সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

একজন বিচারক যিনি যা সঠিক তা করার জন্য দৃঢ়

একজন বিচারক যিনি যা সঠিক তা করার জন্য দৃঢ়

ঈশ্বরের নিকটবর্তী হোন

একজন বিচারক যিনি যা সঠিক তা করার জন্য দৃঢ়

গণনাপুস্তক ২০:২-১৩

মনুষ্য বিচারকরা হয়তো এমন শাস্তি দিতে পারে, যেগুলো অন্যায্য বা অত্যন্ত কঠোর কিন্তু যিহোবা ঈশ্বরের ক্ষেত্রে তা সত্য নয়, যিনি “ন্যায়বিচার ভালবাসেন।” (গীতসংহিতা ৩৭:২৮) যদিও তিনি ধৈর্যশীল কিন্তু তিনি প্রশ্রয়ী নন। তিনি যা সঠিক, তা করার জন্য দৃঢ়। গণনাপুস্তক ২০ অধ্যায়ে যেমন লিপিবদ্ধ আছে, বিবাদ এবং বিদ্রোহ সম্বন্ধীয় একটা ঘটনার প্রতি তিনি যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, তা বিবেচনা করুন।

প্রান্তরে তাদের ভ্রমণের শেষ পর্যায়ে, ইস্রায়েলীয়রা জলসংকটের সম্মুখীন হয়েছিল। * লোকেরা এই বলে মোশি ও হারোণের সঙ্গে বিবাদ করতে শুরু করেছিল যে: “তোমরা আমাদের ও আমাদের পশুদের মৃত্যুর জন্য সদাপ্রভুর সমাজকে কেন এই প্রান্তরে আনিলে?” (৪ পদ) লোকেরা অভিযোগ করেছিল যে, সেই প্রান্তর ছিল এক ‘কুস্থান,’ যেখানে “ডুমুর কি দ্রাক্ষা কি দাড়িম্ব”—যে-ফলগুলো অনেক বছর আগে, ইস্রায়েলের গুপ্তচরেরা প্রতিজ্ঞাত দেশ থেকে নিয়ে এসেছিল সেগুলো—ছিল না এবং “পান করিবার জলও” ছিল না। (৫ পদ; গণনাপুস্তক ১৩:২৩) বস্তুতপক্ষে তারা, মোশি এবং হারোণকে দোষারোপ করছিল, কারণ প্রান্তর ঠিক সেই ফলবতী দেশের মতো ছিল না, যেখানে তাদের আগের বচসাকারী প্রজন্ম প্রবেশ করতে প্রত্যাখ্যান করেছিল!

যিহোবা সেই বচসাকারীদের উপেক্ষা করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি মোশিকে তিনটে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন: তার যষ্টি নিতে, লোকেদের একত্রিত করতে এবং ‘তাহাদের সাক্ষাতে শৈলকে নিজ জল প্রদান করিবার জন্য বলিতে’ নির্দেশ দিয়েছিলেন। (৮ পদ) মোশি প্রথম দুটো নির্দেশনার বাধ্য হয়েছিলেন কিন্তু তিনি তৃতীয়টার ক্ষেত্রে বাধ্য হতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। বিশ্বাস সহকারে শৈলকে বলার পরিবর্তে, তিনি তিক্ততার সঙ্গে লোকেদের এই কথা বলেছিলেন: “হে বিদ্রোহিগণ, শুন; আমরা তোমাদের নিমিত্তে কি এই শৈল হইতে জল বাহির করিব?” (১০ পদ; গীতসংহিতা ১০৬:৩২, ৩৩) এরপর মোশি দু-বার শৈলে আঘাত করেছিলেন আর “তাহাতে প্রচুর জল বাহির হইল।”—১১ পদ।

এভাবে মোশি ও সেইসঙ্গে হারোণ এক গুরুতর পাপ করেছিলেন। “তোমরা আমার আজ্ঞার বিরুদ্ধাচারী হইয়াছিলে,” ঈশ্বর তাদের বলেছিলেন। (গণনাপুস্তক ২০:২৪) এই ঘটনায় ঈশ্বরের আজ্ঞার বিরুদ্ধে যাওয়ার দ্বারা মোশি ও হারোণ ঠিক তা-ই হয়ে উঠেছিল, যা লোকেরা হয়ে উঠেছে বলে তারা অভিযোগ করেছিল আর তা হল বিদ্রোহী। ঈশ্বরের বিচার স্পষ্ট ছিল: মোশি ও হারোণ প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করার জন্য ইস্রায়েলকে নেতৃত্ব দেবে না। এই শাস্তি কি খুবই কঠোর ছিল? না, যেহেতু এর পিছনে বেশ কয়েকটা কারণ রয়েছে।

প্রথমত, ঈশ্বর মোশিকে লোকেদের কাছে কথা বলতে কিংবা তাদেরকে বিদ্রোহী বলে বিচার করতে নির্দেশ দেননি। দ্বিতীয়ত, মোশি এবং হারোণ ঈশ্বরকে গৌরবান্বিত করতে ব্যর্থ হয়েছিল। “তোমরা . . . আমাকে পবিত্র বলিয়া মান্য . . . করিলে না,” ঈশ্বর বলেছিলেন। (১২ পদ) “আমরা . . . জল বাহির করিব,” একথা বলার দ্বারা মোশি এমনভাবে কথা বলেছিলেন যেন ঈশ্বর নন, বরং তিনি এবং হারোণ অলৌকিকভাবে জল জুগিয়েছিলেন। তৃতীয়ত, সেই শাস্তি অতীতের বিচারের সঙ্গে মিল রেখে ছিল। ঈশ্বর সেই বিদ্রোহীদের আগের প্রজন্মকে কনানে প্রবেশ করতে দেননি, তাই মোশি ও হারোণের ক্ষেত্রেও তিনি একই বিষয় করেছিলেন। (গণনাপুস্তক ১৪:২২, ২৩) চতুর্থত, মোশি এবং হারোণ ছিল ইস্রায়েলের নেতা। যাদেরকে আস্থা সহকারে বেশি দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাদের ঈশ্বরের কাছে আরও বেশি নিকাশ দিতে হয়।—লূক ১২:৪৮.

যিহোবা যা সঠিক, তা করার জন্য দৃঢ়। যেহেতু তিনি ন্যায়বিচার ভালোবাসেন, তাই তিনি অন্যায্য শাস্তি দিতে অসমর্থ। স্পষ্টতই, এইরকম একজন বিচারক আমাদের নির্ভরশীলতা এবং সম্মান পাওয়ার যোগ্য। (w০৯ ০৯/০১)

[পাদটীকা]

^ মিশর থেকে যাত্রা করার পর, ইস্রায়েলীয়রা কনানে প্রবেশ করার জন্য তৈরি ছিল, যে-দেশের বিষয়ে ঈশ্বর অব্রাহামের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। কিন্তু, যখন দশ জন গুপ্তচর খারাপ সংবাদ নিয়ে ফিরে এসেছিল, তখন লোকেরা মোশির বিরুদ্ধে বচসা করেছিল। তাই, যিহোবা আদেশ জারি করেছিলেন যে, তাদেরকে ৪০ বছর প্রান্তরে অতিবাহিত করতে হবে, যা সেই বিদ্রোহী প্রজন্মের সকলের মারা যাওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় ছিল।