‘ঊর্দ্ধস্থ বিষয়ে মনোযোগ দাও’
‘ঊর্দ্ধস্থ বিষয়ে ভাব [“মনোযোগ দাও,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন], পৃথিবীস্থ বিষয় ভাবিও না।’—কল. ৩:২.
১, ২. (ক) কেন কলসীর মণ্ডলী হুমকির মুখে ছিল? (খ) কোন পরামর্শ কলসীর ভাইদেরকে ঈশ্বরের সঙ্গে বন্ধুত্ব রক্ষা করতে সাহায্য করেছিল?
প্রথম শতাব্দীতে কলসীর খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর একতা হুমকির মুখে ছিল! ভাইদের মধ্যে কেউ কেউ বলছিল, সবাইকে মোশির ব্যবস্থা পালন করতে হবে। অন্যেরা বলছিল, জীবনে আমোদপ্রমোদ উপভোগ করা ভুল। এসব ভিন্ন ভিন্ন ধ্যানধারণার বিপদ সম্বন্ধে পৌল তাদেরকে এভাবে সাবধান করেছিলেন: “দেখিও, দর্শনবিদ্যা ও অনর্থক প্রতারণা দ্বারা কেহ যেন তোমাদিগকে বন্দি করিয়া লইয়া না যায়; তাহা মনুষ্যদের পরম্পরাগত শিক্ষার অনুরূপ, জগতের অক্ষরমালার অনুরূপ, খ্রীষ্টের অনুরূপ নয়।”—কল. ২:৮.
২ সেই সময়ে অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা যদি মানুষের ধ্যানধারণা অনুসরণ করত, তাহলে এর অর্থ হতো তারা ঈশ্বরের পুত্র হওয়ার বিশেষ সুযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। (কল. ২:২০-২৩) ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের মূল্যবান বন্ধুত্বকে রক্ষা করতে সাহায্য করার জন্য পৌল তাদের বলেছিলেন: ‘ঊর্দ্ধস্থ বিষয়ে মনোযোগ দাও, পৃথিবীস্থ বিষয় ভাবিও না।’ (কল. ৩:২) সেই খ্রিস্টানদেরকে স্বর্গে চিরকাল বেঁচে থাকার বিশেষ আশা সম্বন্ধে মনে রাখতে হতো।—কল. ১:৪, ৫.
৩. (ক) অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের কোন আশা রয়েছে? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?
৩ একইভাবে, বর্তমানের অভিষিক্ত খ্রিস্টানরাও ঈশ্বরের রাজ্যের প্রতি এবং স্বর্গে “খ্রীষ্টের সহদায়াদ” হওয়ার বিষয়ে তাদের আশার প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখে। (রোমীয় ৮:১৪-১৭) কিন্তু, সেই ব্যক্তিদের বিষয়ে কী বলা যায়, যাদের পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আশা রয়েছে? পৌলের কথাগুলো কীভাবে তাদের প্রতি প্রযোজ্য? কীভাবে তারা ‘ঊর্ধ্বস্থ বিষয়ের’ প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখে? (যোহন ১০:১৬) অব্রাহাম ও মোশি এমনকী কঠিন সময়েও ঊর্ধ্বস্থ বিষয়ে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রেখেছিল। আমরা কীভাবে তাদেরকে অনুকরণ করতে পারি?
ঊর্ধ্বস্থ বিষয়ে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখা বলতে যা বোঝায়
৪. পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আশা করে এমন খ্রিস্টানরা কীভাবে ঊর্ধ্বস্থ বিষয়ের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে পারে?
৪ যে-ব্যক্তিদের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আশা রয়েছে, তাদেরকে ঊর্ধ্বস্থ বিষয়ের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে হবে। তারা যখন যিহোবা ও তাঁর রাজ্যকে তাদের জীবনে প্রথম স্থানে রাখে, তখন তারা সেটা করে। (লূক ১০:২৫-২৭) খ্রিস্ট সেটাই করেছিলেন আর আমাদেরও তা করতে হবে। (১ পিতর ২:২১) প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের চারপাশে মিথ্যা যুক্তি, জাগতিক দর্শনবিদ্যা ও বস্তুবাদিতার মনোভাব ছিল। বর্তমানে শয়তানের বিধিব্যবস্থায়ও আমরা একই বিষয় দেখতে পাচ্ছি। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ১০:৫.) তাই, আমাদের যিশুকে অনুকরণ করতে হবে এবং যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে নষ্ট করতে পারে এমন যেকোনো কিছুর বিরুদ্ধে সাবধান থাকতে হবে।
৫. টাকাপয়সা ও সহায়সম্পদের বিষয়ে আমাদের মনোভাব সম্বন্ধে আমরা নিজেদেরকে কী জিজ্ঞেস করতে পারি?
৫ আমরা কি টাকাপয়সা ও সহায়সম্পদের বিষয়ে জগতের মনোভাব দ্বারা নিজেদের প্রভাবিত হতে দিয়েছি? আমরা যা চিন্তা করি এবং যে-কাজ করি, সেটার দ্বারা দেখাই আমরা আসলে কোন বিষয়টাকে ভালোবাসি। যিশু বিষয়টাকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন: “যেখানে তোমার ধন, সেইখানে তোমার মনও থাকিবে।” (মথি ৬:২১) নিজেদেরকে আমাদের জিজ্ঞেস করতে হবে, আমাদের কাছে কোন বিষয়টা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কি টাকাপয়সার বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে, আরও ভালো চাকরি পাওয়ার চিন্তা করে অথবা আরও আরামদায়ক জীবনযাপনের চেষ্টা করে অনেকটা সময় কাটাই? না কি আমরা এক সাদাসিধে জীবনযাপনের চেষ্টা করি এবং যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখি? (মথি ৬:২২) যিশু বলেছিলেন, আমরা যদি ‘পৃথিবীতে ধন সঞ্চয় করিবার’ প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখি, তাহলে আমরা যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলতে পারি।—মথি ৬:১৯, ২০, ২৪.
৬. কীভাবে আমরা নিজেদের অসিদ্ধ প্রবণতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হতে পারি?
৬ আমরা অসিদ্ধ আর তাই আমরা খুব সহজেই এমন বিষয়গুলো করে ফেলতে পারি, যেগুলো ভুল। (পড়ুন, রোমীয় ৭:২১-২৫.) আমরা যদি ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার ওপর নির্ভর না করি, তাহলে আমরা হয়তো “রঙ্গরসে ও মত্ততায়,” অনৈতিকতায়, অথবা এমনকী “স্বেচ্ছাচারিতায়” অর্থাৎ ঈশ্বরের আইনের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করায় রত হতে পারি। (রোমীয় ১৩:১২, ১৩) আমরা অনবরত আমাদের অসিদ্ধ প্রবণতার সঙ্গে লড়াই করছি। এই লড়াইয়ে একমাত্র তখনই আমরা জয়ী হতে পারি, যদি আমরা ঊর্ধ্বস্থ বিষয়ের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখি। এর জন্য প্রচেষ্টা প্রয়োজন আর সেই কারণেই পৌল বলেছিলেন: “আমার নিজ দেহকে প্রহার করিয়া দাসত্বে রাখিতেছি।” (১ করি. ৯:২৭) আমাদেরও নিজেদেরকে শাসন করতে হবে। এখন আসুন আমরা এমন দু-জন বিশ্বস্ত ব্যক্তির উদাহরণ আলোচনা করি, যারা ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য যথাসাধ্য করেছিল।—ইব্রীয় ১১:৬.
অব্রাহাম “সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করিলেন”
৭, ৮. (ক) অব্রাহাম ও সারা কোন সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিল? (খ) অব্রাহাম সবসময় কোন বিষয় নিয়ে চিন্তা করতেন?
৭ যিহোবা যখন অব্রাহামকে তার পরিবার নিয়ে কনান দেশে চলে যেতে বলেছিলেন, তখন অব্রাহাম স্বেচ্ছায় সেই আজ্ঞার প্রতি বাধ্য হয়েছিলেন। যিহোবা তখন অব্রাহামের সঙ্গে একটা চুক্তি করার মাধ্যমে তার বিশ্বাস ও বাধ্যতার পুরস্কার দিয়েছিলেন। যিহোবা তাকে বলেছিলেন: ‘আমি তোমা হইতে এক মহাজাতি উৎপন্ন করিব, এবং তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিব।’ (আদি. ১২:২) এরপর, অনেক বছর পার হয়ে গিয়েছিল আর অব্রাহাম ও সারার তখনও কোনো সন্তান হয়নি। যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞা ভুলে গিয়েছেন কি না, তা নিয়ে অব্রাহাম কি সন্দেহ করেছিলেন? সেই সময়ে, অব্রাহামের জীবন সহজ ছিল না। তিনি সমৃদ্ধ ঊর নগরের আরামদায়ক জীবন ত্যাগ করে ১,৬০০ কিলোমিটারেরও (১,০০০ মাইলেরও) বেশি দূরে কনান দেশের দিকে যাত্রা করেছিলেন। তিনি ও তার পরিবার তাঁবুতে থেকেছিলেন, তাদের কাছে সবসময় যথেষ্ট খাবার ছিল না আর কখনো কখনো তারা লুটকারীদের কারণে বিপদ পড়েছিল। (আদি. ১২:৫, ১০; ১৩:১৮; ১৪:১০-১৬) তা সত্ত্বেও, অব্রাহাম ও তার পরিবার ঊরের আরামদায়ক জীবনযাত্রার দিকে ফিরে যেতে চায়নি।—পড়ুন, ইব্রীয় ১১:৮-১২, ১৫.
৮ অব্রাহাম ‘সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করিয়াছিলেন।’ তিনি ‘পৃথিবীস্থ বিষয়ে’ মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেননি। (আদি. ১৫:৬) ঈশ্বর তার কাছে যে-প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি সবসময় সেটা নিয়ে চিন্তা করতেন। যিহোবা অব্রাহামের সেই বিশ্বাস দেখেছিলেন আর তাকে এই কথা বলেছিলেন: “তুমি আকাশে দৃষ্টি করিয়া যদি তারা গণিতে পার, তবে গণিয়া বল।” তারপর তিনি তাকে বলেছিলেন: “এইরূপ তোমার বংশ হইবে।” (আদি. ১৫:৫) এই কথা শুনে অব্রাহাম বুঝতে পেরেছিলেন, যিহোবা তাকে ভুলে যাননি। যত বার তিনি আকাশের তারার দিকে তাকাতেন, তত বারই তার এই কথা মনে পড়ত, যিহোবা তাকে অনেক বংশধর দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন। আর যখন যিহোবার সময় উপস্থিত হয়েছিল, তখন অব্রাহাম এক পুত্রসন্তান লাভ করেন, ঠিক যেমনটা যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।—আদি. ২১:১, ২.
৯. কীভাবে আমরা অব্রাহামকে অনুকরণ করতে পারি?
৯ অব্রাহামের মতো, আমরাও যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ হওয়ার অপেক্ষায় আছি। (২ পিতর ৩:১৩) আমরা যদি ঊর্ধ্বস্থ বিষয়ের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত না রাখি, তাহলে আমরা হয়তো এইরকম মনে করতে পারি, তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ হতে দেরি হচ্ছে। এ ছাড়া, আমাদের হয়তো যিহোবার জন্য আগের মতো উদ্যোগ না-ও থাকতে পারে। অতীতে আপনি হয়তো যিহোবার জন্য বিভিন্ন ত্যাগস্বীকার করেছিলেন, যাতে আপনি একজন অগ্রগামী হতে পারেন অথবা অন্য কোনো বিশেষ উপায়ে সেবা করতে পারেন। কিন্তু, এখন আপনি কী করছেন? আপনি কি অব্রাহামের মতো, যিনি যিহোবার জন্য যথাসাধ্য করেছিলেন এবং ভবিষ্যৎ আশীর্বাদের দিকে দৃষ্টি রেখেছিলেন? (ইব্রীয় ১১:১০) অব্রাহাম ‘সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করিয়াছিলেন’ এবং ঈশ্বরের বন্ধু বলে গণিত হয়েছিলেন।—রোমীয় ৪:৩.
“যিনি অদৃশ্য, তাঁহাকে” মোশি দেখেছিলেন
১০. মোশি কেমন পরিবেশে বড়ো হয়েছিলেন?
১০ মোশি ছিলেন আরেকজন ব্যক্তি, যিনি ঊর্ধ্বস্থ বিষয়ের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রেখেছিলেন। তিনি এমন এক সময়ে মিশরের রাজকীয় পরিবারের সদস্য হিসেবে বড়ো হয়েছিলেন, যে-সময়ে মিশর পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ ছিল। বাইবেল বলে, তিনি “মিস্রীয়দের সমস্ত বিদ্যায় শিক্ষিত হইলেন।” এই উচ্চশিক্ষা মোশিকে “বাক্যে ও কার্য্যে পরাক্রমী” করে তুলেছিল। (প্রেরিত ৭:২২) পটভূমির কারণে, মিশরের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে ওঠার অনেক সুযোগ মোশির ছিল। কিন্তু মোশির কাছে, অন্য এক ধরনের শিক্ষা আরও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
১১, ১২. মোশির কাছে কোন শিক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল আর আমরা কীভাবে তা জানতে পারি?
১১ মোশি যখন ছোটো ছিলেন, তখন তার মা যোকেবদ তাকে ইব্রীয়দের ঈশ্বর সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিলেন। যিহোবা সম্বন্ধে এই জ্ঞান মোশির কাছে অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই, ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য তিনি সম্পদ ও ক্ষমতা লাভের বিভিন্ন সুযোগকে আনন্দের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। (পড়ুন, ইব্রীয় ১১:২৪-২৭.) ছোটোবেলার প্রশিক্ষণ এবং যিহোবার প্রতি বিশ্বাস মোশিকে ঊর্ধ্বস্থ বিষয়ের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে সাহায্য করেছিল।
১২ যদিও মোশি সেই সময়ে মিশরে প্রচলিত সর্বোত্তম শিক্ষা লাভ করেছিলেন, কিন্তু তিনি সেই জ্ঞানকে একজন ক্ষমতাবান, খ্যাতিমান অথবা ধনী ব্যক্তি হওয়ার জন্য ব্যবহার করেননি। আসলে, বাইবেল জানায়, তিনি “ফরৌণের কন্যার পুত্র বলিয়া আখ্যাত হইতে অস্বীকার করিলেন; তিনি পাপজাত ক্ষণিক সুখভোগ অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের প্রজাবৃন্দের সঙ্গে দুঃখভোগ মনোনীত করিলেন।” এর অনেক বছর পর, মোশি যিহোবার লোকেদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যিহোবা সম্বন্ধে তার জ্ঞানকে ব্যবহার করেছিলেন।
১৩, ১৪. (ক) যিহোবার লোকেদের মুক্ত করার আগে মোশির কী শেখা প্রয়োজন ছিল? (খ) আমাদেরও কী শিখতে হবে?
১৩ মোশি যিহোবাকে এবং তাঁর লোকেদেরকে ভালোবাসতেন, যে-লোকেরা সেই সময়ে মিশরে দাস হিসেবে ছিল। মোশির বয়স যখন ৪০ বছর, তখন তিনি মনে করেছিলেন, তিনি তাদেরকে মুক্ত করার জন্য প্রস্তুত হয়ে গিয়েছেন। (প্রেরিত ৭:২৩-২৫) কিন্তু, যিহোবা জানতেন, তা করার জন্য মোশি তখনও প্রস্তুত ছিলেন না। মোশির তখনও নম্রতা, ধৈর্য, মৃদুতা ও ইন্দ্রিয়দমনের মতো গুণগুলো শেখার প্রয়োজন ছিল। (হিতো. ১৫:৩৩) মোশির সেই প্রশিক্ষণ প্রয়োজন ছিল, যা তাকে সামনে গুরুতর সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত করবে। ৪০ বছর ধরে একজন মেষপালক হিসেবে কাজ করার সময়, মোশি এই চমৎকার গুণাবলি গড়ে তুলতে পেরেছিলেন।
১৪ এই ব্যাবহারিক প্রশিক্ষণ কি মোশিকে সাহায্য করেছিল? হ্যাঁ, কারণ বাইবেল বলে, তিনি “ভূমণ্ডলস্থ মনুষ্যদের মধ্যে সকল অপেক্ষা . . . অতিশয় মৃদুশীল” ব্যক্তি হয়ে উঠেছিলেন। (গণনা. ১২:৩) যেহেতু তিনি নম্র হতে শিখেছিলেন, তাই তিনি বিভিন্ন ধরনের লোকেদের সঙ্গে এবং তাদের বিভিন্নরকম সমস্যার সময়ে ধৈর্য সহকারে আচরণ করতে পেরেছিলেন। (যাত্রা. ১৮:২৬) আমাদেরও সেইসমস্ত গুণ গড়ে তুলতে হবে, যেগুলো আমাদেরকে “মহাক্লেশের” সময়ে রক্ষা পেতে এবং ঈশ্বরের নতুন জগতে প্রবেশ করতে সাহায্য করবে। (প্রকা. ৭:১৪) আমরা কি সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারি, যাদের সম্বন্ধে আমাদের মনে হয়, তারা খুব সহজেই রেগে যায় অথবা খুব সহজেই কষ্ট পায়? প্রেরিত পিতরের এই বাক্য আমাদের সাহায্য করতে পারে: “সকলকে সমাদর কর, ভ্রাতৃসমাজকে প্রেম কর।”—১ পিতর ২:১৭.
ঊর্ধ্বস্থ বিষয়ের প্রতি আমাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখা
১৫, ১৬. (ক) কেন আমাদের সঠিক বিষয়ের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে হবে? (খ) কেন খ্রিস্টানদের উত্তম আচরণ বজায় রাখা প্রয়োজন?
১৫ আমরা ‘বিষম সময়ে’ বাস করছি। (২ তীম. ৩:১) তাই, ঈশ্বরের নিকটবর্তী থাকার জন্য আমাদের সঠিক বিষয়ের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে হবে। (১ থিষল. ৫:৬-৯) যে-তিনটে উপায়ে আমরা তা করতে পারি, এখন আসুন আমরা সেটা লক্ষ করি।
১৬ আমাদের আচরণ: উত্তম আচরণ যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, পিতর তা ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “পরজাতীয়দের মধ্যে আপন আপন আচার ব্যবহার উত্তম করিয়া রাখ।” তারপর তিনি বলেছিলেন, যারা যিহোবাকে জানে না, তারা আমাদের আচরণ লক্ষ করতে পারে আর হয়তো সেগুলো “দেখিলে . . . ঈশ্বরের গৌরব করিবে।” (১ পিতর ২:১২) আমাদের আচরণের মাধ্যমে যিহোবার গৌরব করার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করতে হবে, তা আমরা ঘরে, কর্মস্থলে, স্কুলে, আমোদপ্রমোদের সময় অথবা প্রচারে, যেখানেই থাকি না কেন। অবশ্য, আমরা সবাই অসিদ্ধ আর আমরা সবাই ভুল করি। (রোমীয় ৩:২৩) কিন্তু, আমাদের নিরুৎসাহিত হওয়া উচিত নয়। যিহোবার সাহায্যে আমরা “বিশ্বাসের উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ” করতে পারব।—১ তীম. ৬:১২.
১৭. কীভাবে আমরা যিশুর মনোভাব অনুকরণ করতে পারি? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
১৭ আমাদের মনোভাব: উত্তম আচরণ বজায় রাখার জন্য আমাদের সঠিক মনোভাব থাকতে হবে। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “খ্রীষ্ট যীশুতে যে ভাব” বা মনোভাব “ছিল, তাহা তোমাদিগেতেও হউক।” (ফিলি. ২:৫) যিশুর কোন ধরনের মনোভাব ছিল? তিনি নম্র ছিলেন আর এই গুণ তাঁকে যিহোবার জন্য সর্বোত্তমটা দিতে পরিচালিত করেছিল। তাঁর মনে সবসময় ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার বিষয়টাই ছিল। (মার্ক ১:৩৮; ১৩:১০) যিশুর কাছে, ঈশ্বরের বাক্য ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। (যোহন ৭:১৬; ৮:২৮) তাই, তিনি মনোযোগের সঙ্গে পবিত্র শাস্ত্র নিয়ে অধ্যয়ন করতেন, যাতে সেখান থেকে উদ্ধৃতি করতে পারেন, সেগুলো সমর্থন করতে পারেন ও ব্যাখ্যা করতে পারেন। আমরা যদি খ্রিস্টের মতো চিন্তা করি, তাহলে আমরাও নম্র হব, আমাদের পরিচর্যায় উদ্যোগী হব এবং অধ্যবসায়ের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করব।
১৮. আমরা কোন গুরুত্বপূর্ণ উপায়গুলোর মাধ্যমে যিহোবার কাজে সমর্থন করতে পারি?
১৮ আমাদের সমর্থন: ঈশ্বরের উদ্দেশ্য হল, ‘স্বর্গ মর্ত্ত্য নিবাসীরা’ যিশুর বশীভূত হবে। (ফিলি. ২:৯-১১) যদিও যিশু অতি গুরুত্বপূর্ণ এক পদে আছেন, কিন্তু তিনি নম্রতার সঙ্গে তাঁর পিতার বশীভূত থাকেন। আমাদেরও একই বিষয় করতে হবে। (১ করি. ১৫:২৮) আমরা যখন ‘সমুদয় জাতিকে শিষ্য করি,’ তখন আমরা যিহোবার কাজে অংশ নিই। (মথি ২৮:১৯) এ ছাড়া, আমরা যখন আমাদের প্রতিবেশীদের জন্য ও আমাদের ভাই-বোনদের জন্য ভালো কিছু করি, তখন আমরা “সকলের . . . প্রতি সৎকর্ম্ম করি।”—গালা. ৬:১০.
১৯. আমাদের কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে হবে?
১৯ যিহোবা আমাদের ঊর্ধ্বস্থ বিষয়ের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে বলেছেন বলে আমরা খুবই কৃতজ্ঞ! আমাদের ‘ধৈর্য্যপূর্ব্বক দৌড়াইতে’ হবে এবং সঠিক বিষয়ের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে হবে। (ইব্রীয় ১২:১) আসুন, আমরা “প্রাণের সহিত প্রভুর [ঈশ্বরের]” কাজ করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই কারণ আমরা জানি, আমাদের স্বর্গীয় পিতা আমাদের প্রচুররূপে পুরস্কৃত করবেন।—কল. ৩:২৩, ২৪.