সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

মানুষ কেবল রুটিতে বাঁচে না আমি যেভাবে নাতসি বন্দি শিবিরগুলোতে বেঁচে ছিলাম

মানুষ কেবল রুটিতে বাঁচে না আমি যেভাবে নাতসি বন্দি শিবিরগুলোতে বেঁচে ছিলাম

মানুষ কেবল রুটিতে বাঁচে না আমি যেভাবে নাতসি বন্দি শিবিরগুলোতে বেঁচে ছিলাম

বলেছেন ঝোজেফ হিজিগার

“তুমি কী পড়ছ?” আমি একজন সহবন্দিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। “বাইবেল,” সে উত্তর দিয়েছিল এবং আরও বলেছিল, “আমি এটি তোমাকে দিব, যদি তোমার ভাগের পুরো এক সপ্তাহের রুটি তুমি আমাকে দাও।”

 আ মি ১৯১৪ সালের ১ মার্চ মোজেলে জন্মগ্রহণ করি, যেটা তখন জার্মানির অংশ ছিল। ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর মোজেল ফ্রান্সের অধীনে চলে গিয়েছিল। ১৯৪০ সালে এটা আবারও জার্মানির অধিকারে চলে এসেছিল। এরপর, যখন ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছিল, তখন এটা আবারও ফ্রান্সের অংশ হয়ে গিয়েছিল। প্রতিবারই আমার জাতীয়তা পরিবর্তিত হয়েছিল আর তাই আমি ফ্রেঞ্চ ও জার্মান দুটো ভাষাতেই কথা বলতে শিখেছিলাম।

আমার বাবা-মা ছিল ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিক। প্রতিরাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আমাদের পরিবার হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করত। রবিবার এবং জাতীয় ছুটির দিনগুলোতে আমরা গির্জায় যেতাম। আমি ধর্মকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলাম এবং একটা ক্যাটিকিজম ক্লাসের সদস্য ছিলাম।

আমাদের কাজে পুরোপুরি ব্যস্ত হয়ে পড়া

১৯৩৫ সালে দুজন যিহোবার সাক্ষি আমার বাবা-মার সঙ্গে দেখা করেন। আলোচনাটা ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ধর্মের জড়িয়ে পড়ার বিষয়টা নিয়ে। এরপর, বাইবেলের প্রতি আমার আগ্রহ বৃদ্ধি পায় আর তাই ১৯৩৬ সালে আমি যাজককে জিজ্ঞেস করি যে, আমি একটি বাইবেল পেতে পারি কি না। তিনি বলেছিলেন যে, তা বোঝার জন্য আমাকে ঈশ্বরতত্ত্ববিদ্যা সম্বন্ধে অধ্যয়ন করতে হবে। কিন্তু, তা কেবল একটি বাইবেল পাওয়ার ও এটি পড়ার জন্য আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধি করেছিল।

১৯৩৭ সালে জানুয়ারি মাসে আ্যলবিন রেলেবিট্‌স নামে একজন সহকর্মী, যে একজন সাক্ষি ছিল, সে আমাকে বাইবেল যা শিক্ষা দেয়, সেই বিষয়ে বলতে শুরু করেছিল। “তোমার কাছে নিশ্চয়ই একটি বাইবেল রয়েছে?” আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম। হ্যাঁ, তার কাছে ছিল আর তারপরেই সে জার্মান এলবারফেলডার ভারসনের একটি কপি থেকে ঈশ্বরের নাম যে যিহোবা, তা আমাকে দেখিয়েছিল এবং এই বাইবেলটি সে আমাকে দিয়েছিল। আমি এটির অত্যন্ত আগ্রহী একজন পাঠক হয়ে উঠেছিলাম এবং টিয়ঁভিলের কাছাকাছি একটা শহরে সাক্ষিদের সভাগুলোতে যোগ দিতে শুরু করেছিলাম।

১৯৩৭ সালের আগস্ট মাসে, আমি আ্যলবিনের সঙ্গে প্যারিসে সাক্ষিদের একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গিয়েছিলাম। সেখানে আমি ঘরে ঘরে প্রচার করতে শুরু করেছিলাম। এর অল্প সময় পরেই আমি বাপ্তিস্ম নিয়েছিলাম এবং ১৯৩৯ সালের শুরুর দিকে একজন অগ্রগামী অর্থাৎ পূর্ণসময়ের খ্রিস্টান পরিচারক হয়েছিলাম। আমাকে মেট্‌জ শহরে কার্যভার দেওয়া হয়েছিল। এরপর জুলাই মাসে, আমি প্যারিসে যিহোবার সাক্ষিদের শাখা অফিসে কাজ করার আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম।

যুদ্ধকালীন ক্লেশ

শাখা অফিসে আমি খুব অল্প সময়ের জন্যই সেবা করেছিলাম, কারণ ১৯৩৯ সালের আগস্ট মাসে আমাকে ফরাসি সেনাবাহিনীতে কাজ করার জন্য ডাকা হয়েছিল। যেহেতু আমার বিবেক আমাকে যুদ্ধে অংশ নিতে অনুমোদন করেনি, তাই আমাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। পরের বছর মে মাসে যখন আমি কারাগারে ছিলাম, তখন জার্মানি হঠাৎ করেই ফ্রান্সের ওপর আক্রমণ করেছিল। জুন মাসের মধ্যে ফ্রান্স হেরে গিয়েছিল আর এর ফলে আমি আবারও একজন জার্মান নাগরিক হয়ে গিয়েছিলাম। তাই, ১৯৪০ সালের জুলাই মাসে যখন আমাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তখন আমি আমার বাবা-মার সঙ্গে থাকার জন্য ফিরে গিয়েছিলাম।

যেহেতু আমরা নাতসি শাসনের অধীনে ছিলাম, তাই বাইবেল অধ্যয়নের জন্য আমরা গোপনে মিলিত হতাম। আমরা একজন সাহসী খ্রিস্টান মহিলা মেরিজ আ্যনাজিয়াকের মাধ্যমে প্রহরীদুর্গ পত্রিকা পেতাম, যার সঙ্গে আমি একজন সাক্ষির রুটির দোকানে দেখা করতাম। জার্মানিতে সাক্ষিরা যে-সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতো, ১৯৪১ সাল পর্যন্ত আমি সেগুলো এড়িয়ে চলতে সক্ষম হয়েছিলাম।

এরপর একদিন গেসটাপো (জার্মানির গোয়েন্দা পুলিশ) আমার সঙ্গে দেখা করে। সাক্ষিদের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, তা স্পষ্ট করার পর সেই অফিসার আমাকে জিজ্ঞেস করেন যে, আমি তখনও একজন সাক্ষি হিসেবে থাকতে চাই কি না। যখন আমি উত্তর দিই যে, “হ্যাঁ, থাকতে চাই,” তখন তিনি আমাকে তাকে অনুসরণ করতে বলেন। আবেগকে ধরে রাখতে না পেরে আমার মা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তা দেখে গেসটাপো অফিসার আমাকে সেখানে থাকতে ও তার দেখাশোনা করতে বলেন।

আমি যে-কারখানায় কাজ করেছিলাম, সেখানকার ম্যানেজারকে আমি একবার “হাইল হিটলার” বলে সম্ভাষণ করিনি! এ ছাড়া, আমি নাতসি দলের একজন সদস্য হতেও প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। তাই, পরের দিন গেসটাপো আমাকে গ্রেপ্তার করেছিল। জেরা করার সময় আমি সহসাক্ষিদের নাম প্রকাশ করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। আমাকে যিনি জেরা করছিলেন, তিনি বন্দুকের বাঁট দিয়ে খুব জোরে আমার মাথায় আঘাত করেছিলেন আর এর ফলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। ১৯৪২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, “যিহোবার সাক্ষি ও বাইবেল ছাত্রদের সংগঠনের হয়ে অপপ্রচার চালিয়ে যাওয়ার জন্য” মেট্‌জের জনডারগেরিখ্‌ট (বিশেষ আদালত) আমাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল।

দু-সপ্তাহ পরে, আমি মেট্‌জের কারাগার থেকে যাত্রা শুরু করে শেষপর্যন্ত স্ফাইব্রুকেনের বাধ্যতামূলক শ্রম শিবিরে গিয়ে পৌঁছাই। সেখানে আমি রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণ দলের সঙ্গে কাজ করি। আমরা ভারী ভারী রেললাইনগুলো পরিবর্তন করতাম, সেগুলো জোড়া লাগাতাম এবং রেললাইনে পাথর ছড়িয়ে দিতাম। খাবার হিসেবে আমরা যা পেতাম তা ছিল, সকালে এক কাপ কফি এবং প্রায় ৭৫ গ্রাম রুটি আর দুপুরে ও সন্ধ্যায় এক বাটি সুপ। এরপর আমাকে কাছাকাছি একটা শহরের কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়, যেখানে আমি একটা মুচির দোকানে কাজ করতাম। কয়েক মাস পরে, আমাকে স্ফাইব্রুকেনে ফেরত পাঠানো হয়েছিল আর এবার খেতে কাজ করার জন্য।

বেঁচে থাকা কিন্তু কেবল রুটিতেই নয়

আমার কারাকক্ষের সঙ্গী ছিল নেদারল্যান্ডসের একজন যুবক। তার ভাষায় কিছুটা কথা বলতে শেখার পর, আমি তাকে আমার বিশ্বাস সম্বন্ধে জানাতে পেরেছিলাম। সে এতটা আধ্যাত্মিক উন্নতি করেছিল যে, সে আমাকে নদীতে তাকে বাপ্তিস্ম দিতে বলেছিল। যখন সে জল থেকে উঠে এসেছিল, সে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল, “ঝোজেফ, আমি তোমার ভাই!” যখন আমাকে আবারও রেললাইনের কাজ করতে পাঠানো হয়েছিল, তখন আমরা আলাদা হয়ে গিয়েছিলাম।

এবারে আমি যার সঙ্গে কারাকক্ষে ছিলাম সে ছিল একজন জার্মান। এক সন্ধ্যায় সে একটি ছোটো বই—বাইবেল—পড়তে শুরু করেছিল! তখনই সে আমার ভাগের এক সপ্তাহের রুটির বিনিময়ে আমাকে বাইবেলটি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। “ঠিক আছে!” আমি উত্তর দিয়েছিলাম। যদিও আমার ভাগের এক সপ্তাহের রুটি দিয়ে দেওয়া সত্যিই এক ত্যাগস্বীকার ছিল কিন্তু আমি এর জন্য কখনো আপশোস করিনি। আমি যিশুর এই কথাগুলোর অর্থ বুঝতে শুরু করেছিলাম: “মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচিবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়, তাহাতেই বাঁচিবে।”—মথি ৪:৪.

এখন আমার কাছে একটি বাইবেল রয়েছে কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে এটিকে রাখা নিয়ে। অন্য বন্দিদের মতো, সাক্ষিদের কিন্তু তাদের সঙ্গে বাইবেল রাখার অনুমতি ছিল না। তাই আমি রাতে কম্বলের নীচে লুকিয়ে গোপনে এটি পড়তাম। দিনের বেলায় আমি এটিকে আমার শার্টের মধ্যে ঢুকিয়ে আমার সঙ্গেই নিয়ে যেতাম। আমি বাইবেলটি আমার কারাকক্ষে রাখতাম না কারণ আমি যখন থাকতাম না, তখন রক্ষীরা আমার কক্ষে খোঁজাখুঁজি করত।

একদিন নাম ডাকার সময় আমি খেয়াল করি যে, আমি আমার বাইবেলটি আনতে ভুলে গিয়েছি। সেই দিন সন্ধ্যায় আমি তাড়াতাড়ি করে আমার কক্ষে যাই কিন্তু সেখানে বাইবেলটি ছিল না। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার পর আমি কারারক্ষকের কাছে যাই আর ব্যাখ্যা করি যে, কেউ আমার একটি বই নিয়েছে আর আমি সেটি ফেরত চাই। তিনি ততটা মন দিয়ে শুনছিলেন না, তাই আমি আমার বাইবেলটি উদ্ধার করতে পেরেছিলাম। আমি হৃদয়ের গভীর থেকে যিহোবাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম!

আরেকবার, আমাকে স্নান করতে পাঠানো হয়েছিল। আমার নোংরা কাপড়চোপড় খোলার সময় আমি খুব সতর্কতার সঙ্গে বাইবেলটি মেঝেতে ফেলে দিয়েছিলাম। যখন কারারক্ষক আমাকে লক্ষ করছিলেন না, তখন আমি সেটিকে আমার পা দিয়ে বাথরুমের দিকে ঠেলে দিয়েছিলাম। স্নান করার সময় আমি এটিকে এক পাশে লুকিয়ে রেখেছিলাম। স্নান শেষে আমি সেই একই পদ্ধতিতে বাইবেলটিকে ঠেলে পরিষ্কার কাপড়চোপড়ের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম।

বন্দিত্বে থাকাকালীন উৎসাহজনক ও নিরুৎসাহজনক অভিজ্ঞতাগুলো

১৯৪৩ সালের এক সকালে যখন মাঠে বন্দিরা লাইন করে দাঁড়িয়েছিল, তখন আমি আ্যলবিনকে দেখতে পেয়েছিলাম! তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সে ইচ্ছে করেই আমার দিকে একঝলক তাকিয়ে ভ্রাতৃসমাজের চিহ্ন হিসেবে তার হাতটা বুকের ওপর রেখেছিল। তারপর সে ইশারা করে দেখিয়েছিল যে, সে আমাকে চিঠি লিখবে। পরের দিন আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সে একটা কাগজ ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু কারারক্ষক তা দেখে ফেলেছিলেন আর তাই আমাদের দুজনকেই দু-সপ্তাহের জন্য নিঃসঙ্গ কারাগারে রাখা হয়েছিল। আমরা শুধু বাসি রুটি আর জল খেতাম আর কোনো কম্বল ছাড়াই কাঠের তক্তাতে ঘুমাতাম।

এরপর, আমাকে জেকবুর্কের কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল, যেখানে আমি একটা ধাতব সরঞ্জাম তৈরির দোকানে কাজ করতাম। সেই কাজ অত্যন্ত ক্লান্তিকর ছিল আর যে-খাবার পেতাম, তা ছিল অপর্যাপ্ত। রাতে স্বপ্নে আমি সুস্বাদু খাবারদাবার—কেক ও ফলমূল—দেখতাম আর যখন ঘুম থেকে উঠতাম, তখন খিদেয় আমার পেট ডাকত ও তেষ্টায় গলা শুকিয়ে যেত। আমার ওজন ৪৫ কেজিরও কম হয়ে গিয়েছিল। তবুও, প্রতিদিন আমি আমার ছোটো বাইবেলটি পড়তাম আর বেঁচে থাকার কারণ খুঁজে পেতাম।

অবশেষে মুক্তি!

১৯৪৫ সালের এপ্রিল মাসের এক সকালে, হঠাৎ করে কারারক্ষকরা দরজা খোলা রেখেই কারাগার ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। আমি মুক্ত হয়ে গিয়েছিলাম! কিন্তু, সুস্থ হওয়ার জন্য আমাকে প্রথমে কিছু সময় হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। মে মাসের শেষের দিকে আমি আমার বাবা-মার বাড়িতে গিয়ে পৌঁছেছিলাম। আমি যে বেঁচে আছি সেই সম্বন্ধে তারা আশাই ছেড়ে দিয়েছিল। আমাকে দেখে আমার মা আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলেন। কিন্তু, দুঃখের বিষয় যে, এর অল্প কিছুদিন পরেই আমার বাবা-মা মারা গিয়েছিল।

আমি আবারও টিয়ঁভিল মণ্ডলীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করি। আমার আধ্যাত্মিক পরিবারকে পুনরায় দেখতে পাওয়া কতই না আনন্দজনক ছিল! অনেক পরীক্ষা সত্ত্বেও, তারা যেভাবে বিশ্বস্ত ছিল সেই সম্বন্ধে জানা আনন্দের বিষয় ছিল। আমার প্রিয় বন্ধু আ্যলবিন জার্মানির রেজেন্সবার্গে মারা গিয়েছিল। পরে আমি জানতে পেরেছিলাম যে, আমার কাকাতো ভাই ঝাঁ হিজিগার একজন সাক্ষি হয়েছিল এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে সেনাবাহিনীতে যোগ না দেওয়ায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ঝাঁ কেররা, যার সঙ্গে আমি প্যারিসের শাখা অফিসে কাজ করেছিলাম, তিনি জার্মান শ্রম শিবিরে পাঁচ বছর কষ্ট সহ্য করেছিলেন। *

আমি খুব শীঘ্র মেট্‌জ শহরে প্রচার করতে শুরু করেছিলাম। সেই সময়, আমি প্রায়ই মিনজানি পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতাম। তাদের মেয়ে টিনা ১৯৪৬ সালের ২ নভেম্বর বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। সে পরিচর্যা কাজে উদ্যোগী ছিল আর তাকে আমার বেশ ভালো লেগেছিল। ১৯৪৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর আমরা বিয়ে করেছিলাম। ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, টিনা পূর্ণসময়ের প্রচার কাজ শুরু করেছিল এবং ২০০৩ সালের জুন মাসে ৯৮ বছর বয়সে তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সে সেই কাজ চালিয়ে গিয়েছিল। আমি ভীষণভাবে তার অভাব বোধ করি।

আজকে আমার বয়স ৯০ বছরেরও বেশি আর আমি উপলব্ধি করি যে, ঈশ্বরের বাক্য সবসময়ই পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখি হতে এবং সেগুলো কাটিয়ে উঠতে আমাকে শক্তি দিয়েছে। কখনো কখনো আমাকে খালি পেটে থাকতে হয়েছিল কিন্তু আমি সবসময় আমার মন ও হৃদয়কে ঈশ্বরের বাক্য দিয়ে ভরিয়ে রাখতাম। আর যিহোবা আমাকে শক্তিশালী করেছেন। তাঁর “বচন আমাকে সঞ্জীবিত করিয়াছে।”—গীতসংহিতা ১১৯:৫০. (w০৯ ৩/১)

[পাদটীকা]

^ ঝাঁ কেররার জীবনকাহিনির জন্য ১৯৮৯ সালের ১ অক্টোবর প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ২২-২৬ পৃষ্ঠা দেখুন।

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমার প্রিয় বন্ধু আ্যলবিন রেলেবিট্‌স

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

মেরিজ আ্যনাজিয়াক

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

সেই বাইবেল, যেটির জন্য মূল্য হিসেবে আমার ভাগের এক সপ্তাহের রুটি দিতে হয়েছিল

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৪৬ সালে আমার বাগ্‌দত্তা টিনার সঙ্গে

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঝাঁ কেররা তার স্ত্রী টিটিকার সঙ্গে