্রাসঙ্গিক খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে কোনো একঘেঁয়ে ধর্মীয় বিতর্ক ছিল না বরং সেটা বাইবেলের শিক্ষাগুলো নিয়ে এক রোমাঞ্চকর আলোচনা ছিল। এই বিষয়ের পক্ষে-বিপক্ষে অনেক জোরালো মতামত প্রকাশ করা হয়েছিল। তারা কি তাদের সিদ্ধান্তের ওপর কারো ব্যক্তিগত পছন্দ অথবা প্রতিকূল ধারণাকে প্রভাব ফেলতে দিয়েছিল? দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রাচীনরা কি সেই পর্যন্ত সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছিল, যতক্ষণ পর্যন্ত না ইস্রায়েলের ধর্মীয় পরিস্থিতি তাদের জন্য আরও ভালো হয়ে ওঠে? অথবা তারা কি কেবল এক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অবশেষে এমন কোনো বিষয়ে একমত হয়েছিল, যেটাকে তারা আসলেই সঠিক বলে মনে করত না?

৫. কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ দিক দিয়ে ৪৯ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত যিরূশালেমের সভাটা, পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে অনুষ্ঠিত গির্জার উপদেষ্টা পরিষদ থেকে আলাদা ছিল?

বর্তমানে, গির্জার উপদেষ্টা পরিষদে আপোশ করা এবং চাপ প্রয়োগ করা এক সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু, যিরূশালেমের সেই সভাতে কোনো আপোশ করা হয়নি; কিংবা ভোট প্রদান করার জন্য কোন চাপও প্রয়োগ করা হয়নি। অধিকন্তু, সর্বসম্মত এক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়েছিল। কীভাবে এটা সম্ভব হয়েছিল? সেখানে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে যতটাই জোরালো থাকুন না কেন, উপস্থিত প্রত্যেকে ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিল আর সেই পবিত্র লেখাগুলো বিষয়টা সমাধান করার মূল চাবিকাঠি হয়ে উঠেছিল।—পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৯:৯৭-১০১.

৬, ৭. কীভাবে শাস্ত্র-এর সাহায্যে ত্বক্‌চ্ছেদের বিষয়টা মীমাংসা করা হয়েছিল?

যে-বাক্যাংশগুলো বিষয়টা সমাধান করতে সাহায্য করেছিল, সেটা হল আমোষ ৯:১১, ১২ পদ। প্রেরিত ১৫:১৬-১৮ পদে উদ্ধৃত কথা অনুযায়ী লেখা আছে: “আমি ফিরিয়া আসিব, দায়ূদের পতিত কুটীর পুনরায় গাঁথিব, তাহার ধ্বংসস্থান সকল পুনরায় গাঁথিব, আর তাহা পুনরায় স্থাপন করিব; যেন অবশিষ্ট লোক সকল প্রভুর [ঈশ্বরের] অন্বেষণ করে, আর যে জাতিগণের উপরে আমার নাম কীর্ত্তিত হইয়াছে, তাহারা সকলেও করে, প্রভু [ঈশ্বর] এই কথা কহেন।”

‘কিন্তু, দাঁড়ান,’ একজন ব্যক্তি হয়তো আপত্তি জানাতে পারেন ‘এই পাঠ্যাংশ বলে না যে, পরজাতীয় বিশ্বাসীদের পক্ষে ত্বক্‌চ্ছেদ করা অপ্রয়োজনীয় ছিল।’ এটা সত্য; তবে, যিহুদি খ্রিস্টানরা বিষয়টা বুঝতে পেরেছিল। ছিন্নত্বক পরজাতীয় ব্যক্তিদেরকে তারা ‘জাতিগণ’ বলে নয় বরং ভাই বলে গণ্য করত। (যাত্রা. ১২:৪৮, ৪৯) উদাহরণস্বরূপ, ব্যাগস্টারের সেপ্টুয়াজিন্ট সংস্করণ অনুসারে, ইষ্টের ৮:১৭ পদে লেখা আছে, “অনেক পরজাতীয় ব্যক্তি ত্বক্‌চ্ছেদ করেছিল এবং যিহুদি হয়েছিল।” তাই, শাস্ত্র যখন বলেছিল যে, ইস্রায়েলের অবশিষ্ট লোক সকল (যিহুদি এবং ছিন্নত্বক্‌ ধর্মান্তরিত যিহুদি) ও সেইসঙ্গে ‘জাতিগণ’ (অছিন্নত্বক্‌ পরজাতীয়) ঈশ্বরের নামের জন্য এক লোক হয়ে উঠেছিল, তখন বার্তাটা স্পষ্ট ছিল। সেই পরজাতীয় ব্যক্তিদের ত্বক্‌চ্ছেদ করার প্রয়োজন ছিল না, যারা খ্রিস্টান হতে চাইত।

৮. যে-সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সেখানে সাহস কোন ভূমিকা পালন করেছিল?

ঈশ্বরের বাক্য এবং তাঁর আত্মা সেই আন্তরিক খ্রিস্টানদেরকে “একমত” হতে পরিচালিত করেছিল। (প্রেরিত ১৫:২৫) যদিও সেই সিদ্ধান্ত হয়তো যিহুদি খ্রিস্টানদের ওপর আরও বেশি তাড়না নিয়ে এসেছিল, তবুও বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা বাইবেলভিত্তিক সিদ্ধান্তকে পূর্ণরূপে সমর্থন করেছিল।—প্রেরিত ১৬:৪, ৫.

এক লক্ষণীয় বৈসাদৃশ্য

৯. একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কী, যা সত্য উপাসনাকে কলুষতার দিকে পরিচালিত করেছিল আর কোন উল্লেখযোগ্য মতবাদ নিয়ে কথা উঠেছিল?

প্রেরিত পৌল ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, প্রেরিতদের মৃত্যুর পর, খ্রিস্টীয় বিশ্বাস মিথ্যা শিক্ষাগুলোর দ্বারা কলুষিত হয়ে পড়বে। (পড়ুন, ২ থিষলনীকীয় ২:৩, .) সেই ব্যক্তিদের মধ্যে যারা “নিরাময় শিক্ষা” সহ্য করেনি না বা মেনে নেয়নি, তাদের মধ্যে কেউ কেউ দায়িত্বপূর্ণ অবস্থানে ছিল। (২ তীম. ৪:৩) পৌল তার দিনের প্রাচীনদেরকে সাবধান করে দিয়েছিলেন: “তোমাদের মধ্য হইতেও কোন কোন লোক উঠিয়া শিষ্যদিগকে আপনাদের পশ্চাৎ টানিয়া লইবার জন্য বিপরীত কথা কহিবে।” (প্রেরিত ২০:৩০) দ্যা নিউ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা একটা প্রধান বিষয় সম্বন্ধে বর্ণনা করে, যা বিপরীত বা বিকৃত যুক্তি করার দিকে পরিচালিত করেছিল: “যে-খ্রিস্টানদের গ্রিক দর্শনবিদ্যা সম্বন্ধে কিছু প্রশিক্ষণ ছিল, তারা তাদের বিশ্বাসকে সেটার ভিত্তিতে প্রকাশ করার প্রয়োজন অনুভব করেছিল আর তা তাদের নিজেদের মেধার পরিতৃপ্তির জন্য এবং শিক্ষিত পরজাতীয় ব্যক্তিদের ধর্মান্তরিত করার জন্য।” যে-গুরুত্বপূর্ণ মতবাদকে পৌত্তলিক দর্শন বিকৃত করে দিয়েছিল, সেটা যিশু খ্রিস্টের শনাক্তিকরণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বাইবেল তাঁকে ঈশ্বরের পুত্র বলে অভিহিত করে; গ্রিক দর্শনবিদ্যাপ্রেমীরা জোর গলায় দাবি করে যে, তিনি হলেন ঈশ্বর।

১০. খ্রিস্টের শনাক্তিকরণের বিষয়টাকে কীভাবে সমাধান করা যেত?

১০ প্রশ্নটা নিয়ে বেশ কয়েকটা গির্জার উপদেষ্টা পরিষদে তর্কবিতর্ক হয়েছিল। বিষয়টা হয়তো বেশ সহজেই সমাধান করা যেত, যদি প্রতিনিধিরা শাস্ত্রের ওপর উপযুক্ত গুরুত্ব প্রদান করত কিন্তু অধিকাংশই তা করেনি। বস্তুতপক্ষে, বেশিরভাগ ব্যক্তিই পরিষদে আসার আগেই তাদের মন স্থির করে ফেলেছিল এবং তাদের অবস্থানে আগের চেয়ে আরও বেশি বদ্ধমূল ধারণা নিয়ে ফিরে গিয়েছিল। এই সভার কারণে যে-নিয়ম এবং ঘোষণা প্রকাশ করা হয়েছিল, সেখানে শাস্ত্রের কোনো উল্লেখ ছিল না বললেই চলে।

১১. তথাকথিত গির্জার ফাদারদের কর্তৃত্বের প্রতি কোন গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং কেন?

১১ কেন আরও ভালোভাবে শাস্ত্র বিবেচনা করা হয়নি? ইতিহাসবিদ চার্লস ফ্রিম্যান উত্তর দেন, যারা এই বিষয়টা বিশ্বাস করত যে, যিশুই হলেন ঈশ্বর, তারা “যিশুর এমন অনেক কথা খণ্ডন করাকে কঠিন বলে মনে করত, যেগুলো দেখাত যে, তিনি পিতা ঈশ্বরের অধীন।” ফল স্বরূপ, সুসমাচারের পরিবর্তে বরং গির্জার প্রথা এবং পরবর্তী সময়ের কর্তৃপক্ষের মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠে। এখনও পর্যন্ত, অনেক পাদরি তথাকথিত গির্জার ফাদারদের এমন কথাগুলোকে ঈশ্বরের বাক্যের চেয়ে আরও উচ্চে তুলে ধরে, যেগুলো অনুপ্রাণিত নয়! আপনি যদি কখনো সেমিনারির কোনো ছাত্রের সঙ্গে ত্রিত্বের মতবাদ নিয়ে কথা বলে থাকেন, তা হলে হয়তো বিষয়টা লক্ষ করেছেন।

১২. সম্রাট কোন নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করেছিলেন?

১২ সেইসমস্ত উপদেষ্টা পরিষদের তর্কবিতর্কের এক উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল, রোমীয় সম্রাটদের হস্তক্ষেপ। এই বিষয়ে, অধ্যাপক রিচার্ড ই. রুবেনস্টাইন নাইসিয়ার উপদেষ্টা পরিষদ সম্বন্ধে লিখেছিলেন: “কনস্ট্যানটিন [বিশপদেরকে] যে-অনুগ্রহ দেখিয়েছিলেন এবং তাদেরকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছিলেন, তা তারা স্বপ্নেও ভাবেনি। এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে, এই নতুন সম্রাট তাদের সমস্ত গির্জা ফিরিয়ে দেন বা বলতে গেলে সেগুলো পুনর্নির্মাণ করেন, তাদের সেই চাকরি এবং সম্মান ফিরিয়ে দেন, যা তাদের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়েছিল . . . তিনি খ্রিস্টান পাদরিদেরকে সেইসমস্ত বিশেষ সুযোগ প্রদান করেছিলেন, যেগুলো আগে পৌত্তলিক পুরোহিতদের দেওয়া হতো।” ফল স্বরূপ, “কনস্ট্যানটিন, নাইসিয়ার বিভিন্ন ঘটনাগুলোতে জোরালো প্রভাব ফেলার—হতে পারে এমনকী নিয়ন্ত্রণ করার—মতো এক অবস্থানে ছিলেন।” চার্লস ফ্রিম্যান নিশ্চিত করেছিলেন: “এরপর, সম্রাট কেবল গির্জাকে শক্তিশালী করার ওপরই হস্তক্ষেপ করতেন না কিন্তু সেইসঙ্গে মতবাদের ওপরও প্রভাব বিস্তার করতেন।”—পড়ুন, যাকোব ৪:৪.

১৩. কোন বিষয়গুলো পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে গির্জার নেতাদের বাইবেলের সহজ শিক্ষাগুলো উপেক্ষা করার জন্য প্রভাবিত করেছিল বলে আপনি মনে করেন?

১৩ যেখানে গির্জার উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের কাছে যিশু খ্রিস্টের সঠিক শনাক্তিকরণ বের করা কঠিন বলে মনে হয়েছিল, সেখানে অনেক সাধারণ লোকের এইরকম কোনো সমস্যাই ছিল না। যেহেতু তারা সম্রাটের স্বর্ণ দ্বারা তাদের থলে পূর্ণ করার অথবা গির্জার উচ্চপদস্থ ব্যক্তি হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের কেরিয়ারকে উন্নত করার ব্যাপারে আগ্রহী ছিল না, তাই তারা বিভিন্ন বিষয়কে আরও বাস্তব উপায়ে অর্থাৎ শাস্ত্রের আলোকে দেখতে সমর্থ হয়েছিল। আর সকলের মতে তারা তা-ই করেছিল। সেই সময়কার একজন ঈশ্বরতত্ত্বিবদ, নিসার গ্রেগরি সাধারণ লোকেদের সম্বন্ধে এই অবজ্ঞাপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন: “কাপড়ের ব্যাবসায়ী, পোদ্দার এবং মুদি, সকলেই ঈশ্বরতত্ত্বিবদ। আপনি যদি আপনার অর্থের মূল্য সম্বন্ধে জানতে চান, তাহলে কিছু দার্শনিক ব্যাখ্যা করবে যে, পুত্র কীভাবে পিতা থেকে আলাদা। আপনি যদি রুটির দাম জিজ্ঞেস করেন, তাহলে আপনার উত্তর হল, পিতা পুত্রের চেয়ে মহান। আপনি যদি জানতে চান যে, স্নান করার ব্যবস্থা করা হয়েছে কি না, তাহলে আপনি এই ঘোষণা শুনতে পাবেন যে, পুত্রকে কোনো কিছু থেকেই সৃষ্টি করা হয়নি।” হ্যাঁ, উচ্চপদস্থ সদস্যদের বিপরীতে, অনেক সাধারণ লোক তাদের উপসংহারকে ঈশ্বরের বাক্য ব্যবহার করার দ্বারা সমর্থন করত। গ্রেগরি এবং তার সহযোগীরা তাদের কথা শুনলে কতই না ভালো করত!

“গোম” এবং “শ্যামাঘাস” একত্রে বৃদ্ধি পায়

১৪. কেন আমরা এই উপসংহারে আসতে পারি যে, প্রথম শতাব্দী থেকে পৃথিবীতে সবসময় কিছু প্রকৃত অভিষিক্ত খ্রিস্টান রয়েছে?

১৪ একটা নীতিগল্পে যিশু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, প্রথম শতাব্দী থেকে পৃথিবীতে সবসময় কিছু প্রকৃত অভিষিক্ত খ্রিস্টান থাকবে। তিনি তাদেরকে ‘গোমের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা ‘শ্যামাঘাসের’ মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। (মথি ১৩:৩০) অবশ্য, আমরা একেবারে নিশ্চিত করে বলতে পারি না যে, কোন ব্যক্তিরা বা কোন দল অভিষিক্ত গম শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিল কিন্তু আমরা এই বিষয়টা নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, সবসময় এমন কিছু ব্যক্তি ছিল, যারা সাহসের সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্যকে সমর্থন করেছিল এবং গির্জার অশাস্ত্রীয় শিক্ষাগুলোকে উন্মোচন করে দিয়েছিল। আসুন আমরা কয়েকটা উদাহরণ বিবেচনা করে দেখি।

১৫, ১৬. এমন কিছু ব্যক্তির নাম বলুন যারা ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিল।

১৫ ফ্রান্সের লিয়ন্সের আর্চবিশপ এগোবার্ড (৭৭৯-৮৪০ খ্রিস্টাব্দ) প্রতিমাপূজা, সাধুদের উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত বিভিন্ন গির্জা এবং গির্জার অশাস্ত্রীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং অভ্যাসগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। তার সমসাময়িক একজন ব্যক্তি, বিশপ ক্লডিয়াসও গির্জার রীতিনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং সাধুদের উদ্দেশে প্রার্থনা করার এবং তাদের স্মৃতিচিহ্নগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। একাদশ শতাব্দীতে, ফ্রান্সের ট্যুরসের আর্চডিকন বিরিংগারিয়াস ক্যাথলিকদের দ্রব্যান্তরীকরণের (রুটি, দ্রাক্ষারস ইত্যাদির খ্রিস্টের রক্তমাংসে রূপান্তরণের) শিক্ষাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন বলে তাকে গির্জা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। অধিকন্তু, তিনি বাইবেলকে গির্জার রীতিনীতি থেকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করতেন।

১৬ দ্বাদশ শতাব্দীতে, ব্রুর পিটার এবং লুসেনির হেনরি নামে দুজন বাইবেলের সত্যের প্রেমিকের উদয় হয়। পিটার শিশু বাপ্তিস্ম, দ্রব্যান্তরীকরণ, মৃতদের জন্য প্রার্থনা করা এবং ক্রুশের উপাসনা করার বিষয়ে ক্যাথলিকদের যে-শিক্ষা ছিল, সেটাকে শাস্ত্রের সঙ্গে মেলাতে পারেননি বলে যাজকপদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। ১১৪০ সালে পিটারকে তার বিশ্বাসের কারণে জীবন দিতে হয়েছিল। সন্ন্যাসী হেনরী গির্জার কলুষিত অভ্যাস ও সেইসঙ্গে গির্জার ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বিভিন্ন অশাস্ত্রীয় দিকের বিরুদ্ধে জনসম্মুখে কথা বলেছিলেন। তাকে ১১৪৮ সালে গ্রেপ্তার করা হয় আর তিনি তার বাকি জীবন জেলে কাটান।

১৭. ওয়ালডো এবং তার অনুসারীরা কোন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো নিয়েছিল?

১৭ প্রায় যে-সময়ে ব্রুর পিটারকে গির্জার সমালোচনা করার দুঃসাহসের কারণে জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল, সেই সময়ে একজন ব্যক্তির জন্ম হয়েছিল, যিনি পরবর্তী সময়ে বাইবেলের সত্যকে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে এক জোরালো প্রভাব ফেলেছিলেন। তার পদবী ছিল ভলডেস বা ওয়ালডো। * তিনি ব্রুর পিটার এবং লুসেনির হেনরির মতো নন বরং একজন সাধারণ লোক ছিলেন তবে তিনি ঈশ্বরের বাক্যকে এতটাই মূল্যবান বলে গণ্য করতেন যে, তিনি তার বস্তুগত বিষয়সম্পত্তি বিসর্জন দিয়েছিলেন এবং বাইবেলের কিছু অংশ এমন একটা ভাষায় অনুবাদ করার ব্যবস্থা করেছিলেন, যে-ভাষায় সাধারণত দক্ষিণ-পূর্ব ফ্রান্সের লোকেরা কথা বলত। কেউ কেউ তাদের নিজেদের ভাষায় বাইবেলের বার্তা শুনতে পেয়ে এতটাই রোমাঞ্চিত হয়ে গিয়েছিল যে, তারাও তাদের সহায়সম্পদ ত্যাগ করে অন্যদের কাছে বাইবেলের সত্য জানানোর জন্য নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছিল। এতে গির্জা অনেক বিক্ষুব্ধ হয়ে গিয়েছিল। ১১৮৪ সালে এই উদ্যোগী নারী-পুরুষ, যাদেরকে পরবর্তী সময়ে ওয়ালডেনসিস বলে অভিহিত করা হয়, তাদেরকে পোপ গির্জা থেকে বহিষ্কার করে দেন এবং বিশপ তাদেরকে তাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। এই কাজের ফলে আসলে বাইবেলের বার্তা অন্যান্য স্থানেও ছড়িয়ে পড়ে। পরিশেষে, ওয়াল্ডো, ব্রুর পিটার এবং লুসেনির হেনির ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেদেরকে ইউরোপের অনেক অংশে দেখা যায়। পরের শতাব্দীগুলোতে বাইবেলের সত্যের অন্যান্য সমর্থকের উদয় হয়: জন ওয়াইক্লিফ (প্রায় ১৩৩০-১৩৮৪), উইলিয়াম টিনডেল (প্রায় ১৪৯৪-১৫৩৬) হেনরি গ্রু (১৭৮১-১৮৬২) জর্জ স্টোর্জ (১৭৯৬-১৮৭৯)।

“ঈশ্বরের বাক্য বদ্ধ হয় নাই”

১৮. আঠারো শতকের শেষের দিকে আন্তরিক বাইবেল ছাত্ররা বাইবেল অধ্যয়নের কোন পদ্ধতি ব্যবহার করত এবং কেন তা কার্যকারী ছিল, তা ব্যাখ্যা করুন।

১৮ তারা যতই চেষ্টা করুক না কেন, বাইবেলের সত্যের শত্রুরা কখনো এই বইয়ের সত্য ছড়িয়ে পড়াকে রোধ করতে পারেনি। “ঈশ্বরের বাক্য বদ্ধ হয় নাই,” ২ তীমথিয় ২:৯ পদ বলে। ১৮৭০ সালে, আন্তরিক বাইবেল ছাত্রদের একটা দল সত্য অনুসন্ধান করতে শুরু করে। তাদের অধ্যয়নের পদ্ধতি কেমন ছিল? কেউ একজন একটা প্রশ্ন উত্থাপন করত। আর তারা সেটা নিয়ে আলোচনা করত। তারা সেই বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সমস্ত শাস্ত্রপদ দেখত আর এরপর তারা যখন এই শাস্ত্রপদগুলোর সামঞ্জস্যের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হতো, তখন তারা অবশেষে তাদের উপসংহার সম্বন্ধে বলত এবং সেটা লিপিবদ্ধ করে রাখত। এই বিষয়টা জানা কি আপনাকে আশ্বাস দেয় না যে, প্রথম শতাব্দীর প্রেরিত এবং প্রাচীনবর্গের মতো সেই বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা অর্থাৎ ১৮ শতকের শেষের দিকে আমাদের “আধ্যাত্মিক পূর্বপুরুষরা” তাদের বিশ্বাসকে সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখার ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিল?

১৯. দু-হাজার বারো সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ কী এবং কেন তা উপযুক্ত?

১৯ এখনো আমাদের বিশ্বাসের ভিত্তি হল বাইবেল। এই বিষয়টা মনে রেখে যিহোবার সাক্ষিদের পরিচালকগোষ্ঠী ২০১২ সালে আমাদের বার্ষিক শাস্ত্রপদ হিসেবে আস্থা সহকারে বলা যিশুর এই উক্তিকে বেছে নিয়েছে: “তোমার বাক্যই সত্যস্বরূপ।” (যোহন ১৭:১৭) যেহেতু ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করতে চায় এমন প্রত্যেককে সত্যে চলতে হবে, তাই আসুন আমরা সকলে ক্রমাগতভাবে ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা পরিচালিত হওয়ার প্রচেষ্টা করি।

[পাদটীকা]

^ ভলডেসকে মাঝে মাঝে পিয়ারি ভলডেস অথবা পিটার ওয়ালডো বলে অভিহিত করা হয়েছিল কিন্তু তার প্রথম নাম সম্বন্ধে নিশ্চিত জানা যায় না।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৮ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

২০১২ সালের জন্য আমাদের বার্ষিক শাস্ত্রপদ: “তোমার বাক্যই সত্যস্বরূপ।”—যোহন ১৭:১৭

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

ওয়ালডো

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

ওয়াইক্লিফ

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

টিনডেল

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

গ্রু

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

স্টোর্জ