সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

খণ্ড ৫

সৃষ্টিকর্তার অতুলনীয় গুণাবলি উপলব্ধি করা

সৃষ্টিকর্তার অতুলনীয় গুণাবলি উপলব্ধি করা

পবিত্র শাস্ত্র ঈশ্বরের অনেক অপূর্ব গুণ সম্বন্ধে প্রকাশ করে, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা তাঁকে জানতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, শাস্ত্র আমাদেরকে ঈশ্বরের চারটে মুখ্য গুণ—শক্তি, ন্যায়বিচার, প্রজ্ঞা এবং প্রেম—সম্বন্ধে বলে। আসুন আমরা সেগুলোর প্রত্যেকটা বিবেচনা করি।

শক্তিতে অসীম

ঈশ্বর হলেন শক্তিতে মহান

যিহোবা অব্রাহামকে বলেছিলেন: “আমিই সর্বশক্তিমান ঈশ্বর।” (আদিপুস্তক ১৭:১) তাঁর শক্তি অতুলনীয়, অসীম এবং অফুরন্ত। তাঁর শক্তির মাধ্যমে ঈশ্বর পুরো নিখিলবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন।

ঈশ্বর কখনো তাঁর শক্তির অপব্যবহার করেন না। তিনি সবসময়ই তাঁর শক্তিকে এক নিয়ন্ত্রিত ও উদ্দেশ্যপূর্ণ উপায়ে ব্যবহার করেন। তিনি তাঁর শক্তিকে ব্যবহার করার সময় তাঁর ন্যায়বিচার, প্রজ্ঞা ও প্রেমের সঙ্গে নিখুঁত ভারসাম্য বজায় রাখেন।

যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের জন্য উদারভাবে তাঁর শক্তি ব্যবহার করেন। “যাদের অন্তর সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিতে পূর্ণ থাকে তাদের রক্ষা করবার জন্য তাঁর চোখ পৃথিবীর সব জায়গায় থাকে।” (২ বংশাবলি ১৬:৯) আপনি কি এইরকম একজন শক্তিমান অথচ যত্নশীল ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে চান না?

একজন ন্যায়বিচারক ঈশ্বর

“সদাপ্রভু ন্যায়বিচার ভালবাসেন।” (গীতসংহিতা ৩৭:২৮) তিনি সবসময় নিজের নিখুঁত মান অনুযায়ী যা সঠিক এবং ন্যায্য, তা করেন।

ঈশ্বর পক্ষপাতিত্ব করেন না

ঈশ্বর অবিচার ঘৃণা করেন। তিনি “কারও পক্ষ নেন না এবং ঘুষও খান না।” (দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১৭) তিনি সেই ব্যক্তিদের প্রতিরোধ করেন, যারা অন্যদের অত্যাচার করে এবং তিনি অসহায় ব্যক্তিদের পক্ষে কাজ করেন, যাদের অন্তর্ভুক্ত ‘কোন বিধবা বা কোন অনাথ ছেলে বা মেয়ে।’ (যাত্রাপুস্তক ২২:২২) ঈশ্বর সমস্ত মানুষকে ভেদাভেদহীনভাবে দেখেন। “ঈশ্বরের চোখে সবাই সমান। প্রত্যেক জাতির মধ্য থেকে যারা তাঁকে ভক্তি করে এবং তাঁর চোখে যা ঠিক তা-ই করে তিনি তাদের গ্রহণ করেন।”—প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫.

যিহোবার ন্যায়বিচার নিখুঁতভাবে ভারসাম্যপূর্ণ। তিনি কখনো অতিরিক্ত প্রশ্রয়ী বা অতিরিক্ত কঠোর নন। তিনি অননুতপ্ত অন্যায়কারীকে শাস্তি দেন কিন্তু অনুতপ্ত ব্যক্তিদের প্রতি সদয় মমতা বা করুণা দেখান। “সদাপ্রভু মমতায় পূর্ণ ও দয়াময়; তিনি সহজে অসন্তুষ্ট হন না, তাঁর অটল ভালবাসার সীমা নেই। তিনি দোষীর বিরুদ্ধে দিনের পর দিন অভিযোগ করেন না, চিরকাল ক্রোধ পুষে রাখেন না। আমাদের পাপের শাস্তি যতটা আমাদের পাওনা ততটা তিনি আমাদের দেন না; আমাদের অন্যায় অনুসারেও শাস্তি দেন না।” (গীতসংহিতা ১০৩:৮-১০) এ ছাড়া, ঈশ্বর তাঁর অনুগত দাসদের বিশ্বস্ত কাজের জন্য তাদেরকে স্মরণে রাখেন ও পুরস্কার দেন। আপনি কি এইরকম একজন ন্যায়বিচারক ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করবেন না?

একজন প্রজ্ঞাবান ঈশ্বর

পবিত্র শাস্ত্রে ঈশ্বরের প্রজ্ঞা রয়েছে

যিহোবা হলেন সমস্ত প্রজ্ঞার উৎস। “ঈশ্বরের ধন অসীম। তাঁর জ্ঞান ও বুদ্ধি [“প্রজ্ঞা ও জ্ঞান,” পবিত্র বাইবেল, O.V.] কত গভীর!” (রোমীয় ১১:৩৩) তাঁর প্রজ্ঞা অতুলনীয় এবং অনন্ত।

আমাদের চারপাশের সৃষ্ট বিষয়গুলোতে ঈশ্বরের প্রজ্ঞা স্পষ্টভাবে দেখা যায়। “হে সদাপ্রভু, তুমি অনেক কিছু সৃষ্টি করেছ,” গীতরচক বিস্ময়ে বলেছিলেন। “তোমার জ্ঞান [“প্রজ্ঞা,” পবিত্র বাইবেল, O.V.] দিয়ে সেই সব তৈরী করেছ।”—গীতসংহিতা ১০৪:২৪.

ঈশ্বরের প্রজ্ঞা তাঁর পবিত্র শাস্ত্রের মধ্যেও প্রকাশিত হয়েছে। প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদ লিখেছিলেন: “সদাপ্রভুর বাক্য নির্ভরযোগ্য, তা সরলমনা লোককে জ্ঞান দেয়।” (গীতসংহিতা ১৯:৭) এই বিষয়টা একটু কল্পনা করুন—আপনি ঈশ্বরের অগাধ প্রজ্ঞা থেকে উপকার লাভ করতে পারেন! আপনি কি সেই সুযোগের সদ্‌ব্যবহার করবেন?

“ঈশ্বর নিজেই ভালবাসা”

যিহোবার প্রধান গুণ হল প্রেম। শাস্ত্র আমাদের বলে, “ঈশ্বর নিজেই ভালবাসা।” (১ যোহন ৪:৮) তাঁর সমস্ত কাজে প্রেম তাঁকে অনুপ্রেরণা ও পরিচালনা দেয়।

ঈশ্বর অসংখ্য উপায়ে আমাদের প্রতি তাঁর প্রেম দেখিয়ে থাকেন। তিনি আমাদেরকে উত্তম উত্তম দ্রব্য দান করেন। “তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি দিয়ে এবং সময়মত ফসল দান করে তাঁর দয়া আপনাদের দেখিয়েছেন। তিনি প্রচুর খাবার দান করে আপনাদের মনকে আনন্দে পূর্ণ করেছেন।” (প্রেরিত ১৪:১৭) সত্যিই, “জীবনের প্রত্যেকটি সুন্দর ও নিখুঁত দান স্বর্গ থেকে নেমে আসে, আর তা আসে ঈশ্বরের কাছ থেকে, যিনি সমস্ত আলোর পিতা।” (যাকোব ১:১৭) অমূল্য দান শাস্ত্রের মাধ্যমে ঈশ্বর তাঁর নিজের সম্বন্ধে সত্য প্রকাশ করেন এবং আমাদেরকে তাঁর প্রেমপূর্ণ আইন ও নীতিগুলো সম্বন্ধে শিক্ষা দেন। ‘তোমার বাক্যই সত্য,’ যিশু প্রার্থনায় বলেছিলেন।—যোহন ১৭:১৭.

সৃষ্টির মধ্যে ঈশ্বরের প্রজ্ঞা দেখে আমরা বিস্মিত হই

এ ছাড়া, ঈশ্বর আমাদের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যেও সাহায্য করেন। “তোমার সব ভার তুমি সদাপ্রভুর উপর ফেলে দাও, তিনিই তোমার ব্যবস্থা করবেন; তাঁর ভক্তদের তিনি কখনও টলতে দেবেন না।” (গীতসংহিতা ৫৫:২২) তিনি আমাদের পাপ সকল ক্ষমা করেন। “হে প্রভু, তুমি মংগলময় ও ক্ষমাশীল; যারা তোমাকে ডাকে তাদের প্রতি তুমি ভালবাসায় ভরপুর।” (গীতসংহিতা ৮৬:৫) আর তিনি এমনকী আমাদেরকে অনন্তজীবন দিতে চান। “তিনি তাদের চোখের জল মুছে দেবেন। মৃত্যু আর হবে না; দুঃখ, কান্না ও ব্যথা আর থাকবে না।” (প্রকাশিত বাক্য ২১:৪) ঈশ্বরের প্রেমের প্রতি আপনি কীভাবে সাড়া দেবেন? প্রতিদানে আপনিও কি তাঁকে ভালোবাসবেন?

ঈশ্বরের নিকটবর্তী হোন

প্রার্থনা ও ঈশ্বরের গুণাবলি নিয়ে ধ্যান করা আপনাকে তাঁর আরও নিকটবর্তী করবে

ঈশ্বর চান যেন আপনি তাঁকে ভালোভাবে জানেন। তাঁর বাক্য আপনাকে এই জোরালো পরামর্শ দেয়: “ঈশ্বরের কাছে এগিয়ে যাও, তাহলে তিনিও তোমাদের কাছে এগিয়ে আসবেন।” (যাকোব ৪:৮) ঈশ্বর বিশ্বস্ত ভাববাদী অব্রাহামকে “আমার বন্ধু” বলে ডেকেছিলেন। (যিশাইয় ৪১:৮) যিহোবা চান যেন আপনিও তাঁর বন্ধু হন।

আপনি ঈশ্বর সম্বন্ধে যত বেশি জানবেন, ততই আপনি তাঁর আরও নিকটবর্তী বোধ করবেন এবং ধন্য বা সুখী হবেন। “ধন্য সেই লোক . . . সদাপ্রভুর আইন-কানুনেই” যার “আনন্দ, আর সেটিই তার দিনরাতের ধ্যান।” (গীতসংহিতা ১:১, ২) তাই, পবিত্র শাস্ত্র অধ্যয়ন করে চলুন। ঈশ্বরের গুণাবলি ও কাজগুলো নিয়ে ধ্যান করুন। আপনি যা-কিছু শেখেন, সেগুলো কাজে লাগানোর মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রতি আপনার ভালোবাসা দেখান। “ঈশ্বরের আদেশ পালন করাই হল ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসা। তাঁর আদেশ ভারী বোঝার মত নয়।” (১ যোহন ৫:৩) তাই, গীতরচকের মতো এই প্রার্থনা করুন: “হে সদাপ্রভু, তোমার পথ আমাকে জানাও, আমাকে তোমার পথে চলতে শিখাও। তোমার সত্যে আমাকে পরিচালনা কর।” (গীতসংহিতা ২৫:৪, ৫) এতে আপনি দেখতে পাবেন যে, ঈশ্বর “আমাদের কারও কাছ থেকে দূরে নন।”—প্রেরিত ১৭:২৭.