সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় ১

“যাও . . . শিষ্য করো”

“যাও . . . শিষ্য করো”

প্রেরিত বইয়ের এক সংক্ষিপ্ত বিবরণ, যা বর্তমানে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

১-৬. একটা অভিজ্ঞতা বলুন, যা দেখায় যিহোবার সাক্ষিরা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রচার করে থাকে?

 রিবেকা নামে একজন যিহোবার সাক্ষি মেয়ে ঘানাতে থাকে আর সে যে-স্কুলে পড়ে, সেই স্কুলকে তার প্রচার কাজের এলাকা হিসেবে বেছে নেয়। সে তার স্কুল ব্যাগে সবসময় বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনা রাখে আর টিফিনের সময় সুযোগ খুঁজে অন্যান্য সহপাঠীদের কাছে প্রচার করে। রিবেকা তার ক্লাসে বেশ কয়েক জন মেয়ের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করতে পেরেছে।

আফ্রিকার পূর্ব উপকূল থেকে একটু দূরে মাদাগাস্কার দ্বীপে এক অগ্রগামী দম্পতি থাকেন। বেশিরভাগ সময় তারা দু-জন কড়া রোদের মধ্যে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে দূরে একটা গ্রামে যান। সেখানে তারা অনেক আগ্রহী ব্যক্তিকে বাইবেল অধ্যয়ন করান।

প্যারাগুয়ের সাক্ষিরা ১৫টা আলাদা আলাদা দেশ থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে মিলে একটা হাউসবোট তৈরি করে, যাতে তারা প্যারাগুয়ে এবং প্যারেনা নদীর আশেপাশে থাকা লোকদের কাছে প্রচার করতে পারে। জলে ভাসমান এই হাউসবোট এতটাই বড়ো ছিল যে, এতে ১২ জন লোক ভালোভাবে থাকতে পারত। এই বোটের সাহায্যে সেই উদ্যোগী প্রচারকেরা এমন এলাকাগুলোতে প্রচার করতে পেরেছে, যেখানে নৌকা ছাড়া যাওয়া অসম্ভব।

পৃথিবীর একেবারে উত্তর মেরুতে অবস্থিত আলাস্কায় গ্রীষ্মের সময় যখন পর্যটক মরসুম আসে, তখন সেখানকার সাক্ষিরা সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রচার করে। এই সময় বড়ো বড়ো জাহাজ বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের নিয়ে এখানকার বন্দরে আসে। এই পর্যটকদের মনোযোগ আকর্ষণ করানোর জন্য সেই বন্দর এলাকার সাক্ষিরা একটা স্টল দেয় এবং সেখানে বিভিন্ন ভাষায় বাইবেলভিত্তিক সাহিত্যাদি সাজিয়ে রাখে। সেই এলাকার দূরদূরান্তের গ্রামে যাওয়ার জন্য প্লেন অনেক সাহায্য করেছিল, যেটার সাহায্যে সেখানকার সাক্ষিরা আলিউট, অ্যাথাবাস্কান, সিমশিয়ান ও কলিংকাট সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে সুসমাচার জানাতে পেরেছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ল্যারি নামে একজন ব্যক্তি থাকেন। তার একটা বিশেষ এলাকা ছিল আর সেটা হল নার্সিং হোম। তিনি যে-নার্সিং হোমে থাকেন, সেখানে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যত্ন নেওয়া হয়। তিনি সেখানকার লোকদের কাছে প্রচার করেন। এক দুর্ঘটনার কারণে ল্যারি আর চলাফেরা করতে পারেন না, তাই হুইল চেয়ারই তার সঙ্গী। তারপরও তিনি নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। তিনি অন্যদের রাজ্যের সুসমাচার জানান এবং বিশেষ করে বাইবেলের এই আশা সম্বন্ধে জানান যে, তিনি একদিন আবার ঈশ্বরের রাজ্যে হাঁটাচলা করতে পারবেন।—যিশা. ৩৫:৫, ৬.

একটা সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য মিয়ানমারের একদল সাক্ষিকে মিয়ানমারের উত্তর দিকে যেতে হত আর সেইজন্য তাদের নৌকা করে ম্যান্ডেলে থেকে তিন দিন যাত্রা করতে হয়। সেই যাত্রার সময়ে তারা প্রচার করার কোনো সুযোগই হাতছাড়া করতে চাইনি। তাই, তারা তাদের সঙ্গে বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনা রেখেছিল এবং সহযাত্রীদের তা দিয়েছিল। যাত্রাপথে যখনই তাদের নৌকা কোনো গ্রাম কিংবা শহরে দাঁড়াত, তখনই সেই প্রচারকেরা দ্রুত নৌকা থেকে নেমে সেখানকার লোকদের সঙ্গে দেখা করত এবং তাদের কাছে প্রকাশনা বিতরণ করে আবার নৌকায় ফিরে আসত। এর মধ্যে নতুন যাত্রীরা সেই নৌকায় উঠত আর সেই সাক্ষিদের জন্য প্রচার করার এক “নতুন এলাকা” তৈরি হয়ে যেত।

৭. যিহোবার উপাসকেরা কোন কোন পদ্ধতিতে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিয়ে থাকে আর তাদের প্রত্যেকের লক্ষ্য কী?

এই উদাহরণগুলো দেখায় যে, সারা পৃথিবীতে যিহোবার উদ্যোগী উপাসকেরা “ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিয়ে” চলেছে। (প্রেরিত ২৮:২৩) তারা সাধারণত ঘরে ঘরে, রাস্তায় এবং ফোনের মাধ্যমে লোকদের কাছে সাক্ষ্য দিয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, পার্কে হাঁটার সময়, বাসে করে যাওয়ার সময়, কাজের বিরতির সময় এবং এই ধরনের প্রত্যেকটা সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা অন্যদের ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে জানানোর অপেক্ষায় থাকে। তাদের সাক্ষ্য দেওয়ার পদ্ধতি আলাদা হতে পারে, তবে তাদের লক্ষ্য এক আর তা হল লোকদের যেখানেই খুঁজে পাওয়া যাক না কেন, তাদের কাছে সুসমাচার প্রচার করা।—মথি ১০:১১.

৮, ৯. (ক) কেন রাজ্যের প্রচার কাজের বৃদ্ধি এক আশ্চর্যের বিষয়? (খ) এর ফলে চিন্তা করার মতো কোন প্রশ্ন উঠে আসে আর সেই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

আপনিও কি সেই লক্ষ লক্ষ প্রচারকদের মধ্যে একজন যারা দেশ ও দ্বীপ মিলিয়ে ২৩৫টারও বেশি জায়গায় ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করছে? উত্তর হ্যাঁ হলে, রাজ্যের প্রচার কাজে যে-রোমাঞ্চকর বৃদ্ধি হচ্ছে, তাতে আপনারও অংশ রয়েছে! যিহোবার সাক্ষিরা পৃথিবীব্যাপী প্রচার কাজে যে-সফলতা লাভ করেছে, তা সত্যিই এক আশ্চর্যের বিষয়। পাহাড়ের মতো বাধা, সরকারি নিষেধাজ্ঞা এবং বিভিন্ন তাড়না সত্ত্বেও যিহোবার সাক্ষিরা পৃথিবীর সমস্ত জাতির কাছে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিয়ে চলেছে।

একটু চিন্তা করুন, যদিও আমরা অনেকবার বিভিন্ন বাধার মুখোমুখি হয়েছি এবং শয়তান আমাদের কাজকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে, তবুও কেন আমাদের কাজ বন্ধ হয়নি? উত্তরটা জানার জন্য আমাদের প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের ইতিহাস সম্বন্ধে জানতে হবে কারণ বর্তমানে আমরা যিহোবার সাক্ষিরা সেই কাজ করে চলছি, যে-কাজ তারা শুরু করেছিল।

সারা পৃথিবীতে করা হয়ে থাকে এমন এক কাজ

১০. যিশু কোন কাজে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে বিলিয়ে দিয়েছিলেন? তিনি এই কাজের বিষয় কী জানতেন?

১০ খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর প্রতিষ্ঠাতা যিশু খ্রিস্ট ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার কাজে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। আসলে প্রচার করা ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তিনি এই বিষয়ে একবার বলেছিলেন: “আমাকে অন্যান্য নগরেও ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার ঘোষণা করতে হবে, কারণ আমাকে এইজন্যই পাঠানো হয়েছে।” (লূক ৪:৪৩) যিশু জানতেন তিনি যে-কাজ শুরু করেছিলেন, তা তিনি একা সম্পন্ন করতে পারবেন না। মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে তিনি ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, “সমস্ত জাতির কাছে সুসমাচার প্রচার করা হবে।” (মার্ক ১৩:১০) কিন্তু, কীভাবে এই কাজ করা হবে এবং কারা তা করবে?

“যাও . . . সমস্ত জাতির লোকদের শিষ্য করো।”—মথি ২৮:১৯

১১. যিশু তাঁর শিষ্যদের কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছিলেন আর তা সম্পন্ন করার জন্য তাদের কাছে কোন সাহায্য ছিল?

১১ মারা যাওয়ার পর, যিশু যখন পুনরুত্থিত হয়ে তাঁর শিষ্যদের সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন, তখন তিনি তাদের এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন “যাও, তোমরা সমস্ত জাতির লোকদের শিষ্য করো এবং পিতার ও পুত্রের ও পবিত্র শক্তির নামে তাদের বাপ্তিস্ম দাও আর আমি তোমাদের যা যা আদেশ দিয়েছি, সেই সমস্ত কিছু পালন করতে তাদের শিক্ষা দাও। আর দেখো! এই বিধিব্যবস্থার শেষ সময় পর্যন্ত আমি সবসময় তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।” (মথি ২৮:১৯, ২০) “আমি সবসময় তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি,” এটা বলার মাধ্যমে তিনি তাঁর শিষ্যদের বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, তিনি প্রচার এবং শিষ্য তৈরি করার কাজে সবসময় তাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকবেন। শিষ্যদের সত্যিই তাঁর সাহায্যের প্রয়োজন ছিল কারণ যিশু ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, ‘সমস্ত জাতি তাদের ঘৃণা করবে।’ (মথি ২৪:৯) শিষ্যদের কাছে আরও একটা সাহায্য ছিল। যিশু স্বর্গে যাওয়ার আগে শিষ্যদের বলেছিলেন, ঈশ্বরের পবিত্র শক্তি তাদের দেওয়া হবে, যেটার সাহায্যে তারা সমস্ত জাতির কাছে আর এমনকী “পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত” সাক্ষ্য দিতে পারবে।—প্রেরিত ১:৮.

১২. আমাদের সামনে কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে? আর কেন এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ?

১২ এখন আমাদের সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে। প্রথম শতাব্দীতে প্রেরিতেরা এবং অন্যান্য খ্রিস্টানেরা কি তাদের দায়িত্ব গুরুত্বের সঙ্গে দেখেছিল? প্রচণ্ড তাড়না সত্ত্বেও খ্রিস্টানদের সেই ছোটো দল কি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিতে পেরেছিল? শিষ্য তৈরির কাজে যিহোবা ঈশ্বর, যিশু খ্রিস্ট এবং স্বর্গদূতেরা কি তাদের সাহায্য করেছিলেন? আর পবিত্র শক্তি কি সত্যিই শিষ্য তৈরির কাজে তাদের সাহায্য করে গিয়েছিল? এইরকম অনেক প্রশ্নের উত্তর বাইবেলের প্রেরিত বইয়ে দেওয়া রয়েছে আর এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেন? কারণ যিশু বলেছিলেন, সুসমাচার প্রচারের কাজ “এই বিধিব্যবস্থার শেষ সময় পর্যন্ত” চলবে। এর অর্থ হল প্রচার কাজের এই দায়িত্ব সমস্ত খ্রিস্টানকে সম্পন্ন করতে হবে, যার মধ্যে আমরাও রয়েছি, যারা এই শেষকালে বাস করছি। তাই, প্রেরিত বইয়ে লেখা ইতিহাস জানার জন্য আমরা খুবই আগ্রহী।

প্রেরিত বইয়ের সংক্ষিপ্ত এক বিবরণ

১৩, ১৪. (ক) প্রেরিত বইটি কে লিখেছিলেন আর তিনি সমস্ত তথ্য কোথা থেকে জোগাড় করেছিলেন? (খ) এই বই থেকে আমরা কোন বিষয়গুলো জানতে পারি?

১৩ প্রেরিত বইটি কে লিখেছিলেন? এই বইয়ে কোথাও এর লেখকের নাম দেওয়া হয়নি। কিন্তু, এই বইয়ের শুরুর শব্দগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারি, এই বইটির লেখক ছিলেন লূক, যিনি লূক লিখিত সুসমাচার লিখেছিলেন। (লূক ১:১-৪; প্রেরিত ১:১, ২) তাই, প্রাচীনকাল থেকেই লূককে প্রেরিত বইয়ের লেখক বলে মনে করা হয়, যাকে বাইবেলে ‘প্রিয় চিকিৎসকও’ বলা হয়েছে। (কল. ৪:১৪) তিনি একজন নির্ভরযোগ্য ইতিহাসবিদ ছিলেন, যিনি সমস্ত কিছু সঠিকভাবে গবেষণা করে লিখেছিলেন। এই বইয়ে আনুমানিক ২৮ বছরের ইতিহাস লেখা রয়েছে অর্থাৎ ৩৩ খ্রিস্টাব্দে যিশুর স্বর্গে যাওয়ার ঘটনা থেকে শুরু করে ৬১ খ্রিস্টাব্দে প্রেরিত পৌলের বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার ঘটনা পর্যন্ত। লূক বইয়ে কিছু বাক্যে লূক “তারা” শব্দটা ব্যবহার করতে করতে “আমরা” শব্দটা ব্যবহার করেছেন। এর থেকে আমরা বুঝতে পারি, এই বইয়ে যে-ঘটনাগুলো সম্বন্ধে তিনি লিখেছিলেন, সেই ঘটনাগুলোর সময় তিনি সেখানেই ছিলেন। (প্রেরিত ১৬:৮-১০; ২০:৫; ২৭:১) লূক সতর্কতার সঙ্গে এবং নিখুঁতভাবে গবেষণা করতেন। লূক কোনো ঘটনা লেখার আগে সেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতেন। তাই, তিনি বিবরণ লেখার আগে সম্ভবত পৌল, বার্ণবা, ফিলিপ এবং অন্যদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, যাদের নাম এই বইয়ে লেখা রয়েছে।

১৪ প্রেরিত বইটিতে কোন কোন বিষয় লেখা রয়েছে? লূক তার সুসমাচারের বইয়ে যিশু যে-কাজগুলো করেছিলেন এবং যা-কিছু বলেছিলেন, সেই সমস্ত বিষয় লিখেছিলেন। কিন্তু, প্রেরিত বইয়ে তিনি যিশুর শিষ্যেরা যা-কিছু বলেছিল এবং যা-কিছু করেছিল, সেগুলো লিখেছিলেন। আসলে এই বইয়ে এমন ব্যক্তিদের বিষয়ে লেখা রয়েছে, যাদের জগতের লোকেরা “অশিক্ষিত এবং সাধারণ ব্যক্তি” হিসেবে মনে করত। কিন্তু, তারা অসাধারণ কাজগুলো করেছিল। (প্রেরিত ৪:১৩) সংক্ষেপে বলতে গেলে ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় লেখা এই বই আমাদের জানায়, কীভাবে খ্রিস্টীয় মণ্ডলী শুরু হয়েছিল এবং তা বৃদ্ধি পেয়েছিল, প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানেরা কোন কোন উপায়ে প্রচার করেছিল আর প্রচার কাজের প্রতি তাদের মনোভাব কেমন ছিল। (প্রেরিত ৪:৩১; ৫:৪২) সেইসঙ্গে এই বই আমাদের এটাও জানায় যে, সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে কীভাবে পবিত্র শক্তি তাদের সাহায্য করেছিল। (প্রেরিত ৮:২৯, ৩৯, ৪০; ১৩:১-৩; ১৬:৬; ১৮:২৪, ২৫) এই বই বিশেষভাবে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে জোর দেয়, যে-রাজ্যের রাজা হলেন খ্রিস্ট। এ ছাড়া, এটি দেখায় যে, কীভাবে শিষ্যেরা চরম বিরোধিতা সত্ত্বেও রাজ্যের সুসমাচার দূরদূরান্তে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।—প্রেরিত ৮:১২; ১৯:৮; ২৮:৩০, ৩১.

১৫. প্রেরিত বইটি অধ্যয়ন করলে আমরা কোন উপকার লাভ করতে পারব?

১৫ নিশ্চিতভাবে, বাইবেলের প্রেরিত বইয়ের ঘটনাগুলো নিয়ে যখন আমরা গভীরভাবে অধ্যয়ন করব, তখন আমরা খুশি হব এবং আমাদের বিশ্বাস শক্তিশালী হবে। আমরা যখন প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টান ভাই-বোনদের সম্বন্ধে জানব যে, কীভাবে তারা সাহস ও উদ্যোগ সহকারে প্রচার করেছিল, তখন আমরাও তাদের মতো দৃঢ় বিশ্বাস গড়ে তুলতে চাইব। আর ‘শিষ্য করার’ যে-দায়িত্ব আমাদের দেওয়া হয়েছে, তা আরও ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারব। আপনি যে-বইটা এখন পড়ছেন, এটা এইজন্য তৈরি করা হয়েছে, যাতে আপনি প্রেরিত বইটি খুব ভালোভাবে অধ্যয়ন করতে পারেন।

বাইবেল অধ্যয়ন করার জন্য এক সাহায্য

১৬. এই বইয়ের তিনটে উদ্দেশ্য কী?

১৬ এই বইটার উদ্দেশ্য কী? এই বইটার তিনটে উদ্দেশ্য রয়েছে, (১) যিহোবা যে তাঁর পবিত্র শক্তি দিয়ে প্রচার এবং শিষ্য তৈরির করার কাজে আমাদের সাহায্য করেন, এই বিষয়টার উপর আমাদের আস্থা বৃদ্ধি করা, (২) প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের উদাহরণ অধ্যয়ন করার মাধ্যমে প্রচার কাজে আমাদের উদ্যোগ বৃদ্ধি করা এবং (৩) যিহোবার সংগঠনের প্রতি সম্মান বৃদ্ধি করা আর সেইসঙ্গে প্রচার কাজে যারা নেতৃত্ব নেন এবং যারা মণ্ডলীর দেখাশোনা করেন, তাদের প্রতি সম্মান বৃদ্ধি করা।

১৭, ১৮. এই বইটাতে বিভিন্ন তথ্য কীভাবে তুলে ধরা হয়েছে এবং এই বইয়ের কিছু বৈশিষ্ট্য কী যা বাইবেল অধ্যয়ন করার সময় আপনাকে সাহায্য করবে?

১৭ এই বইটা কীভাবে তৈরি করা হয়েছে? আপনি দেখতে পাবেন এই বইটাতে আটটা বিভাগ রয়েছে আর প্রত্যেক বিভাগে প্রেরিত বইয়ের কিছু অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে প্রতিটা শাস্ত্রপদ ধরে ধরে আলোচনা করার পরিবর্তে, প্রেরিত বইয়ের ঘটনা থেকে আমরা কী শিখতে পারি আর কীভাবে তা আমরা আমাদের জীবনে কাজে লাগাতে পারি, সেই বিষয়ে তুলে ধরা হয়েছে। প্রত্যেক অধ্যায়ে শিরোনামের পর মূল বিষয়টা উল্লেখ করা হয়েছে আর এরপর প্রেরিত বইয়ের কোন শাস্ত্রপদগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে, সেটা বলা হয়েছে।

১৮ এই বইটাতে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেটা আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে বাইবেল অধ্যয়ন করতে সাহায্য করবে। এতে খুব সুন্দর সুন্দর ছবি রয়েছে। আপনি যখন প্রেরিত বইয়ের ঘটনাগুলো নিয়ে চিন্তা করবেন, তখন এই ছবিগুলো সেই সময়ে ঘটনাগুলো কীভাবে ঘটেছিল, তা কল্পনা করতে আপনাকে সাহায্য করবে। অনেক অধ্যায়ে বাক্স দেওয়া রয়েছে, যেখানে বিষয়বস্তুর সঙ্গে জড়িত অনেক তথ্য দেওয়া রয়েছে। কিছু বাক্সে বাইবেলের বিভিন্ন ব্যক্তিদের পরিচয় দেওয়া হয়েছে, যাদের বিশ্বাস আমরা অনুকরণ করতে পারি। আবার কিছু বাক্সে প্রেরিত বইয়ে উল্লেখিত স্থান, ঘটনা, রীতিনীতি এবং অন্যান্য ব্যক্তির সম্বন্ধেও উল্লেখ করা রয়েছে।

খুবই অল্প সময় বাকি রয়েছে, আপনার এলাকা ভালোভাবে শেষ করুন

১৯. কোন বিষয়ে মাঝে মাঝে আমাদের নিজেকে পরীক্ষা করে দেখা উচিত?

১৯ এই বইটা আপনাকে সৎভাবে নিজেকে পরীক্ষা করে দেখতে সাহায্য করবে। হতে পারে আপনি বহু বছর ধরে প্রচার করছেন, তবে মাঝে মাঝে নিজেকে পরীক্ষা করে দেখা ভালো। তাই নিজেকে পরীক্ষা করে দেখুন, জীবনে আপনি কোন বিষয়টাকে প্রথমে রাখছেন এবং খ্রিস্টীয় পরিচর্যাকে কোন দৃষ্টিতে দেখছেন। (২ করি. ১৩:৫) নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমি কি সবসময় এইরকম অনুভব করি যে, প্রচারের জন্য খুবই অল্প সময় বাকি রয়েছে? (১ করি. ৭:২৯-৩১) আমি কি পুরোপুরি আস্থা ও উদ্যোগের সঙ্গে সুসমাচার প্রচার করি? (১ থিষল. ১:৫, ৬) আমি কি প্রচার এবং শিষ্য তৈরির কাজে আমার যথাসাধ্য করছি?’—কল. ৩:২৩.

২০, ২১. আমাদের যে-কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা কেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং কোন বিষয়ে আমাদের দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত?

২০ আসুন, আমরা যেন সবসময় মনে রাখি, আমাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আর তা হল প্রচার করা এবং শিষ্য তৈরি করা। যত দিন যাচ্ছে এই কাজের গুরুত্ব ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে কারণ এই বিধিব্যবস্থার শেষ দ্রুত এগিয়ে আসছে। এর আগে কখনো এত লোকের জীবন ঝুঁকির মুখে ছিল না। আমরা জানি না, কত জন সঠিক মনোভাবের ব্যক্তি আমাদের সুসমাচারের বার্তার প্রতি সাড়া দেবে। (প্রেরিত ১৩:৪৮) তাই, দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই আমাদের দায়িত্ব হল, সেই ব্যক্তিদের সাহায্য করা। —১ তীম. ৪:১৬.

২১ সেইজন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ আমরা যেন প্রথম শতাব্দীর রাজ্যের উদ্যোগী প্রচারকদের উদাহরণ অনুকরণ করে প্রচার করে চলি। আমরা আশা করি, আপনি এই বইটা ভালোভাবে অধ্যয়ন করবেন আর তা করার ফলে, আপনি আরও বেশি করে উদ্যোগ ও সাহসের সঙ্গে প্রচার করতে অনুপ্রাণিত হবেন। আমরা এও আশা করি, “ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য” দেওয়ার যে-ইচ্ছা আপনার রয়েছে, তা আরও দৃঢ় হবে। —প্রেরিত ২৮:২৩.