রাজাবলির প্রথম খণ্ড ৯:১-২৮

৯  শলোমন যখন যিহোবার গৃহ, নিজের রাজপ্রাসাদ এবং তিনি যা-কিছু নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন, সেই সমস্ত কিছু নির্মাণ করার কাজ শেষ করলেন, তার ঠিক পরেই ২  যিহোবা তাকে দ্বিতীয় বার দেখা দিলেন, ঠিক যেভাবে তিনি গিবিয়োনে তাকে দেখা দিয়েছিলেন। ৩  যিহোবা তাকে বললেন: “তুমি আমার কাছে যে-প্রার্থনা এবং অনুগ্রহ চেয়ে বিনতি করেছ, তা আমি শুনেছি। আমি তোমার নির্মিত এই গৃহের সঙ্গে আমার নাম চিরকালের জন্য জুড়ে দিয়েছি আর এভাবে এটাকে পবিত্র করেছি। আমার দৃষ্টি সবসময় এটার উপর থাকবে আর আমি সবসময় এই গৃহের যত্ন নেব। ৪  আর তুমি যদি সেই সমস্ত কিছু কর, যেগুলোর বিষয়ে আমি তোমাকে আজ্ঞা দিয়েছি আর আমার আইনকানুন এবং বিচার সংক্রান্ত রায় পালন কর আর এভাবে তোমার বাবা দায়ূদের মতো আমার সামনে সরলতায় এবং হৃদয়ের বিশ্বস্ততায় চল, ৫  তা হলে আমি ইজরায়েলের উপর তোমার সিংহাসন চিরকালের জন্য প্রতিষ্ঠা করব, ঠিক যেমনটা আমি তোমার বাবা দায়ূদের কাছে প্রতিজ্ঞা করে বলেছিলাম, ‘ইজরায়েলের সিংহাসনে বসার জন্য তোমার বংশে কখনো লোকের অভাব হবে না।’ ৬  কিন্তু, তোমরা এবং তোমাদের বংশধরেরা যদি আমার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আমাকে অনুসরণ করা বন্ধ করে দাও এবং আমি তোমাদের যে-সমস্ত আজ্ঞা ও নিয়ম দিয়েছি, সেগুলো পালন করা ছেড়ে দাও এবং তোমরা গিয়ে অন্য দেবতাদের সেবা কর এবং তাদের সামনে মাথা নত কর, ৭  তা হলে আমি ইজরায়েলকে যে-দেশ দিয়েছি, সেখান থেকে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেব আর এই যে-গৃহকে আমি আমার নামের গৌরব করার জন্য পবিত্র করেছি, সেটাকে আমার চোখের সামনে থেকে দূর করে দেব। তখন ইজরায়েল সমস্ত দেশের কাছে হাসির পাত্রে* পরিণত হবে আর সেটার বিপর্যয় দেখে সবাই ঠাট্টাতামাশা করবে ৮  আর এই গৃহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে। এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রত্যেকে অবাক হয়ে এটার দিকে তাকিয়ে থাকবে আর ঠাট্টা করে শিশ দিয়ে বলবে, ‘কেন যিহোবা এই দেশ এবং এই গৃহের এমন অবস্থা করেছেন?’ ৯  তখন তারা বলবে, ‘এর কারণ হল তারা তাদের ঈশ্বর যিহোবাকে ছেড়ে দিয়েছে, যিনি তাদের পূর্বপুরুষদের মিশর থেকে বের করে এনেছিলেন আর তারা অন্য দেবতাদের গ্রহণ করেছে এবং তাদের সামনে মাথা নত করে তাদের সেবা করেছে। এইজন্যই যিহোবা তাদের উপর এই বিপর্যয় নিয়ে এসেছেন।’” ১০  যিহোবার গৃহ এবং রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করতে শলোমনের ২০ বছর লাগল। তারপর, ১১  রাজা শলোমন সোরের রাজা হীরমকে গালীলের ২০টা নগর উপহার হিসেবে দিলেন কারণ হীরম তাকে দেবদারু ও জুনিপার* কাঠ দিয়েছিলেন আর শলোমন যতটা সোনা চেয়েছিলেন, তাকে ততটা সোনা দিয়েছিলেন। ১২  হীরম সোর থেকে সেই নগরগুলো দেখতে গেলেন, যেগুলো শলোমন তাকে দিয়েছিলেন। কিন্তু, নগরগুলো তার পছন্দ হল না।* ১৩  তিনি শলোমনকে বললেন: “ভাই, আমাকে এ কেমন নগর দিয়েছ?” তাই, সেই নগরগুলোর নাম কাবূল দেশ* রাখা হল আর আজও সেগুলো এই নামেই পরিচিত। ১৪  হীরম রাজা শলোমনকে ১২০ তালন্ত* সোনা পাঠিয়েছিলেন। ১৫  এটা সেই লোকদের কাজের বিবরণ, যাদের দিয়ে রাজা শলোমন জোর করে দাসের কাজ করাতেন। তারা যিহোবার গৃহ, শলোমনের রাজপ্রাসাদ, টিলা,* জেরুসালেম নগরের প্রাচীর আর সেইসঙ্গে হাৎসোর, মগিদ্দো ও গেষর নগর নির্মাণ করেছিল। ১৬  (মিশরের রাজা ফরৌণ এসে গেষর দখল করে নিয়েছিলেন আর সেটা আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি সেই নগরে বসবাসরত কনানীয়দেরও মেরে ফেলেছিলেন। তিনি সেই নগরটা তার মেয়ে অর্থাৎ শলোমনের স্ত্রীকে বিদায় দেওয়ার সময় উপহার* হিসেবে দিয়েছিলেন।) ১৭  শলোমন গেষর, নীচের বৈৎ-হোরোণ এবং ১৮  বালৎ ও সেইসঙ্গে তামর নগর নির্মাণ* করলেন, যেটা ইজরায়েল দেশের প্রান্তরে অবস্থিত। ১৯  এ ছাড়া, শলোমন তার সমস্ত ভাণ্ডারের নগর, রথের নগর এবং অশ্বারোহীদের জন্য নগর নির্মাণ করলেন। আর জেরুসালেম ও লেবাননে এবং তার পুরো রাজ্যে তিনি যা-কিছু নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন, সেই সমস্ত কিছু নির্মাণ করলেন। ২০  ইমোরীয়, হিত্তীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের অবশিষ্ট লোকেরা, যারা ইজরায়েলের প্রজা ছিল না ২১  এবং যাদের ইজরায়েলীয়েরা বিনষ্ট করতে পারেনি, তাদের বংশধরেরা ইজরায়েল দেশে বাস করত। শলোমন এই লোকদের দিয়ে জোর করে দাসের কাজ করালেন আর আজ পর্যন্ত তারা এই কাজই করছে। ২২  কিন্তু, শলোমন কোনো ইজরায়েলীয়কে দাস করলেন না। তারা তো তার যোদ্ধা, আধিকারিক,* অধ্যক্ষ, সহ-সেনাপতি এবং রথচালক ও অশ্বারোহীদের প্রধান ছিল। ২৩  ৫৫০ জন আধিকারিক* শলোমনের কাজের দেখাশোনা করত। কর্মচারীদের উপর তাদের কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছিল। ২৪  কিন্তু, ফরৌণের মেয়ে দায়ূদ-নগর ত্যাগ করে সেই প্রাসাদে গিয়ে থাকতে লাগলেন, যেটা শলোমন তার জন্য নির্মাণ করেছিলেন। তারপর, শলোমন টিলা* নির্মাণ করলেন। ২৫  শলোমন যিহোবার জন্য যে-বেদি নির্মাণ করেছিলেন, সেটার উপর বছরে তিন বার হোমবলি ও মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করতেন। আর সেইসঙ্গে যিহোবার সামনে যে-বেদি ছিল, সেটার উপরও তিনি বলি উৎসর্গ করতেন, যাতে সেগুলো থেকে ধোঁয়া বের হয়। এভাবে তিনি গৃহ নির্মাণের কাজ শেষ করলেন। ২৬  রাজা শলোমন ইৎসিয়োন-গেবরে অনেকগুলো জাহাজও নির্মাণ করলেন। ইৎসিয়োন-গেবর ইদোম দেশের লোহিত সাগরের* তীরে এলতের কাছে অবস্থিত ছিল। ২৭  হীরম জাহাজগুলোর সঙ্গে তার অভিজ্ঞ নাবিকদের পাঠিয়েছিলেন, যাতে তারা শলোমনের সেবকদের সঙ্গে মিলে কাজ করে। ২৮  তারা ওফীরে গেল আর সেখান থেকে ৪২০ তালন্ত সোনা রাজা শলোমনের কাছে নিয়ে এল।

পাদটীকাগুলো

আক্ষ., “কাছে প্রবাদে।”
পাইন গাছের মতো এক ধরনের গাছ, যেটা থেকে কড়া সুগন্ধ বের হয় আর যেটার কাঠ খুবই টেকসই।
আক্ষ., “সেগুলো তার চোখে সঠিক ছিল না।”
বা সম্ভবত, “কোনো কাজের নয়, এমন দেশ।”
এক তালন্ত সমান ৩৪.২ কিলোগ্রাম। পরিশিষ্টের খ১৪ দেখুন।
বা “মিল্লো।” এই ইব্রীয় শব্দের অর্থ “ভরতি।”
বা “বিয়ের উপহার; পণ।”
বা “মজবুত।”
বা “কর্মকর্তা।”
বা “কর্মকর্তা।”
বা “মিল্লো।” এই ইব্রীয় শব্দের অর্থ “ভরতি।”
বা “সূফসাগরের।”